দেশের আদালতে বিচারক, আইনজীবী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য প্রচলিত নির্ধারিত পোশাকের (ড্রেস কোড) পরিবর্তন চান আইনজীবীরা। শীত ও গ্রীষ্মকালের জন্য ভিন্ন ভিন্ন পোশাক চান তারা। এজন্য প্রধান বিচারপতির কাছে আবেদন জানিয়েছেন। সুপ্রিম কোর্টের তিন আইনজীবী ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ন কবির (পল্লব), ব্যারিস্টার মো. কাউছার ও অ্যাডভোকেট বায়েজীদ হোসাইন মঙ্গলবার এ আবেদন জানান।
আবেদনে বলা হয়, ‘বাংলাদেশ মূলত একটি গ্রীষ্মপ্রধান দেশ। বছরের প্রায় ৮ মাস উচ্চতাপমাত্রা বিরাজমান থাকে। বাংলাদেশে আইনজীবীদের আদালতে পরিধানের জন্য সিভিল রুলস অ্যান্ড অর্ডারস, ক্রিমিনাল রুলস অ্যান্ড অর্ডারস, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ রুলস ১৯৭৩ এবং আপিল বিভাগের রুলস ১৯৮৮-তে শীত এবং গ্রীষ্মকালে একই ধরনের পোশাক পরিধানের কথা বলা হয়েছে। বর্তমানে প্রচলিত আইনজীবীদের পোশাকটি মূলত ব্রিটিশ ভাবধারা এবং আবহাওয়া বিবেচনায় নির্ধারণ করা হয়েছিল। কালের বিবর্তনে আবহাওয়ার ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হওয়ায় বর্তমানে বাংলাদেশ একটি গ্রীষ্মপ্রধান দেশ হিসেবে পরিগণিত হয়েছে। কিন্তু আইনজীবীদের কল্যাণ এবং পেশাগত দায়িত্ব পালনের সুবিবেচনায় পোশাকের কোনো পরিবর্তন করা হয়নি। ফলে সারা দেশের হাজার হাজার আইনজীবী প্রতি বছরের মার্চ থেকে অক্টোবর পর্যন্ত উচ্চমাত্রার গরম আবহাওয়ার কারণে নিদারুণ, অসহনীয়, অবর্ণনীয়, শারীরিক এবং মানসিক কষ্ট সহ্য করে পেশাগত দায়িত্ব পালন করে লাখ লাখ বিচারপ্রার্থীকে আইনি সেবা দিয়ে আসছেন এবং আদালতগুলোয় আদালতের বন্ধু হিসেবে বিচারকাজে সহযোগিতা করে আসছেন। একইসঙ্গে নিম্ন এবং উচ্চ আদালতের বিচারকরা একই ধরনের পোশাক পরিধান করায় অবর্ণনীয় কষ্ট সহ্য করে যাচ্ছেন।’
আবেদনে আরো বলা হয়, ‘অতিরিক্ত গরমে নিয়মানুযায়ী কালো কোর্ট, গাউন, কলার, ব্যান্ড বা টাই পরিধানের কারণে প্রতি বছর বহুসংখ্যক আইনজীবী হিটস্ট্রোকে মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়েন এবং অনেক আইনজীবী অসুস্থ হয়ে পড়েন। ফলে বিজ্ঞ আইনজীবীদের জীবনহানি ঘটছে এবং তারা সংবিধান প্রদত্ত জীবনের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। একইভাবে বিচার প্রার্থীদের সঠিকভাবে আইনি সহায়তা দিতে ব্যর্থ হচ্ছেন এবং আদালতকে সঠিকভাবে বিচারকার্য পালনে সহায়তা করতে ব্যর্থ হচ্ছেন। ফলে দেশের সামগ্রিক বিচার ব্যবস্থাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তীব্র গরম এবং দাবদাহের কারণে অনেক বয়স্ক আইনজীবী আদালতে যেতে পারেন না। ফলে অনেক বিজ্ঞ আইনজীবীরা পেশাগত মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এছাড়া যেসব আইনজীবী পেশাগত দায়িত্ব পালন এবং আর্থিক প্রয়োজনে তীব্র দাবদাহ উপেক্ষা করে নিয়মিত পেশা পরিচালনা করছেন, তারাও ধীরে ধীরে চরম স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে পড়ে যাচ্ছেন। শুধু একটি নির্দিষ্ট পোশাকের কারণে উদ্ভূত এ সমস্যা থেকে এখনই পরিত্রাণ পাওয়া অত্যন্ত জরুরি এবং মানবিক তথা সময়ের প্রয়োজন।
উল্লেখ্য, ইতোপূর্বে করোনাকালীন মাননীয় প্রধান বিচারপতির নির্দেশনা মোতাবেক ড্রেস কোড পরিবর্তন করা হয়েছিল এবং তাতে আদালতের বিচারকার্য বা বিজ্ঞ আইনজীবীদের পেশাগত কোনো অসুবিধা হয়নি তথা বিচারপ্রার্থীদেরও কোনো অসুবিধা হয়নি।’
আবেদনে বলা হয়, ‘আইনজীবী, বিচারপ্রার্থী, মাননীয় বিচারকরা এবং বিচার বিভাগের সার্বিক কল্যাণের স্বার্থে আইনজীবীদের প্রচলিত পোশাকের পরিবর্তন আবশ্যক, বিধায় বিষয়টি সুবিবেচনায় নিয়ে আইনজীবী এবং বিচারকদের জন্য গ্রীষ্ম ও শীতকালীন ভিন্ন ভিন্ন ড্রেস কোড নির্ধারণের জন্য সুদৃষ্টি কামনা করছি।’
ভোরের আকাশ/আসা
মন্তব্য