-->
শিরোনাম

বিশ্বব্যাপী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের জয়ধ্বনি

নিখিল মানখিন
বিশ্বব্যাপী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের জয়ধ্বনি

নিখিল মানখিন: বিশ্ব নেতাদের মুখে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসার ধুম পড়ে গেছে। বিশ্বব্যাপী চলছে তার নেতৃত্বের জয়ধ্বনি। শেখ হাসিনা নিজের অনুপ্রেরণা বলে উল্লেখ করেছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী।

 

আর দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মতো নেতৃত্ব প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন আইএমএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। প্রশংসা করেছেন বিশ্বব্যাংকসহ বিভিন্ন দেশের প্রধানরা। বিশ্বের ক্ষমতাধর নারীর তালিকায় ৪২তম স্থানে শেখ হাসিনা।

 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। নানা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেও নতুন এক উচ্চতায় দাঁড়িয়ে আছে দেশের অর্থনীতি। গত ১৪ বছরে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়েছে ছয়গুণের বেশি। বিশ্বের ৩৫তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ হিসেবে স্থান করে নিয়েছে বাংলাদেশ। বৈশ্বিক সংকটেও সচল রয়েছে রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়।

 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেখানে অনেক দেশের অর্থনীতির অবস্থা তলানিতে, সেখানে জীবন-জীবিকার সমন্বয় ঘটিয়ে সচল রয়েছে বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকা।

 

গত ৩০ এপ্রিল ওয়াশিংটনের রিজ-কার্লটন হোটেলে বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে বাংলাদেশের অভূতপূর্ব উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা করে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা বলেছেন, সব বাধা-বিপত্তি মোকাবিলা করে দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মতো নেতৃত্ব প্রয়োজন। বাংলাদেশ বিশ্বে একটি রোল মডেল। শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে দেশটি বিভিন্ন ক্ষেত্রে অভূতপূর্ণ উন্নয়ন অর্জন করেছে বলে জানান আইএমএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক।

 

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিজের রোল মডেল বা অনেক বড় অনুপ্রেরণা বলে উল্লেখ করেছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক। তার স্ত্রী এবং দুই কন্যাও শেখ হাসিনার ভক্ত বলে জানান তিনি।

 

তিনি বলেন, তার দুটো ছোট মেয়ে আছে। তারা ও তার স্ত্রী সবাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভক্ত।

 

গত ৫ মে স্থানীয় সময় বিকেলে লন্ডনের পলমলে কমনওয়েলথ সেক্রেটারিয়েটের মার্লবোরো হাউসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে ঋষি সুনাক একথা বলেন।

 

গত ৫ এপ্রিল প্রকাশিত জাতিসংঘের বার্ষিক প্রতিবেদনে বাংলাদেশ সম্পর্কে বলা হয়েছে, করোনা মহামারি, ইউক্রেন যুদ্ধ, উন্নয়ন ও মানবিক সহায়তা পাওয়ার প্রতিযোগিতা এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্রমবর্ধমান সংকট সত্ত্বেও ২০২৩ সালে অর্থনীতিকে স্থিতিশীল ও শক্তিশালী করে তোলার পথ খুঁজবে বাংলাদেশ। চলতি বছর বাংলাদেশকে কয়েকটি বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে।

 

এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশকে সহযোগিতা করবে জাতিসংঘ। বাংলাদেশ ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশে উত্তরণের পথে হাঁটবে। দেশের টেকসই উন্নয়নজনিত অগ্রগতির গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক অর্জনের ব্যাপারে একটি কৌশল নিয়ে কাজ করবে।

 

শেখ হাসিনার সময়োচিত অর্থনৈতিক সংস্কারের প্রশংসায় ব্লুম বার্গ : সম্প্রতি আন্তর্জাতিক অর্থবিষয়ক সংবাদ সংস্থাটি এক নিবন্ধে লিখেছে, ‘তিনি (শেখ হাসিনা) টানা চতুর্থ মেয়াদে জয়ী হবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।’ একই সঙ্গে শেখ হাসিনাকে পুরো তহবিল পেতে আরো সংস্কার করতে হবে বলেও পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

 

নিবন্ধে বলা হয়েছে যে, শেখ হাসিনার বিজয়ের কারণ ‘কেবল তার অনেক প্রতিপক্ষ কারাগারে আছে বা আইনি ফাঁদে পড়েছেন এটা নয় বরং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে তার সাফল্যের কারণেই এটা ব্যাপকভাবে প্রত্যাশিত।’

 

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়ন: বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দীর্ঘ চার দশক ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের এবং ১৯ বছর সরকারের নেতৃত্বে আছেন শেখ হাসিনা। তার নেতৃত্বাধীন সরকার টানা তৃতীয় মেয়াদসহ চতুর্থবার দেশ পরিচালনা করছে।

 

এ সময়ের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ পুনঃপ্রতিষ্ঠা, বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার, যুদ্ধাপরাধের বিচার, সমুদ্রসীমা জয়, ছিটমহল সমস্যার সমাধান, বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের মধ্য দিয়ে মহাকাশ বিজয়, সাবমেরিন যুগে বাংলাদেশের প্রবেশ, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ ও চালু, মেট্রোরেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণ, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, নতুন নতুন উড়াল সেতু নির্মাণ, মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ, এলএনজি টার্মিনাল স্থাপন,

 

খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স দেশে আনয়ন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রেকর্ড পরিমাণ বৃদ্ধি, দারিদ্র্যের হার হ্রাস, গড় আয়ু প্রায় ৭৩ বছরে উন্নীত করা, বিদ্যুতের উৎপাদন ২৫ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করা ও প্রায় শতভাগ বিদ্যুতায়ন, জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন, সাক্ষরতার হার ৭৫ দশমিক ৬ শতাংশে উন্নীত করা, বছরের প্রথম দিনে শিক্ষার্থীর হাতে বিনামূল্যে নতুন বই পৌঁছে দেয়া, মাদরাসা শিক্ষাকে মূলধারায় সম্পৃক্ত করা ও স্বীকৃতি দান,

 

মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন ও চিকিৎসা ব্যবস্থার আধুনিকায়ন, প্রতি জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের উদ্যোগ, নারীনীতি প্রণয়ন ও নারীর ক্ষমতায়ন, ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ ও আইসিটি খাতে বিপ্লব সাধন, ভূমিহীন ও গৃহহীনকে ঘর প্রদান, দুস্থ ও অসহায়দের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় আনা, করোনা মহামারি মোকাবিলায় অসামান্য সাফল্যে বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষে ও বিশ্বে পঞ্চম স্থানে আসীন করা, দেশকে উন্নয়নশীল বিশ্বের কাতারে শামিল করাসহ বাংলাদেশের এরকম অসংখ্য কালোত্তীর্ণ অর্জনের কারিগর সফল রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা।

 

বিশেষজ্ঞরা আরো বলেন, আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অর্জন রীতিমতো বিস্ময়কর। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও বড় বড় সংস্থা থেকে তিনি পেয়েছেন নানা স্বীকৃতি। শান্তির প্রচার, অনুসন্ধান ও সুরক্ষার জন্য ইউনেস্কো থেকে পেয়েছেন ‘হুপে-বোয়ানি’ শান্তি পুরস্কার। অর্জন করেছেন ‘মেডেল অব ডিস্টিনকশন’ ও ‘হেড অব স্টেট’ পদক। বিশ্ব শান্তির দূত হিসেবে সর্বভারতীয় শান্তিসংঘ থেকে পেয়েছেন ‘মাদার তেরেইজা পুরস্কার’।

 

জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় দূরদর্শী ভূমিকার জন্য বিশ্বের পরিবেশবিষয়ক সর্বোচ্চ স্বীকৃতি ‘চ্যাম্পিয়নস অব দ্য আর্থ’ অর্জন করেছেন। খাদ্য ও কৃষিক্ষেত্রে দীর্ঘকালীন প্রতিশ্রুতি তাকে এনে দিয়েছে ‘দ্য সিরিস মেডেল’। মিয়ানমারের বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে ভূষিত হয়েছেন ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ সম্মানে। অর্জন করেছেন জাতিসংঘের ‘আইসিটি টেকসই উন্নয়ন পুরস্কার’।

 

নারী রাজনীতিবিদদের বৈশ্বিক নেটওয়ার্ক উইমেন পলিটিক্যাল লিডার্স প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভ‚ষিত করেছে ‘রিজিওনাল লিডারশিপ’ অ্যাওয়ার্ডে। নারী ও কন্যাশিশুদের শিক্ষা প্রসারে অবদানের স্বীকৃতি ‘পিস ট্রি’ অ্যাওয়ার্ড, শিশু ও মাতৃমৃত্যু হার হ্রাস এবং ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি সাউথ-সাউথ পুরস্কার, নারীর ক্ষমতায়নে অসামান্য অবদানের জন্য ইউএন উইমেন প্রদত্ত ‘এজেন্ট অব চেঞ্জ’ পুরস্কার ও ‘প্ল্যানেট ৫০-৫০ চ্যাম্পিয়ন’ অ্যাওয়ার্ড রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার অর্জনের মুকুটে এক একটি জ্বলজ্বলে পালক।

 

খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, সামাজিক নিরাপত্তা প্রদান ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে রাষ্ট্রনায়কোচিত ভ‚মিকা রেখে তিনি হয়ে উঠেছেন ‘স্টেট ম্যান’। বিশ্ব নেতৃত্ব শেখ হাসিনাকে বলেছেন ‘স্টার অব ইস্ট’। জাতিসংঘের সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট সলিউশনস নেটওয়ার্ক তাকে ‘এসডিজি অগ্রগতি পুরস্কার’ প্রদান করে ‘মুকুট মণি’ অভিধায় ভূষিত করেছে।

 

এ সবই দূরদর্শী নেতা ও সরকারপ্রধান শেখ হাসিনার অনবদ্য নেতৃত্বের স্বীকৃতি। এখানেই একজন শেখ হাসিনা অনন্য, অপ্রতিদ্বন্দ্বী।

 

বিবিএস এবং বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এসব সূচকের প্রথম যে তথ্য পাওয়া যায় তাতে দেখা যাচ্ছে, রপ্তানি আয় বহুগুণে বেড়ে মিলিয়ন ডলার থেকে এসেছে বিলিয়ন ডলারের ঘরে। ২০২০ সালের হিসাবে যা ৩৯.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। জিডিপি আকার ২০১৯-২০ অর্থবছরে এসে হয়েছে প্রায় ২৭ লাখ ৯৬ হাজার কোটি টাকা। মাথাপিছু আয় বেড়েছে ১৬ গুণ।

 

হিসাব অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছরের সাময়িক হিসাবে মাথাপিছু আয় দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৪১ হাজার ৪৭০ টাকা বা ২ হাজার ৮২৪ মার্কিন ডলার।

 

জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাউন্সিলের (ইকোসক) মানদন্ড অনুযায়ী মানবসম্পদ সূচকে ৬৬ প্রয়োজন হলেও বাংলাদেশ অর্জন করেছে ৭২.৯। অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচক হতে হবে ৩২ শতাংশ বা এর কম, যেখানে বাংলাদেশের রয়েছে ২৪.৮ শতাংশ।

 

মাত্র ৭ কোটি ৮৬ লাখ টাকার বাজেট নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল যে দেশ, তা আজ ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার, যা জিডিপির ১৫.৪০ শতাংশ। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটের আকার ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা, যা জিডিপির ১৭.৫০ শতাংশ।

 

শুধু বাজেট কেন, মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপি, মাথাপিছু আয় ও মানবসম্পদ সূচকে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ব্যবধান ধীরে ধীরে কমে আসছে। অর্থনৈতিক অগ্রগতির সূচকে বিশ্বের শীর্ষ পাঁচটি দেশের একটি এখন বাংলাদেশ।

 

প্রাইস ওয়াটার হাউস কুপারসের প্রক্ষেপণ অনুযায়ী ২০৪০ সাল নাগাদ বাংলাদেশের অর্থনীতি বিশ্বে ২৩তম স্থান দখল করবে। এইচবিএসসির প্রক্ষেপণ অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ বিশ্বের ২৬তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ হবে।

 

হংকং সাংহাই ব্যাংকিং করপোরেশন এইচএসবিসির গ্লোবাল রিসার্চের তথ্যমতে, ২০৩০ সালের মধ্যে জিডিপি নিরিখে বিশ্বের ২৬তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ হবে বাংলাদেশ, বর্তমানে যেখানে ৪২তম।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version