-->
শিরোনাম

ট্রেনের ঈদের টিকেট বিক্রির দ্বিতীয় দিনেও ভোগান্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক
ট্রেনের ঈদের টিকেট বিক্রির দ্বিতীয় দিনেও ভোগান্তি

রেলে ঈদের অগ্রিম টিকেট বিক্রির দ্বিতীয় দিনে সার্ভার জটিলতায় ব্যাপক ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে।

 

শনিবার সকাল ৮টা থেকে টিকেট বিক্রি শুরু হলেও ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও টিকেট বিক্রির সাইট সহজডটকমে ঢুকতে পারেননি কেউ কেউ। আবার লগইন করতে পারলেও টিকেট সিলেক্ট করার পর পেমেন্ট অপশনে যেতে পারেননি অনেকে। সকাল ৮টার পরপর বেশিরভাগ টিকেটই বুকড দেখতে পাওয়ার কথা বলছেন যাত্রীরা। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন তারা।

 

রেলওয়ের টিকেট বিক্রির ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা সহজ-সিনেসিস-ভিনসেন জেভি বলছে, টিকেট বিক্রির প্রক্রিয়ায় তেমন কোনো সমস্যা হয়নি। তবে সকাল থেকে বেশ কিছু স্বয়ংক্রিয় আইপি থেকে সার্ভারে ঢোকার চেষ্টা করায় সাধারণ টিিেকটপ্রত্যাশীদের কিছু সমস্যা হয়েছে। ১৭ এপ্রিলের টিকেট বিক্রির মধ্য দিয়ে শুক্রবার ট্রেনের অগ্রিম টিকেট বিক্রির কার্যক্রম শুরু হয়।

 

শনিবার দেয়া হচ্ছে ১৮ এপ্রিলের টিকেট। টিকিট কালোবাজারি আর স্টেশনে গিয়ে টিকিট কাটার ভোগান্তির কথা চিন্তা করে এবার সব টিকিট অনলাইনে বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। যদিও অনলাইনেও ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে টিকিট না পাওয়ার একই ভোগান্তির কথা উঠছে।

 

কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিটপ্রত্যাশী মনিরুল ইসলাম নামে এক ব্যাংক কর্মকর্তা বলেন, শনিবার সকাল ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত মোবাইল এবং ল্যাপটপে চেষ্টা করেও তিনি টিকিট কেনার প্রক্রিয়া শেষ করতে পারেননি।“আমি লগইন করে টিকিট সিলেক্ট অপশন পর্যন্ত যেতে পারছিলাম। ওখানে ‘সিলেক্ট ইউর টিকিট’ অপশনে গিয়ে যেটাই সিলেক্ট করি, ব্রিং করে। পারচেজ অপশনে যাওয়া যায় না। ১০টা পর্যন্ত চেষ্টা করেও টিকিট কিনতে পারিনি।

 

সাইট হ্যাং করেছে কিনা কে জানে। আমিই যদি না পারি তাহলে আর কে টিকিট কিনতে পারবে বুঝতে পারছি না।” কক্সবাজারে একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায় কর্মরত কাজী শামীম হাসান বলেছেন, ঢাকা থেকে টাঙ্গাইল যাওয়ার জন্য সিল্কসিটি ট্রেনে টিকিট কিনতে শনিবার সকাল ৭টা ৫০ মিনিট থেকে ওয়েবসাইটে লগইন করছিলেন। কিন্তু বারবার চেষ্টা করেও টিকিট পাচ্ছিলেন না। “সিট সিলেক্ট হতে বহু সময় লাগছিল।

 

আবার সিট সিলেক্ট করার পরও ‘কনটিনিউ পারচেজ’ অপশনটা সবুজ হচ্ছিল না। বহুক্ষণ পরে সবুজ হচ্ছিল। পরে ‘কনটিনিউ পারচেজ’-এ ক্লিক করলে ‘পেমেন্ট’ অপশনে না গিয়ে আরেকটা পেজ ওপেন হচ্ছিল। সেখানে ‘ওয়েটিং’-এ রাখা হয়েছে বলা হচ্ছিল। কিছুক্ষণ পরপর সেখান থেকে ‘টাইম আউট’ অপশন আসছিল। এভাবে টানা দেড় ঘণ্টায় বারবার ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে বহুবার চেষ্টার পর তিনটা টিকিট পেয়েছি।”

 

কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকেটপ্রত্যাশী মোহাম্মদ রাজ্জাক বলেন, টিকিট কেনার জন্য তার কম্পিউটার, মোবাইল এবং তার স্ত্রীর মোবাইল নিয়ে বসেছিলেন। কিন্তু টিকেট কিনতে পারেননি। “তিনটা ডিভাইস নিয়ে যুদ্ধে নামলাম।

 

৮টায় লগইন করেই হতাশ, কুড়িগ্রামের জন্য স্নিগ্ধার টিকিট দেখায় মাত্র ১০টা। ‘বুকিং’ অপশনে দুইটা বুকিং করতে পারলেও ‘পারচেজ’ অপশন থেকে আর লোড নিচ্ছে না। সকাল ৮টা থেকে এই পারচেজ অপশনেই আটকে আছি।

 

‘পারচেজ অপশন পার হতে আমাকে কি ইফতার পর্যন্ত কম্পিউটারের সামনে বসে থাকতে হবে? বলা হচ্ছে, অনলাইনে শতভাগ টিকিট কিন্তু ৮টায় লগইন করে বেশিরভাগ টিকিট গায়েব। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে টিকিট উধাও কীভাবে?’ তৌহিদুল ইসলাম নামে এক টিকিটপ্রত্যাশী তার ফেসবুক পেজে লিখেছেন, শনিবার সকাল ৭টা থেকে চেষ্টা করে ৮টায় সাইটে লগইন করতে পেরেছেন তিনি। কিন্তু এরপরও টিকিট কিনতে পারেননি।

 

“১০ মিনিট পর সিট বুকিং দিয়ে ‘পারচেজ’-এ ক্লিক করলাম। বাকিটা ইতিহাস। টিকিট আর পেলাম না। কী বাটপার!... এই হলো বাংলাদেশ রেলের অবস্থা। যিনি আমার এই টিকিট পেয়েছেন আপনার যাত্রা শুভ হোক।” ‘বাংলাদেশ রেলওয়ে হেল্পলাইন’ নামে একটি ফেসবুক পেজেও সার্ভার সমস্যা এবং টিকিট কিনতে না পারার কথা জানিয়েছেন অনেকে।

 

রুবেল আলী নামে একজন টিকিটপ্রত্যাশী বলেন, ‘একটা বিষয় লক্ষ্য করলাম, আমি ঠিক ৮টার সময় সার্ভারে ঢুকি এবং এনইও বগিতে ২৭ নম্বর সিট সিলেক্ট করি। কিন্তু ব্রিং করছে। এখনো আমি বের হইনি। আমার বাবার আইডি দিয়ে ল্যাপটপে ঢুকে আমি ট্রাই করতেছি এখন ওই সিটটা বুকড দেখাচ্ছে।

 

সার্ভার ডাউন টিকিট কাটা যাচ্ছে না তাইলে এত সিট কই যাচ্ছে!’ সহজ-সিনেসিস-ভিনসেন জেভির ভাইস প্রেসিডেন্ট জুবায়ের আহমেদ শনিবার দুপুরে বলেন, দুপুর সোয়া ১টা পর্যন্ত ঢাকা থেকে বিভিন্ন গন্তব্যের সাড়ে ১৬ হাজার টিকিট বিক্রি হয়েছে। এক দনে টিকিট বিক্রি হয় ২৬ হাজারের বেশি।

 

যাত্রীদের ভোগান্তির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সার্ভারে কোনো সমস্যা হয়নি, সার্ভারের যে সক্ষমতা সে তুলনায় হিট হয়নি। কিন্তু সকাল থেকে তারা দেখেছেন বেশকিছু ফিক্সড আইপি থেকে অটোমেটেড লগইন করার চেষ্টা হচ্ছিল। এটা হ্যাকিং না হলেও সার্ভারে কিছুটা জট তৈরি করছিল। এটাকে সরাসরি হ্যাকিং বলব না। আমরা ধারণা করছি কালোবাজারিরা গত ৩০ বছর ধরে একটা প্রসেসে টিকিট নিয়ে বিক্রি করছে।

 

এবার যেহেতু এনআইডি কার্ডে একটার বেশি টিকিট পাওয়া যাচ্ছে না। তারা সম্ভবত কোনো সফটওয়্যার দিয়ে বারবার বিভিন্ন আইডি থেকে ঢোকার চেষ্টা করছে। দেখা গেছে, একটি আইপি থেকে সেকেন্ডে ২০ বার চেষ্টা করা হচ্ছে। এ কারণে আমাদের লগইন প্রসেসে জট তৈরি হচ্ছে।

 

আমরা যেটা করছি আপাতত ম্যানুয়ালি আইপিগুলোকে চেক করে যেগুলো রিয়াল আইপি সেগুলোকে লগইন করতে দিচ্ছি। কাজটি আরো দ্রুত করতে আমাদের টিম একটা ফিল্টার অ্যাপ্লিকেশন বানাচ্ছে, যেটা মেশিন জেনারেটেড লগইনগুলো ফিল্টার করতে পারবে।’

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version