-->
শিরোনাম

৪২ ডিগ্রি পেরিয়ে গেল তাপমাত্রা

শাহীন রহমান
৪২ ডিগ্রি পেরিয়ে গেল তাপমাত্রা

শাহীন রহমান: তাপমাত্রার পারদ ক্রমেই বেড়ে চলেছে। শনিবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এদিকে রাজধানী ঢাকায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকায় বিগত ৫৮ বছরের মধ্যে এটাই সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। এর আগে ১৯৬০ সালের এপ্রিলে ঢাকায় তাপমাত্রা উঠেছিল ৪২ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। সেটা রেকর্ড শুরুর পর থেকে সর্বোচ্চ।

 

আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, পরপর টানা ১৪ দিন ধরে চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হচ্ছে। চুয়াডাঙ্গার ওপর দিয়ে অব্যাহত তীব্র তাপপ্রবাহে থমকে গেছে জীবনযাত্রা। তীব্র তাপদাহে প্রয়োজনীয় কাজ ছাড়া বাইরে না যেতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শহরের অলিগলি, গ্রামগঞ্জে মাইকিং করে সতর্ক করা হচ্ছে।

 

টানা ১১ দিন ধরে চলছে তাপপ্রবাহ। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, আরো ৫ দিন এ অবস্থা চলতে পারে। এরপর তাপপ্রবাহ কিছুটা কমে আসবে। দেখা দিতে পারে মেঘের আনাগোনা। তারা জানায়, ২০ এপ্রিলের পর দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিচ্ছিন্নভাবে বৃষ্টির আভাস রয়েছে। এই সময়ে তাপপ্রবাহ কমে স্বস্তি মিলতে পারে। সূর্যতাপের প্রখরতাও কমে আসবে। এপ্রিলের শেষে ভারী বৃষ্টিপাতের দেখা মিলতে পারে।

 

আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ আব্দুল মান্নান ভোরের আকাশকে বলেন, আগামী ২ দিনে তাপমাত্রা আরো কিছটা বাড়বে। এই সময়ে মধ্যে তাপমাত্রা বেড়ে ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি চলে যেতে পারে। তবে দুদিন পর থেকে তাপমাত্রা আবার কমতে থাকবে। তবে এই সময়ের মধ্যে বৃষ্টিপাতের দেখা পাওয়া যাবে না। ২০ এপ্রিলের পর বৃষ্টিপাতের দেখা মিলতে পারে।

 

সারা দেশে প্রচন্ড তাপদাহে ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। বেড়েছে ডায়রিয়া, জ্বর, সর্দিসহ গরমজনিত নানা রোগ। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ভুট্টা, ধান, গমসহ মাঠের অন্যান্য ফসল। নষ্ট হয়ে ঝরে পড়ছে আম ও লিচুর গুটি। ব্যাহত হচ্ছে কৃষিকাজ।

 

এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, আগামী বৃহস্পতিবার নাগাদ দেশে একই অবস্থা চলতে থাকবে। এই সময়ের মধ্যে বৃষ্টির কোনো সম্ভাবনা নেই। এর পরে বৃষ্টির সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। এদিকে, তীব্র তাপদাহে সবচেয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষক ও খেটে খাওয়া মানুষ। শ্রমিক, দিনমজুর, রিকশাভ্যান চালকরা অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।

 

আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশীদ বলেন, গরমের সময় ভারতের গুজরাট ও পার্শ্ববর্তী এলাকার তপ্ত বাতাস নানা পথ পার হয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ দিয়ে বাংলাদেশে আসে। এই প্রবেশদ্বার চুয়াডাঙ্গা ও এর কাছাকাছি এলাকাগুলো। শীতের সময়ও ব্যাপারটা একই রকম। উত্তর গোলার্ধ থেকে আসা শীতল বায়ু বাংলাদেশ বা এ অঞ্চলে সোজা হয়ে ঢুকতে পারে না। এই বায়ুর একটি অংশ কাশ্মীর, দিল্লি, উত্তর প্রদেশ, বিহার ও পশ্চিমবঙ্গের একাংশ হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে।

 

এছাড়া এপ্রিল উষ্ণতম মাস। দেশের প্রায় সর্বত্র এখন তাপপ্রবাহ বিরাজ করছে। টানা ১১ দিন ধরে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে তিন দিন ধরে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। তিনি জানান, একটানা অনেকদিন ধরে বৃষ্টি নেই। বাতাসে জলীয়বাষ্পও নেই। এমন পরিস্থিতিতে তাপমাত্রা বেড়েই চলছে।

 

এদিকে তীব্র দাবদহের কারণে আন্তঃনগর ট্রেনের গতি ৩০ কিলোমিটার কমিয়ে চলাচলের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট রুটে রেলপথের বিভিন্ন অংশে গতি কমিয়ে ট্রেন চলাচলের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অতিরিক্ত গরমের কারণে এই রেলপথের বিভিন্ন অংশে সর্বোচ্চ ৪০ কিলোমিটার গতিতে সবগুলো আন্তঃনগর ও লোকাল ট্রেন চালাতে লোকো মাস্টারদের নির্দেশনা দিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।

 

এ ছাড়া মালবাহী ট্রেনগুলোকে ৩০ কিলোমিটার গতিতে চালানোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এছাড়া প্রচন্ড গরম এবং মাত্রারিক্ত তাপের কারণে রেললাইন যাতে বেঁকে না যায় সেজন্য রেললাইন ঠান্ডা করতে পানি, কচুরিপানা ও কাদা মাটি রেললাইনের ওপর দেয়া হচ্ছে।

 

এদিকে তপ্ত গরমের হাত থেকে রেহাই পেতে বিশেষজ্ঞরা সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছেন। তারা বলেন, যে কদিন তাপপ্রবাহ থাকবে গরমের হাত থেকে রক্ষা পেতে কঠোর পরিশ্রম এড়িয়ে যেতে হবে। প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হওয়া যাবে না। একান্ত যদি বের হতেই হয়, তাহলে মাথা এবং মুখ ভালো করে ঢেকে নিতে হবে। ব্যবহার করতে হবে ছাতা এবং টুপি। রোজাদারদের আরো বেশি সতর্ক থাকতে হবে। ইফতারের পর ঘন ঘন পানি পান করতে হবে। এছাড়া দিনের বেলায় একাধিকার হাতমুখ ধুতে হবে। প্রয়োজনে গামছা ভিজিয়ে বারবার গা মুছে নেয়া যেতে পারে।

 

আবহাওয়াবিদরা জানান, নিকট সময়ে ৯ বছর আগে ২০১৪ সালের ২৪ এপ্রিলেও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০.২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠেছিল। ওই বছরও চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠেছিল। ২০১০ সালে রাজশাহীতে পারদ উঠেছিল ৪২.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ১৮ মে রাজশাহীতেই ৪৫.১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠেছিল সর্বোচ্চ তাপমাত্রা, যা দেশে এ যাবৎকালের রেকর্ড।

 

এদিকে সারা দেশে চলমান তীব্র দাবদাহ ও গরম অনুভ‚ত হওয়ার জন্য জলবায়ু পরিবর্তনের পাশাপাশি বায়ুদূষণও দায়ী বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। শনিবার প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে তারা এই দাবি করেন। জাতীয় প্রেস ক্লাবে বায়ুমন্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) ও বারসিক আয়োজিত ‘বায়ুদূষণ কমাতে দ্বৈতনীতির পরিহার জরুরি’ শীর্ষক ওই সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক কামরুজ্জামান বলেন, তাপপ্রবাহের জন্য বায়ুদূষণ দায়ী।

 

ধূলিকণা ও দূষিত গ্যাসের তাপ শোষণ করার মতো থাকার কারণে বর্তমানে অত্যধিক দূষিত ধূলিকণা ও গ্যাসীয় পদার্থগুলো সূর্যের তাপমাত্রাকে শোষণ করে তাপপ্রবাহ সৃষ্টিতে ভ‚মিকা রাখছে। পাশাপাশি সালফার ডাই অক্সাইড, নাইট্রোজেন অক্সসাইড, কার্বন মনোঅক্সাইড, কার্বনডাই অক্সাইড তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা রাখে। সুতরাং তাপমাত্রার বৃদ্ধি কমাতে বায়ুদূষণও কমানো জরুরি।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version