-->
বিবিএসের জরিপ

বেশিরভাগ পথশিশু ঘর ছাড়ে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের কারণে

নিজস্ব প্রতিবেদক
বেশিরভাগ পথশিশু ঘর ছাড়ে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের কারণে

দেশে পথশিশুদের বেশিরভাগই ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের কারণে ঘর ছাড়ে বলে এক জরিপে উঠে এসেছে। বিবিএসের জরিপে দেখানো হয়েছে, দেশের পথশিশুদের মধ্যে ৩৭.৮ শতাংশই দারিদ্র্য বা ক্ষুধার কারণে ঘর ছেড়েছে। ১৫.৪ শতাংশ ঘর ছেড়েছে মা-বাবা শহরমুখী হওয়ার কারণে। এছাড়া কাজের জন্য ঘর ছেড়েছে ১২.১ শতাংশ শিশু।

 

জরিপের বলা হয়, দেশের প্রায় চার ভাগের এক ভাগ পথশিশু ধূমপান করে। ১২ শতাংশ মাদকের নেশায় আসক্ত। ৬৪ শতাংশ পথশিশু তাদের পরিবারে ফিরে যেতে চায় না।

 

সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের পরিসংখ্যান ভবনে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) পথশিশুদের নিয়ে করা জরিপের ফল প্রকাশ করা হয়। পথশিশু জরিপ প্রতিবেদন ২০২২-এর ফল তুলে ধরেন ডেমোগ্রাফি অ্যান্ড হেলথ উইংয়ের পরিচালক মো. মাসুদ আলম। সম্মানিত অতিথি হিসেবে ইউনিসেফ বাংলাদেশের রিপ্রেজেন্টেটিভ মি. শেলডন ইয়েটের উপস্থিতিতে জরিপের চ‚ড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।

 

এতে দেখানো হয়, পথশিশুদের ৮২ শতাংশই ছেলে এবং মেয়ে ১৮ শতাংশ। এ পথশিশুদের প্রতি পথশিশুর ৫ জনের ২ জনই একা একা শহরে এসেছে। দশ পথশিশুর তিনজন কখনোই স্কুলে ভর্তি হয়নি। সব পথশিশুর শুধু ১৮.৭ শতাংশ পঞ্চম শ্রেণি পাস করেছে। খুব নগণ্যসংখ্যক পথশিশু নিম্ন ও উচ্চ মাধ্যমিকে পড়াশোনা করেছে। বয়সের দিক থেকে সবচেয়ে বেশি ৫৪ শতাংশ পথশিশু ১০ থেকে ১৪ বছর বয়সি। ১৫ থেকে ১৭ বছরের পথশিশু রয়েছে ২৬.৭ শতাংশ। আর ৫ থেকে ৯ বছরের পথশিশু ১৯.২ শতাংশ।

 

সংবাদ সম্মেলনে মো. মাসুদ আলম বলেন, যথাযথ জরিপ পদ্ধতি অনুসরণ করে সারা দেশে প্রথম পর্যায়ে ০ থেকে ১৭ বছর বয়সি পথশিশুদের ওপর কুইক কাউন্ট পরিচালনার মাধ্যমে স্যাম্পলিং ফ্রেম প্রণয়ন করা হয় এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে ৫ থেকে ১৭ বছর বয়সি পথশিশুদের ওপর পথশিশু জরিপ ২০২২ পরিচালিত হয়। জরিপের ফলে বলা হয়, ঢাকা বিভাগে ৫ থেকে ১৭ বছর বয়সি ৪৮.৫ শতাংশ পথশিশু অবস্থান করছে।

 

এক্ষেত্রে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ২২.৭ শতাংশ এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ১৮.৩ শতাংশ পথশিশু রয়েছে। ১০ থেকে ১৪ বছর বয়সি পথশিশু রয়েছে ৫৪ শতাংশ। তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, লিঙ্গভিত্তিক বিভাজনে মেয়েদের তুলনায় ছেলে পথশিশুর সংখ্যা অনেক বেশি। ১ জন মেয়ের বিপরীতে ৪ জন ছেলে শিশু। পথশিশুদের গড় বয়স ১২.৩ বছর।

 

জরিপের ফলাফলে আরো দেখা যায়, পথশিশুদের সর্ব্বোচ্চ ২০.৪ শতাংশ চট্টগ্রাম বিভাগ এবং সর্বনিম্ন ৪.৯ শতাংশ সিলেট বিভাগের জেলাগুলো থেকে এসেছে। এক্ষেত্রে পথশিশুর নিজ জেলা ময়মনসিংহ সর্বোচ্চ ৬.৯ এবং বরিশাল ৫.৯, ভোলা ৫.৪, কুমিল্লা ৪.৫, কিশোরগঞ্জ ৪.১ এবং কক্সবাজার ৩.৮ শতাংশ যথাক্রমে। প্রধানত ৩৭.৮ শতাংশ পথশিশু দরিদ্রতা, ১৫.৪ শতাংশ বাবা-মা শহরে আসার কারণে এবং ১২.১ শতাংশ কাজের সন্ধানে বাড়ি ছেড়ে শহরে এসেছে।

 

প্রতি পথশিশুর ৫ জনের ২ জনই একা একা শহরে এসেছে। ১০ পথশিশুর তিনজন কখনোই স্কুলে ভর্তি হয়নি। সব পথশিশুর শুধু ১৮.৭ শতাংশ পঞ্চম শ্রেণি পাস করেছে। খুব নগণ্যসংখ্যক পথশিশু নিম্ন ও উচ্চমাধ্যমিকে পড়াশোনা করেছে। ফল প্রকাশনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান।

 

বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ড. শাহনাজ আরেফিন (এনডিসি), বিবিএসের মহাপরিচালক মো. মতিয়ার রহমান।

 

পরিকল্পনামন্ত্রী মান্নান বলেন, পথশিশুদের বিষয়ে হালনাগাদ সরকারি পরিসংখ্যান ছিল না, জাতীয় পরিসংখ্যান সংস্থা হিসাবে বিবিএস সে শূন্যতার জায়গাটি অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে তুলে এনেছে।

 

এ জরিপের তথ্য-উপাত্ত এখন পথশিশুদের জীবনমান উন্নয়নে পরিকল্পনা গ্রহণে সহায়ক হবে। ভবিষ্যতে সরকারের প্রয়োজনে জরিপ পরিচালনায় বিবিএস অগ্রণী ভ‚মিকা রাখবে বলে। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বিবিএসের উপমহাপরিচালক কাজী নূরুল ইসলাম।

 

প্রকাশনা অনুষ্ঠানে উন্মুক্ত আলোচনা পর্ব সঞ্চালনা করেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের যুগ্ম সচিব ড. দিপংকর রায়। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিরা, গবেষক, শিক্ষাবিদ, পেশাজীবীসহ বিভিন্ন অংশীজন প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version