-->

প্রবল বেগে ধেয়ে আসছে `মোখা'

শাহীন রহমান
প্রবল বেগে ধেয়ে আসছে `মোখা'

শাহীন রহমান: মধ্য বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ প্রবল বেগে অগ্রসর হচ্ছে। যাত্রাপথে ক্রমেই শক্তি সঞ্চয় করছে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, এটি আরো অধিক শক্তি বাড়িয়ে এখন ‘অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে’ রূপ নিয়েছে। আগামী রোববার দুপুর নাগাদ দেশের টেকনাফ উপকূল ও মিয়ানমারে আঘাত হানবে। তবে ঘূর্ণিঝড়ের মূল কেন্দ্র আঘাত হানবে মিয়ানমারের ওপর। ফলে বাংলাদেশ অংশে অপেক্ষাকৃত কিছুটা কম ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে বলে ধারণা করছেন আবহাওয়াবিদরা।

 

গত বৃহস্পতিবার ভোরে সৃষ্টি হয় ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’র। এর আগে ৮ মে সৃষ্টি হয় লঘুচাপের। আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেকোনো ঘূর্ণিঝড়ই যত বেশি সময় ধরে সাগরে অবস্থান করে, তত তার শক্তি এবং ধ্বংসক্ষমতা বেশি হয়। সমুদ্র থেকেই সব শক্তি সঞ্চয় করে সে। মোখার ক্ষেত্রেও পরিস্থিতি একই মনে করা হচ্ছে। এ কারণেই আশঙ্কা করা হচ্ছে স্থলভাগে আছড়ে পড়ার সময় ঘূর্ণিঝড়ের গতিবেগ হতে পারে ঘণ্টায় ১৫০ থেকে ১৬০ কিলোমিটার। দমকা হাওয়ার বেগ পৌঁছতে পারে ১৭৫ কিলোমিটারে।

 

আবহাওয়াবিদরা বলছেন, বর্তমান গতি-প্রকৃতি অনুযায়ী এগোলে বা দিক না পাল্টালে সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় মোখা ১৪ মে দেশের কক্সবাজার এবং মিয়ানমারের কিয়াকপিউয়ের মধ্যবর্তী এলাকা দিয়ে উপকূল অতিক্রম করতে পারে। তারা জানান, ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিয়েই এটি উত্তর উত্তর পাশ্চিমে অগ্রসর হয়। গতকাল শুক্রবার সকালে এটি ডানে মোড় নিয়ে উত্তর উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এখন পর্যন্ত এর যে অবস্থান, তাতে এটি আগামীকাল রোববার দুপুরের দিকে কক্সবাজারের টেকনাফ উপকূল অতিক্রম করতে পারে। তবে এর অগ্রভাগের প্রবেশের কারণে আজ শনিবার সন্ধ্যার পর থেকেই দক্ষিণ-পূর্ব উপকূল বা কক্সবাজার, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টি হতে পারে। কক্সবাজার অঞ্চলে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে।

 

এদিকে আবহাওয়া বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, এটি শক্তি বাড়িয়ে এগিয়ে আসছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ১৩০ কিলোমিটার, যা দমকা বা ঝড়ো হাওয়া আকারে ১৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ছে। ‘অতি প্রবল’ ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে। এ কারণে দেশের সমুদ্রবন্দরগুলোকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে অতিদ্রুত নিরাপদ স্থানে যেতে বলা হয়েছে।

 

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আজিজুর রহমান শুক্রবার সংবাদ সম্মেলনে বলেন, মোখার কেন্দ্রের ব্যাস বাড়ছে। প্রথমে এটি ছিল নিম্নচাপ। তখন এর কেন্দ্রের ব্যাস ছিল ৪০ কিলোমিটার। পরে গভীর নিম্নচাপের সময় ব্যাস ৪৮ কিলোমিটার হয়ে গেছে। এখন এটি ৭৪ কিলোমিটার হয়ে গেছে। এটি বাড়ছে। পুরো ঘূর্ণিঝড়টির এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তের পরিধির বিস্তার ৫০০ থেকে ৬০০ কিলোমিটার।

 

তিনি জানান, শুরুতে ঘূর্ণিঝড়ের এগোনোর গতি ছিল ১৪ থেকে ১৫ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টায়। বর্তমানে তা ৮ কিলোমিটারে নেমে এসেছে। এটি ধীরে ধীরে এগোচ্ছে। এর মাধ্যমে মূলত এর শক্তি সঞ্চয় হচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার সকালে এটি ছিল ঘূর্ণিঝড়, পরে প্রবল ঘূর্ণিঝড় হয়ে যায়। গতকাল এটি হয়ে উঠেছে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়। গতি ধীর হওয়ার কারণে আরো শক্তিশালী হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। তিনি বলেন, মোখার যে বৈশিষ্ট্য তাতে প্রবল বৃষ্টিপাত, জলোচ্ছ্বাস, ঝড়ো হাওয়া, বজ্রসহ বৃষ্টি বয়ে নিয়ে আসছে। তিনি বলেন, যে মডেলগুলো এখন দেখা যাচ্ছে, তাতে মনে হচ্ছে, টেকনাফের দক্ষিণ দিক দিয়ে ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্র চলে যাবে। যেটা আমাদের সীমানার বাইরে। এটা এখনো পর্যন্ত এ অবস্থায় আছে। তবে এর পরিবর্তন হতে পারে। আজ আরো সুনির্দিষ্টভাবে বলা যাবে।

 

আবহাওয়া অফিস জানায়, অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেয়ার পরেই ক্রমেই তা শক্তি বাড়াচ্ছে। এটি উপকূলের কাছে যখন আসবে, তখন এর কেন্দ্রে বাতাসের গতিবেগ আরো বাড়তে পারে। তবে এটি আরো শক্তি বাড়িয়ে সুপার সাইক্লোনে রূপ নেবে কিনা, তা নিশ্চিত করতে পারছেন না আবহাওয়াবিদরা। তারা জানান, কারণ ঘূর্ণিঝড়ে কেন্দ্রের গতি ঘণ্টায় ২২০ কিলোমিটারের উপরে উঠলেই শুধু সুপার সাইক্লোন হিসেবে ধরা হয়। এটি এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ ১৫০ ািকলোমিটার পর্যন্ত উঠছে। যদিও এর শক্তি আরো বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এর আগে ২০০৭ সালে ঘূর্ণিঝড় সিডর কেন্দ্রের গতি ছিল ২৬২ কিলোমিটার। আর ১৯৯১-এর প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রের গতি ছিল ২২৫ কিলোমিটার।

 

আবহাওয়াবিদ উমর ফারুক বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রে বাতাসের গতিবেগ যদি ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটারের মধ্যে থাকে, তাহলে সেটিকে স্বাভাবিক ঘূর্ণিঝড় বলা হয়। কেন্দ্রে বাতাসের গতিবেগ ৮৯ থেকে ১১৭ কিলোমিটারের মধ্যে হলে সেটি প্রবল ঘূর্ণিঝড় আর বাতাসের গতিবেগ ১১৮ থেকে ২২০ কিলোমিটারের মধ্যে হলে সেটিকে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। আর বাতাসের গতিবেগ যদি ঘণ্টায় ২২০ কিলোমিটারের বেশি হয়ে থাকে, তাহলে সেটিকে সুপার সাইক্লোন বলা হয়। তবে মোখা সুপার সাইক্লোনে রূপ নেবে কিনা, তা এখনো নিশ্চিত বলতে পারেনি আবহাওয়া অফিস।

 

এদিকে আবহাওয়া বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন দক্ষিণপূর্ব বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ উত্তর-উত্তর পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে পূর্ব মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। এটি শুক্রবার দুপুর ১২টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১০০৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৯৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৯৬৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৯৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরো উত্তর-উত্তর পূর্ব দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হতে পারে।

 

ভোরের আকাশ/আসা

মন্তব্য

Beta version