-->
শিরোনাম
পদক্ষেপ না নিলে চরম হুমকি হতে পারে

গ্যাস ছড়িয়ে পড়ার ঘটনায় মানবাধিকার কমিশনের উদ্বেগ

নিজস্ব প্রতিবেদক
গ্যাস ছড়িয়ে পড়ার ঘটনায় মানবাধিকার কমিশনের উদ্বেগ

রাজধানীর বিভিন্ন আবাসিক এলাকায় গ্যাস ছড়িয়ে পড়ার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। কমিশন এ ঘটনায় বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানিয়ে বলেছে, অন্যথায় তা রাজধানীবাসীর জন্য চরম হুমকি বয়ে আনবে।

 

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের উপ-পরিচালক ফারহানা সাঈদ স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বুধবার এ কথা বলা হয়েছে।

 

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, রাজধানীর বিভিন্ন আবাসিক এলাকায় গ্যাস ছড়িয়ে পড়ার ঘটনা অত্যন্ত উদ্বেগজনক ও ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করছে কমিশন। কমিশনের পক্ষ থেকে গ্যাস সঞ্চালন লাইনের ক্রটিসমূহ শনাক্ত করে সে বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য ব্যবস্থাপনা পরিচালক, তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানিকে বলা হয়েছে। পাশাপাশি পূর্ব সতর্কতা হিসেবে যেকোনো আকস্মিক ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতি মোকাবিলা করার ব্যবস্থা প্রস্তুত রাখতে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে অনুরোধ করা হয়েছে।

 

বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়েছে, কমিশন মনে করে গ্যাসের সরবরাহ লাইনে চাপ স্বাভাবিক রাখাসহ সরবরাহ সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রাখা না হলে ব্যাপক জীবনহানির আশঙ্কা রয়েছে, যা মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। এছাড়া একের পর এক বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের ফলে মানুষের প্রাণহানিসহ বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। মেয়াদোত্তীর্ণ পাইপলাইন, গ্যাসলাইনের ছিদ্র শনাক্ত করার জন্য স্বয়ংক্রিয় মেশিনের অভাব, অবৈধ গ্যাস সংযোগের কারণে যত্রতত্র ছিদ্র হওয়া, তিতাসের সঞ্চালন লাইনে ক্রটি ও যথাযথ মনিটরিংয়ের অভাবে গ্যাস ছড়িয়ে পড়ার জন্য দায়ী বলে কমিশন মনে করে।

 

এ ঘটনায় দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে তা রাজধানীবাসীর জন্য চরম হুমকি বয়ে আনবে। এক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে ব্যবস্থা নেয়া আবশ্যক।

 

২৪ এপ্রিল সোমবার রাতে বিভিন্ন এলাকায় গ্যাসের গন্ধের কারণে রাজধানীজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। রাত ১১টার পর থেকেই আতঙ্ক এত বেশি ছড়িয়ে পড়ে যে, ভয়ে অনেকেই চুলা জ¦ালাতে সাহস করেনি। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মহাখালী, মগবাজার, ইস্কাটন, রামপুরা, রাজাবাজার, ক্রিসেন্ট রোড, বাড্ডা, হাজারীবাগ, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা, হাজারীবাগের বাসিন্দাদের কাছ থেকে গ্যাসের গন্ধ ছড়িয়ে পড়ার খবর আসতে থাকে। গ্যাসের গন্ধ পাওয়ার পরেই অনেকে ৯৯৯ ও ফায়ার সার্ভিস আর থানায় ফোন করে অবহিত করে। এ সময় বিভিন্ন এলাকার মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে চুলা না ধরানোর জন্য অনুরোধ করা হয়। ফলে আতঙ্ক আরো বেড়ে যায়।

 

এ সময় অনেকেই তিতাসের অফিসেও যোগাযোগ করে। তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিকার না পাওয়ায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। সামাজিক মাধ্যমে অনেকে গ্যাসের গন্ধ ছড়িয়ে পড়ার তথ্য দিয়ে পোস্ট করেন। এ তথ্য ছড়িয়ে পড়ার পর মহাখালী, রামপুরাসহ কয়েকটি এলাকায় অবস্থান নেয় ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি।

 

প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা সাংবাদিকদের বলেন, কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার প্রস্তুতি হিসেবে এ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। কোথাও এখনো কোনো দুর্ঘটনার খবর না পাওয়ার কথাও তারা জানান। এ সময় ফায়ার সার্ভিসের কন্ট্রোল রুম থেকে জানানো হয়, সোমবার মধ্যরাত থেকে গ্যাসের গন্ধ ছড়িয়ে পড়ার খবরে তারা শতাধিক টেলিফোন কল পেয়েছেন।

 

এদিকে গ্যাসের এই গন্ধ ছড়িয়ে পড়ার ঘটনায় মঙ্গলবার বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকেও একটি ব্যাখ্যা দেয়া হয়। রাত ১২টার পর এক ফেসবুক পোস্টে মন্ত্রণালয় জানায়, ঈদে শিল্পকারখানায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকায় সঞ্চালন ও বিতরণ লাইনে গ্যাসের চাপ বেড়ে যাওয়ায় (ওভার-ফ্লো) গন্ধ বাইরে আসছে। এ নিয়ে নগরবাসীকে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়ে মন্ত্রণালয় বলে, তিতাসের জরুরি ও টেকনিক্যাল টিম বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে। পোস্টে তিতাস গ্যাসের হটলাইন নম্বর ১৬৪৯৬ তুলে ধরা হয়। তবে জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা এভাবে গ্যাসের গন্ধ ছড়িয়ে পড়াকে ‘বিপজ্জনক’ বলে মন্তব্য করেছেন।

 

মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে গ্যাসের এই গন্ধ বন্ধ হয়ে যায়। এরপরই তিতাস কর্তৃপক্ষ জানায় রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সোমবার রাতে যে গ্যাসের গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছিল, সে সমস্যার সমাধান হয়েছে। তারা দাবি করেন কোম্পানিটির জরুরি ও টেকনিক্যাল টিম রাতেই সমস্যার সমাধান করেছে। এখন আর কোথাও গ্যাসের গন্ধ নেই।

 

তিতাস গ্যাসের উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) শাখাওয়াত হোসেন বলেন, সঞ্চালন ও বিতরণ লাইনে গ্যাসের চাপ বেড়ে যাওয়ার (ওভার-ফ্লো) কারণে যে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছিল, সেটা সমাধান হয়েছে। কী কারণে গ্যাসের চাপ বেড়ে গিয়েছিল, তা জানতে চাইলে বলেন, মন্ত্রণালয়ের থেকে যে ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে, সেটাই গ্যাস ছড়িয়ে পড়ার কারণ।

 

গন্ধ ছড়িয়ে পড়ার পর মন্ত্রণালয়ের ফেসবুক পোস্ট নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে শেয়ার করেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। তিনিও নগরবাসীকে আতঙ্কিত না হওয়ার অনুরোধ জানান। ওই ফেসবুক পোস্টে প্রতিমন্ত্রী লেখেন, ‘ঢাকার বেশ কয়েকটি জায়গায় গ্যাসের গন্ধ পাওয়ার খবরে নাগরিকদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। নগরবাসীকে আতঙ্কিত না হওয়ার জন্য অনুরোধ করছি। ঢাকার গ্যাস বিতরণ কোম্পানি তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ এরই মধ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।’

 

ভোরের আকাশ/আসা

মন্তব্য

Beta version