-->
শিরোনাম

জমজমাট নতুন টাকার বাজার

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক
জমজমাট নতুন টাকার বাজার

ঈদে নতুন টাকার কদর চিরকালীন। প্রতি ঈদে বাড়ে নতুন টাকার চাহিদা। বাচ্চাদের বায়না থাকে নতুন টাকার। ঈদের দিন তারা চকচকা নোট খরচ করতে পছন্দ করে। বড়রাও সালামি দেয়ার জন্য রেডি রাখেন নতুন টাকা। যে কারণে ঈদের আগে প্রতি বছর জমজমাট হয়ে ওঠে নতুন টাকার বাজার। এবারো ঠিক তেমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

 

রাজধানীর গুলিস্তানে মওলানা ভাসানী হকি স্টেডিয়ামের উল্টো পাশে আন্ডারপাসের পাসঘেঁষে রাস্তার ওপর বিক্রি হচ্ছে নতুন নোট। এখানে জমে উঠেছে নতুন টাকা কেনাবেচার বাজার। নানা বয়সি ক্রেতারা ঈদের আমেজকে গায়ে জড়িয়ে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন নতুন টাকা। তবে বিক্রেতারা জানান, ঈদ কাছাকাছি চলে এলেও তাদের আশানুরূপ বিক্রি হচ্ছে না।

 

ঈদের সকালে বড়দের কাছ থেকে সালামি পাওয়ার অপেক্ষায় প্রহর গুনতে থাকে তারা। নতুন চকচকে টাকায় ঈদ বা ঈদ সালামি তাদের আনন্দকে বাড়িয়ে তোলে বহুগুণ। শুধু শিশুদেরই নয়, বড়দেরও নতুন নোটে সালামি দেয়ার রীতি বহুদিনের। এ কারণে ঈদের আগে অনেকেই সংগ্রহ করে থাকেন নতুন টাকা। কেউবা সংগ্রহ করেন ব্যাংক থেকে, কেউবা সংগ্রহ করেন পথের পাশে বসে থাকা নতুন টাকা বিক্রেতার কাছ থেকে।

 

ক্রেতারা জানান, ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করার জন্য নতুন নোট কিনতে এসেছি। অন্য সময় বাচ্চাদের ৫০০ টাকা দিলেও যা, ঈদের সময় নতুন ২০ টাকার নোট দিলেই সেই আনন্দ। সেজন্যই কষ্ট করে এটা নেয়া। প্রতি বছরই আমি নতুন নোট নিই বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে। এবারো নিয়েছি। কিন্তু কিছু বাড়তি টাকা লাগত। তাই গুলিস্তান থেকে কিনে নিলাম। কারণ একবারের বেশি ফিঙ্গার দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে টাকা নেয়া যায় না।

 

ঈদে বখশিশ দেয়া ও নেয়া দুটিই বেশ আনন্দদায়ক ও উপভোগ্য। বাবার সঙ্গে ঈদ উপলক্ষে নতুন নোট কিনতে আসা ১২ বছরের শিশু মো. শাকিল হোসেনও জানালেন এমনটাই। তার ভাষায়, প্রতি বছরই বাবার সঙ্গে নতুন নোট কিনতে আসি, খুবই ভালো লাগে। নতুন টাকা দিয়ে কী হবে জানতে চাইলে শাকিল বলে, ঈদের দিন সালামি হিসেবে এ নতুন নতুন টাকাগুলো সবাইকে দেয়া হবে। বড় ভাইয়া আপু সবাইকে। আমিও পাব। আবার আমি আমার ছোট চাচাতো-মামাতো ভাইবোনকে ঈদের বকশিস দেব।

 

নতুন টাকার বিক্রেতা মো. নাজিমউদ্দীন বলেন, আমি নতুন টাকা বিক্রি করি, আবার পুরোনো টাকাও কিনি। ছেঁড়ার ওপর নির্ভর করে পনের থেকে ২০ শতাংশ কমে আমরা পুরোনো বা ছেড়া নোট কিনি। আর নতুন নোট বিক্রি করি একেকটা একেক দামে।

 

যেমন ১০০ টাকার এক বান্ডিল আমি বিক্রি ১৫০ টাকা বেশিতে। বড় নোটের থেকে ছোট নোটের দাম বেশি। আমি যে দাম দিয়ে কিনি তার থেকে ২০ টাকা বেশি দিয়ে বিক্রি করি। আমার লাভ সীমিত। ঈদের আগে যে বিক্রিটা হয় সেটা এখনো শুরু হয়নি। তবে সাধারণ সময়ের থেকে বিক্রি বেড়েছে এটা সত্য।

 

এদিকে বিক্রেতারা জানান, এখন নতুন নোটের দাম কিছুটা বেশি। কারণ ব্যাংক থেকে নতুন নোট এখন বেশি দিচ্ছে না। আবার প্রতিদিনই ওঠানামা করছে নতুন এসব টাকার দাম। একেকজনের কেনার ওপর বিক্রির মূল্যেও রয়েছে ভিন্নতা। যদিও বিক্রেতারা জানান, সবার কাছে একই মূল্যে নতুন নোট বিক্রি হচ্ছে। তবে সরেজমিন নতুন টাকার এসব দোকান ঘুরে দেখা যায় তাদের মধ্যে রয়েছে মূল্যের ভিন্নতা।

 

মো. আমিনুল ইসলাম নতুন টাকার বিক্রেতা। দুই বছর ধরে তার বড় ভাইয়ের সঙ্গে তিনি এ ব্যবসা করছেন। বড় ভাই অনেক আগে থেকেই এ ব্যবসায় জড়িত। ঈদের বাজারে নতুন টাকার দাম জানিয়ে আমিনুল বলেন, ১০ টাকার এক বান্ডিল (১০০টি নোট) আমরা বিক্রি করছি ১ হাজার ২০০ টাকায়। ৫০ টাকার বান্ডিল (১০০টি নোট) বিক্রি করছি ৫ হাজার ২৫০ টাকায়। আর ১০০ টাকার বান্ডিলে ৩০০ টাকা বেশি নিচ্ছি। আর পুরোনো টাকার কন্ডিশন বুঝে ৫ থেকে ২০ শতাংশ কমিয়ে আমরা সেগুলো রাখি।

 

বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী মুখপাত্র মো. সারওয়ার হোসেন বলেন, এবারের ঈদে মোট ১৫ হাজার কোটি টাকার নতুন নোট বাজারে ছাড়ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। একজন সর্বোচ্চ সাড়ে ৮ হাজার টাকার নতুন নোট নিতে পারবেন বলেও জানান তিনি।

 

উল্লেখ্য, ঈদের আনন্দ-উৎসবকে কেন্দ্র করে বাড়তি চাহিদার কারণে এবারো বাজারে নতুন নোট ছেড়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ঈদ উপলক্ষে বাজারে ছাড়া হচ্ছে ১৫ হাজার কোটি টাকার নতুন নোট। তবে এটা অন্যান্য বছরের তুলনায় কিছুটা কম।

 

গত ৯ এপ্রিল থেকে ঢাকা, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ অঞ্চলের ৩২ ব্যাংকের ৪০ শাখার মাধ্যমে নতুন নোট বিনিময় শুরু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। শাখাগুলো থেকে একজন গ্রাহক সর্বোচ্চ সাড়ে ৮ হাজার টাকা সংগ্রহ করতে পারছেন।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version