মোতাহার হোসেন: হত্যা, মুদ্রা পাচার ও মানবপাচারসহ জঘন্য অপরাধে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে প্রায় এক লাখ ৩৫ হাজার ব্যক্তির বিদেশ ভ্রমণের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ইমিগ্রেশন বিভাগ।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা পাওয়ার পরই দেশের তিনটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ অন্যান্য সীমান্তবর্তী ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে রেড অ্যালার্ট জারি করেছে ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ। প্রতিদিন নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়া ব্যক্তিদের তালিকা হালনাগাদ করা হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
চিহ্নিত এসব সন্ত্রাসী, অপরাধী বিদেশে পালিয়ে গিয়ে সেখান থেকে যাতে দেশ ও সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করতে না পারে, সে জন্যই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ নির্দেশনা দিয়েছে বলে জানা গেছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশের পর ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের কাছে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখা থেকে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা গেছে।
ইমিগ্রেশন পুলিশের সূত্র জানায়, হত্যাসহ অন্য মামলার পলাতক আসামিরা যাতে দেশত্যাগ করতে না পারে, সেজন্য আদালত বাদীপক্ষের আইনজীবীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। আদালতের আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে ওই নিষেধাজ্ঞার কপি ইমিগ্রেশন অফিসে জমা দেয়া হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ তাদের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞায় তালিকাভুক্ত করে।
জানা গেছে, এসব সন্ত্রাসী, অপরাধী, মানব পাচারকারীরা আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অবৈধ প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করবে। ইতোমধ্যে কয়েকটি রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে এসব ব্যক্তিকে দলে টানার চেষ্টাও চলছে বলে তথ্য রয়েছে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার কাছে। রাজপথে সরকারবিরোধী আন্দোলনে যুক্ত একটি রাজনৈতিক দলের কয়েকজন শীর্ষ নেতার সঙ্গে সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্রের বৈঠক হয়েছে।
এই বৈঠক থেকে প্রয়োজনে আসন্ন নির্বাচন প্রতিহত করার জন্য যা যা করা দরকার, তার সব প্রস্তুতি নিতেও হাইকমান্ড থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দা সংস্থা। বিশেষ করে বিগত ২০১৩, ২০১৪ সালের মতো সহিংসতা ঘটানোর পরিকল্পনাও রয়েছে সন্ত্রাসী গ্রæপের। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ইতোপূর্বে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের বলেছেন, সরকার দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে দেবে না। জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধান এবং শান্তি নিশ্চিত করার পাশাপাশি যেকোনো ধরনের অপরতৎপরতা, জঙ্গি তৎপরতা ঠেকাতে সর্বদা কাজ করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। আগামী নির্বাচন ঘিরে সম্ভাব্য সন্ত্রাসী তৎপরতার বিষয়েও সংশ্লিষ্ট সংস্থা কাজ করছে বলে জানান মন্ত্রী।
সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে এসব চিহ্নিত অপরাধী, সন্ত্রাসী, মানবপাচার ও মুদ্রা পাচারে জড়িত লক্ষাধিক ব্যক্তিকে ঘিরে শুরু হয়েছে গোয়েন্দা তৎপরতরা। পাশাপাশি তাদের ব্যাপারে সার্বক্ষণিক মনিটরিং করা হচ্ছে। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, র্যাব, পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট নজরদারি করছে এসব ব্যক্তির গতিবিধি, কর্মকান্ড।
ইমিগ্রেশনের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞার তালিকায় এখন ১ লাখ ৩২ হাজার লোকের নাম রয়েছে। তালিকা কখনো বাড়ে, আবার কখনো কমে। সাধারণত আদালতের আদেশের পর যারা কোর্টে হাজির না হয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে তাদের ব্যাপারে সতর্কতা জারি করা হয়।
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, চট্টগ্রাম বিমানবন্দর ও সিলেট বিমানবন্দর ও দেশের সীমান্তবর্তী অন্যান্য ২২টি স্থলবন্দর ও দুটি সমুদ্রবন্দরসহ ইমিগ্রেশনের নিয়ন্ত্রিত সব চেকপোস্টে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়া ব্যক্তিদের ওপর নজর রাখা হয়। তাদের ছবিসহ অন্যান্য তথ্য চেকপোস্টের সার্ভারে রাখা হয়েছে। তাদের পাসপোর্ট নম্বরও আছে।
অপরাধবিষয়ক একজন আইনজীবী জানান, আদালত মামলা চলাকালে ও মামলার রায়ের পর অপরাধের গুরুত্ব বুঝে অভিযুক্তদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। আর সে আদেশ ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ কার্যকর করে।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য