-->

ভয়ংকররূপে মোখা

শাহীন রহমান
ভয়ংকররূপে মোখা

শাহীন রহমান: ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ আঘাত হানছে আজ রোববার।

 

আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, এটি আরো শক্তি বাড়িয়ে এখন ভয়ংকর রূপ নিয়েছে। ঝড়ের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ার কারণে কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় আনা হয়েছে। পাশাপাশি চট্টগ্রাম ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় আনা হয়েছে। ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের মানে হলো প্রচন্ড ঝড়টি বন্দরের ওপর ও অথবা পাশ দিয়ে অতিক্রম করবে।

 

এদিকে ‘অতি প্রবল’ ঘূর্ণিঝড় আরো শক্তি বাড়িয়ে ক্রমেই উপকূলের দিকে এগিয়ে আসছে।

 

আজ রোববার বিকেল নাগাদ টেকনাফের দক্ষিণ পাশ দিয়ে অতিক্রম করবে। এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে সেন্টমার্টিন, টেকনাফ ও কক্সবাজারের ওপর।

 

আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, ঝড়ের গতি না কমলে অতিক্রমের সময় ১৭০ থেকে ১৯০ কিলোমিটার বেগে উপকূলে আঘাত হানতে পারে। এছাড়া ওই সময়ে উপকূলে ১২ ফুট উচ্চতায় জলোচ্ছাসের আশঙ্কা রয়েছে।

 

শনিবার দুপুর আড়াইটায় আবহাওয়া অফিস ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’র অবস্থান ও গতি নিয়ে সর্বশেষ বিজ্ঞপ্তি প্রচার করে।

 

সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড়টির গতিপথ আগের মতোই কক্সবাজার ও মিয়ানমার উপকূলের দিকে রয়েছে। এটি রোববার বিকেল ৪টার মধ্যে কক্সবাজার ও মিয়ানমার উপকূল অতিক্রম করতে পারে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১৭০ কিলোমিটার, যা দমকা হাওয়ার আকারে ১৯০ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ছে।

 

বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয় ঘূর্ণিঝড়টি শনিবার দুপুর ১২টায় কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে, চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৭০৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে, পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৩০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল।

 

আবহাওয়া অফিস জানায়, ঘূর্ণিঝড়টি আরো উত্তর-উত্তর-পূর্বদিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হয়ে রোববার বিকেলের মধ্যে কক্সবাজার-উত্তর মিয়ানমার উপকূল অতিক্রম করতে পারে। অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে। এ জন্য কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

 

অন্যদিকে মোংলা সমুদ্রবন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

 

বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, উপকূলীয় জেলা কক্সবাজারের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে। চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, চাঁদপুর, ভোলা, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, বরিশাল, বরগুনা, পিরোজপুরের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের কাছাকাছি এলাকায় সাগর উত্তাল থাকায় বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছধরা নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।

 

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আজিজুর রহমান জানান, ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ ঘণ্টায় আট থেকে ১০ কিলোমিটার গতিতে অগ্রসর হচ্ছে। সেই হিসেবে রোববার বিকেল ৩টা থেকে ৪টার মধ্যে দেশের উপকূলে আঘাত করতে পারে। আঘাতের সময় উপকূলীয় এলাকায় আট থেকে ১২ ফুট উঁচু জলোচ্ছাস হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেই সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোয় ভারী বৃষ্টি হতে পারে।

 

তিনি জানান, ঘূণিঝড়টি উপকূলের যত কাছাকাছি আসতে থাকবে, সেটির অগ্রসর হওয়ার গতি আরো বাড়তে থাকবে। তখন সেটি ঘণ্টায় ২০ কিলোমিটার পর্যন্ত গতিতে এগোতে পারে। ঘূর্ণিঝড় যখন উপকূলের কাছাকাছি আসে, তখন সেটির অগ্রসর হওয়ার গতি বেড়ে যায়। ঘূর্ণিঝড়টির কেন্দ্রের পরিধি প্রায় ৭৪ কিলোমিটার। ফলে সেটি যদি সেন্টমার্টিন দ্বীপ বা টেকনাফের দক্ষিণ দিক থেকেও অতিক্রম করে, তার প্রভাব সেন্টমার্টিন, টেকনাফ এবং কক্সবাজার এলাকায় পড়বে।

 

এদিকে ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রবর্তীর অংশের প্রভাবে শনিবার রাত থেকে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগের উপকূলীয় এলাকায় প্রভাব পড়তে শুরু করছে।

 

এছাড়া ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, চাঁদপুর ও ভোলার উপক‚লীয় এলাকায় স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে পাঁচ থেকে আট ফুট বেশি উচ্চতার জলোচ্ছাস হতে পারে এর প্রভাবে।

 

সর্বশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয় ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে চট্টগ্রাম, সিলেট ও বরিশাল বিভাগে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে। যার প্রভাবে কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রামের পাহাড়ি এলাকার কোথাও কোথাও ভ‚মিধস হতে পারে।

 

ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় প্রস্তুতি: এদিকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।

 

মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সবশেষ প্রস্তুতির বিস্তারিত জানিয়ে বলা হয়, শুক্রবার রাত থেকেই কক্সবাজার এবং চট্টগ্রাম জেলায় বিপদাপন্ন জনগণকে আশ্রয়কেন্দ্রে আনা শুরু হয়েছে। সবচেয়ে বিপদের সম্মুখীন সেন্টমার্টিন দ্বীপের প্রায় ৮ হাজার ৫০০ মানুষকে ‘সুপার সাইক্লোন’ মোকাবিলায় সক্ষম ৩৭টি অবকাঠামোয় নিরাপদ আশ্রয়ে নেয়া হয়েছে। প্রয়োজনে সেখানকার মানুষকে উদ্ধার করে টেকনাফে নিয়ে আসার জন্য নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড প্রস্তুত রয়েছে।

 

এতে আরো বলা হয়, অতিবৃষ্টিতে পাহাড়ধসের ঝুঁকিতে থাকা চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও বান্দরবানের সংশ্লিষ্ট স্থানগুলোতেও প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।

 

বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম জেলায় স্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা ৫৩০টি, ধারণক্ষমতা ৫ লাখ ৭০ হাজার ৮৫০ জন। কক্সবাজার জেলায় স্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা ৫৭৬টি, ধাণক্ষমতা ৫ লাখ ১০ হাজার। এর বাইরেও চট্টগ্রাম জেলায় আরো ৫০০টি অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

 

এতে আরো বলা হয়েছে মানুষকে নিয়ে আসার আগে আশ্রয়কেন্দ্র ব্যবস্থাপনার জন্য প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে আসা লোকজনের জন্য চট্টগ্রাম জেলায় ৫০ টন চাল, ১০ লাখ টাকা, ৩ দশমিক ৫ টন ড্রাই কেক, ৩ দশমিক ৪ টন টোস্ট বিস্কুট, ৩০০ প্যাকেট ওরস্যালাইন, ৬০ হাজার পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট পাঠানো হয়েছে। কক্সবাজার জেলায়ও দেয়া হয়েছে এমন বরাদ্দ।

 

এছাড়া চট্টগ্রাম জেলায় ৬৮৪ টন চাল, নগদ ১০ লাখ টাকা এবং কক্সবাজার জেলায় ৪৯৫ টন চাল, নগদ ৯ লাখ ৩০ হাজার টাকা মজুত আছে বলে জানিয়েছে মন্ত্রণালয়।

 

নৌযান চলাচল বন্ধ ঘোষণা: এদিকে ঘূর্ণিঝড় মোখার কারণে সারা দেশে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত অভ্যন্তরীণ নৌপথে সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ থাকবে। তবে সতর্কসংকেত মেনে বিভিন্ন নৌপথে ফেরি চলছে।

 

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) নৌযান চলাচল বন্ধের নির্দেশনা দিয়েছে।

 

তবে বিআইডব্লিউটিসির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সতর্কসংকেত মেনে বিভিন্ন নৌপথে ফেরি চলাচল অব্যাহত আছে। শনিবার নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য অফিসার মো. জাহাঙ্গীর আলম খান এ তথ্য জানান।

 

তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোখার কারণে সারা দেশে অভ্যন্তরীণ নৌপথে সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত এ সিদ্ধান্ত বহাল থাকবে।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version