-->
শিরোনাম

'মোখা'র কবলে পড়তে পারে দেশ

শাহীন রহমান
'মোখা'র কবলে পড়তে পারে দেশ

শাহীন রহমান: একদিকে দেশে বয়ে যাচ্ছে তাপপ্রবাহ, অন্যদিকে আগামীকাল বুধবারের মধ্যে সাগরে সৃষ্টি হচ্ছে ঘূর্ণিঝড়। নাম নিচ্ছে ‘মোখা’। আর এই ঘূর্ণিঝড়েই বিপদ দেখছে বাংলাদেশ।

 

আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছে, এটি বাংলাদেশে দক্ষিণ-পূর্ব উপকূল ও মিয়ানমারের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া আশঙ্কাই বেশি। আগামী ১৫ মে নাগাদ এটি দেশের উপক‚লে আঘাত হানতে পারেও বলে জানিয়েছেন তারা।

 

একই সঙ্গে তারা জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড় আসার আগ পর্যন্ত অব্যাহত থাকছে তাপপ্রবাহ। ফলে আগামী কয়েকদিন জলে, স্থলে উভয় স্থানেই আবহাওয়ার এই বিরূপ আচরণ থাকবে।

 

গত এপ্রিলে দেশে টানা ১৯ দিন ধরে বয়ে যায় তীব্র তাপপ্রবাহ। মে মাসের শুরুতেও আবহাওয়ায় স্বস্তি ফেরেনি। এর মধ্যেই গত রোববার থেকে শুরু হয়েছে ফের তাপপ্রবাহ। দ্বিতীয় দফায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কোঠায়। অব্যাহত এই তাপপ্রবাহের মধ্যেই বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হয়েছে একটি লঘুচাপ।

 

আবহাওয়াবিদরা জানান, লঘুচাপ থেকে নিশ্চিত একটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে যাচ্ছে।

 

আবহাওয়া অধিদপ্তরের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ আব্দুল মান্নান ভোরের আকাশকে জানান, লঘুচাপটি আরো ঘনীভূত হয়ে আজ নিম্নচাপে রূপ নিতে পারে। এটি আরো ঘনীভূত হয়ে আগামীকাল বুধবার বিকেলের মধেই ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিচ্ছে।

 

তিনি জানান, ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হলে এর নাম হবে ‘মোখা’। এটি ইয়েমেনের দেয়া নাম। তাদের একটি বন্দরের নাম অনুসারে এই নাম রাখা হয়েছে।

 

তবে তিনি জানান, ঘূর্ণিঝড় মোখায় দেশের জন্য যথেষ্ট ঝুকিপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। এটি উত্তর উত্তর-পশ্চিমে অগ্রসর হচ্ছে। যদিও বুধবার এর গতিপথ নিয়ে বিস্তারিত ধারণা পাওয়া যাবে। তবে চরিত্র দেখে মনে হচ্ছে, এটি দেশের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলের দিকে অগ্রসর হতে পারে। ফলে এর প্রভাবে দেশের চট্টগ্রাম বন্দর অধিক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। পাশাপাশি মিয়ানমারের উপকূলও ঝুঁকিতে রয়েছে বলে জানান তিনি।

 

আরব সাগর ও বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড়ের নাম দেয় বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার সাইক্লোন সংক্রান্ত আঞ্চলিক সংস্থা এসকাপ। এ অঞ্চলের ১৩টি দেশের দেয়া নামের তালিকা থেকে পর্যায়ক্রমে নতুন নতুন ঘূর্ণিঝড়ের নাম ঠিক করা হয়।

 

লঘুচাপ তৈরির পর সুস্পষ্ট লঘুচাপ, নিম্নচাপ, গভীর নিম্নচাপের ধাপ পেরিয়ে তবেই ঘূর্ণিঝড় হবে। মঙ্গলবার এটি নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে, তখন এর গতি-প্রকৃতি নিয়ে পরবর্তী পর্যবেক্ষণ জানাবে আবহাওয়া অফিস।

 

আবহাওয়াবিদরা জানান, আজ মঙ্গলবার নিম্নচাপে পরিণত হওয়ার পর বুধবার ঘূর্ণিঝড়ের রূপ পেতে পারে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপটি। এটি প্রথম দিকে উত্তর উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হলেও ১১ মে ঘূর্ণিঝড়টি ধীরে ধীরে বাঁক নিয়ে উত্তর উত্তর পূর্বদিকে বাংলাদেশ-মিয়ানমার উপকূলের দিকে অগ্রসর হতে পারে।

 

অন্যদিকে তারা জানান, আকাশে মেঘের আনাগোনা কম রয়েছে। দক্ষিণী বাতাস দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করছে না। ফলে বাতাস গরম হয়ে পড়ছে। ঝড় উপক‚লে আসার আগ পর্যন্ত সারা দেশে তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে। তবে এবারের তাপপ্রবাহ আগের মতো তীব্র আকার ধারণ করছে না। ঝড়ের প্রভাবে বৃষ্টিপাত হলে তাপপ্রবাহ থেমে যাবে।

 

এদিকে আবহাওয়া অফিস জানায়, দেশের ৪৩ জেলায় এখন মৃদু থেকে মাঝারি মানের তাপপ্রবাহ বইছে। এক দিনের ব্যবধানে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা প্রায় ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে গেছে। তাপপ্রবাহের পরিধি আগামী দুদিন আরো বিস্তৃত হতে পারে।

 

আবহাওয়ার অধিদপ্তরের সর্বশেষ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায়, ৩৯ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগের ২৪ ঘণ্টায় এই চুয়াডাঙ্গাতেই দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৩৭ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৭ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগের ২৪ ঘণ্টায় এ তাপমাত্রা ছিল ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

 

আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ এ কে এম নামজুল হক বলেন, তিনটি কারণে তাপমাত্রা বাড়ছে। এক, এপ্রিল ও মে মাস দেশের উষ্ণ মাস। গত এপ্রিল মাসে স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টি হয়েছে। এ দুই মাসের বৈশিষ্ট্যের কারণেই এখন গরম বেশি। গরম হওয়ার দ্বিতীয় কারণ হলো কম বৃষ্টি হওয়া। মে মাসের শুরুতে দেশের বিভিন্ন স্থানে কিছু কিছু বৃষ্টি হলেও গত দুই দিন বৃষ্টি একেবারেই কম। আর এ কারণে গরম বাড়ছে। তিনি সাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের কথা বলেন।

 

তার মতে, এখন সাগর থেকে হাওয়া আসছে না। বরং ভূপৃষ্ঠের হাওয়া সাগরের দিকে ছুটছে। আর এ কারণে গরম বেশি।

 

আবহওয়াবিদ বজলুর রশিদ বলেন, গরম বেশি অনুভূত হওয়ার কারণ বাতাসে আর্দ্রতা বেশি।

 

তিনি জানান, আরো অন্তত দু’তিন দিন এমন গরম থাকতে পারে। দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন দক্ষিণ আন্দামান সাগর এলাকায় একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে। এটি ঘনীভূত হতে পারে। পশ্চিমা লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে।

 

আবহাওয়া অফিস জানায়, এ বছর এপ্রিল মাসে ২৬ দিন ছিল তাপপ্রবাহময়। এপ্রিল মাসে স্বাভাবিকের চেয়ে ৬৬ শতাংশ কম বৃষ্টিপাত হয়েছে এবার। গত ১৬ এপ্রিল ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ওঠে ৪০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে, যা গত ৫৮ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা।

 

আর ১৭ এপ্রিল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠেছিল ঈশ্বরদীতে, যা দেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। এরপর মাঝে দেশে বিচ্ছিন্নভাবে বৃষ্টিপাত হয়েছে। সেই সঙ্গে বয়ে গেছে কালবৈশাখী ঝড়ও। কিন্তু গরমের মাত্রা খুব বেশি কমেনি।

 

দেশের বিভিন্ন এলাকায় কালবৈশাখী ঝড় হলেও বৃষ্টির পরিমাণ খুব বেশি ছিল না। যে পরিমাণ দাবদাহ বয়ে যাচ্ছে, সে তুলনায় বৃষ্টি না হওয়ার কারণে তাপমাত্রা আবার বাড়তে শুরু করেছে। দুই দিনের ব্যবধানে দুই থেকে তিন ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বেড়েছে।

 

এদিকে দাবদাহ বয়ে যাওয়া অঞ্চলের সংখ্যাও বেড়েছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের কোথাও ঝড়-বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই। বরং যেসব এলাকায় তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে তা অব্যাহত থাকার পাশাপাশি আরো এলাকায় ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

 

এদিকে আবহাওয়া পূর্বাভাসে বলা হয়, অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।

 

তাপপ্রবাহের বিষয়ে বলা হয়, রাজশাহী, খুলনা ও বরিশাল বিভাগসহ ঢাকা, টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ, রংপুর, দিনাজপুর, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, মৌলভীবাজার, চট্টগ্রাম, রাঙামাটি, চাঁদপুর, কুমিল্লা, ফেনী, নোয়াখালী ও বান্দরবান জেলার ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে ও বিস্তার লাভ করতে পারে।

 

সারা দেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version