-->

গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক হতে দু-এক দিন লাগবে : প্রতিমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক
গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক হতে দু-এক দিন লাগবে : প্রতিমন্ত্রী

ঘূর্ণিঝড়ে ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় গ্যাসের সরবরাহ স্বাভাবিক হতে দু-এক দিন সময় লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।

 

রোববার সচিবালয়ে মন্ত্রণালয় সভাকক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা জানান।

 

ঘূর্ণিঝড়-পরবর্তী গ্যাস পরিস্থিতি নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের ওইরকম কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। একটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল সরে গেছে। আরেকটি রয়েছে। যেটা রয়ে গেছে, সেটি দিয়ে আমরা দু-তিন দিনের মধ্যে গ্যাস চালু করতে পারব। যেটি খুলে গেছে, সেটি আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে আমাদের ১০ থেকে ১২ দিন সময় লাগতে পারে।

 

তিনি আরো জানান, বিদেশি ডুবুরি আসবে, তারা গিয়ে কাজ করবেন। তবে আমরা মনে করি, আল্লাহর অশেষ রহমতে আমরা ওইরকম ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। শিগগিরই আমরা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে পারব। আরো দু-এক দিন সময় লাগতে পারে।

 

একটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল সরে যাওয়ায় গ্যাস সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ কারণে ৪০০ ঘনফুট গ্যাসের ঘাটতি থাকবে। আমি মনে করি, এখনকার পরিস্থিতি থাকবে না, উন্নতি হবে। তবে কিছু কিছু জায়গায় প্রভাব থাকবে। সেটা খুব বেশি না। রাত থেকে কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছিল, এটা কাভার করে আগামী দুদিনের মধ্যে ভালো অবস্থানে যেতে পারব।

 

দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল পুরোদমে চালু হতে কতদিন সময় লাগবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দুটি চালু হতে সময় লাগবে। একটি চালু হয়ে যাবে। আগামী দুদিনের মধ্যে জাহাজ চলে আসবে, গ্যাস আমরা দিতে পারব। আরেকটি চালু হতে ১২-১৫ দিন সময় লাগবে।

 

এদিকে মোখায় বন্ধ এলএনজি চট্টগ্রামে গ্যাস সংকট ‘আরো এক সপ্তাহ’ থাকবে। ঘূর্ণিঝড় মোখার কারণে এলএনজি টার্মিনাল থেকে সরবরাহ বন্ধ থাকায় মানুষের যে দুর্ভোগ তৈরি হযেছে, তা এ সপ্তাহে কাটার সম্ভাবনা কম। গ্যাস সরবরাহকারী সংস্থা কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড-কেজিডিসিএ জানিয়েছে, ছয় থেকে সাত দিন সময় লাগবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে।

 

তারা পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বলেছে, ‘এলএনজি সরবরাহ বন্ধ থাকায় চট্টগ্রাম অঞ্চলে গ্যাস সরবরাহ বিঘ্নিত হয়েছে। এ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে ছয়-সাত দিন সময় লাগতে পারে।’ গ্যাস সংকটে কেউ কেউ ইনডাকশন চুলা কিনতে বাধ্য হয়েছেন।

 

চট্টগ্রামে সার কারখানা, বিদ্যুৎকেন্দ্র ও গৃহস্থালি মিলিয়ে প্রতিদিন গড়ে ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুটের ওপরে গ্যাস প্রয়োজন। বাসাবাড়িতে চাহিদা ৫০ মিলিয়ন ঘনফুটের মতো। কেজিডিসিএ নিশ্চিত করেছে, চট্টগ্রাম এক প্রকার গ্যাসশূন্য।

 

সংস্থাটির মহাব্যবস্থাপক (বিপণন) আমিনুর রহমান বলেন, ‘চট্টগ্রাম অঞ্চলে মূলত এলএনজি টার্মিনাল থেকে আসা গ্যাস দিয়েই চাহিদা মেটানো হয়। এর কারণে সেন্ট্রাল গ্রিড থেকে আমাদের গ্যাস দেয়া হয় না।

 

ঘূর্ণিঝড়ের কারণে এলএনজি সরবরাহ বন্ধ করে দেয়ায় এ অঞ্চলের মানুষ গ্যাস পাচ্ছে না।’ এলএনজি বন্ধ থাকায় জাতীয় গ্রিড থেকে কিছু গ্যাস চাওয়া হয়েছে। যদি কিছু গ্যাস পাওয়া যায়, তাহলে সোমবার নাগাদ ‘সুখবর’ মিলতে পারে বলে জানান তিনি।

 

রোববার সকালে মোখা যখন উপকূল অতিক্রম শুরু করে, সে সময় বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ১৯৫ কিলোমিটার। ‘অতি প্রবল’ হিসেবে চিহ্নিত এ ঘূর্ণিঝড় ধেয়ে আসতে থাকলে গত শুক্রবার রাতে সাগরে থাকা এলএনজি টার্মিনাল থেকে সরবরাহ বন্ধ করে দেয়া হয়। সতর্কতার অংশ হিসেবে টার্মিনাল দুটি মহেশখালীর নির্ধারিত জায়গা থেকে গভীর সমুদ্রের দিকে নিয়ে যাওয়া হয়।

 

ঘূর্ণিঝড় উপকূলে আঘাত হানার পর ধীরে ধীরে এর শক্তি কমে আসছে। যতটা আশঙ্কা করা হয়েছিল, ক্ষয়ক্ষতি ততটা হয়নি। তবে বন্ধ করে দেয়া এলএনজি সরবরাহ আবার চালু করতে বেশ সময় নিতে চাইছে কেজিডিসিএ।

 

চট্টগ্রাম জেলায় বাসাবাড়ি ও বিভিন্ন শিল্প কারখানা এলএনজি সরবরাহের ওপর নির্ভরশীল। দুদিন ধরে গ্যাস না থাকায় বিদ্যুৎকেন্দ্র যেমন বন্ধ, তেমনি জ্বলছে না ঘরের চুলা। গ্যাসচালিত যানবাহনের চাকাও ঘুরছে না। সিএনজি স্টেশনগুলোয় জ্বালানি ভরতে না পেরে অটোরিকশাসহ অন্যান্য যানবাহনের লম্বা লাইন পড়েছে। জ্বালানি সংকটে ভাড়া দ্বিগুণ হয়ে পড়েছে অটোরিকশার।

 

নগরীর এনায়েত বাজার এলাকার বাসিন্দা সুরভী ঘোষ রোববার সকালে ঘুম থেকে উঠে চা পান করতে গিয়ে বিপাকে পড়েন।

 

তিনি বলেন, ‘গতকালও গ্যাস ছিল না। ছেলেমেয়েদের খাবার তৈরি করতেই হিমশিম খেয়েছি। আজকেও গ্যাস নেই। বাধ্য হয়ে ঘরের বাইরে লাকড়ির চুলায় রান্না শুরু করেছি।’

 

মির্জারপুল এলাকার বাসিন্দা আতিকুর রহমান বলেন, ‘দুদিন ধরে ঘরে রান্না হচ্ছে না।’

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version