এইচ এম ফরিদুল আলম শাহীন, কক্সবাজার: শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় মোখা'র তান্ডবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে টেকনাফের সেন্টমার্টিন, শাহপরীর দ্বীপ, বাহারছড়া, হ্নীলা হোয়াইক্ষ্যং ও উখিয়ার পালংখালী এবং জালিয়াপালং। বিধ্বস্ত হয়েছে ২ সহস্রাধিক কাঁচা ঘরবাড়ি । সেখানে ঘরবাড়ি, গাছপালা, বিদ্যুতের খুঁটিসহ বিভিন্ন অবকাঠামো উপড়ে গেছে। সেন্টমার্টিনে গাছ পড়ে দুইজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেলেও এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়নি। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে গাছ পড়ে আহত হয়েছেন ৭ জন।
পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় উদ্ধার তৎপরতায় নেমে পড়েছেন নৌবাহিনী, কোষ্টগার্ড,রেড়ক্রিসেন্ট,আনসার বিডিপি,পুলিশ ও এনজিও কর্মীরা।
রোববার দুপুরের দিকে সেন্টমার্টিনের বিভিন্ন স্থানে এমন পরিস্থিতির কথা জানিয়েছেন সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান।
তিনি বলেন, এই মুহূর্তে সেন্টমার্টিনে বাতাসের গতি থেমে গেছে। তবে বাতাসের কারণে ৮০ শতাংশ কাঁচা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। দ্বীপের গাছপালা পড়ে বাড়িঘর ও রাস্তার উপর এলোপাতাড়ি হয়ে পড়ে থাকায় স্বাভাবিক জীবন যাপন ব্যাহত হচ্ছে। মানুষ আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে আসতে শুরু করেছে। অনেক ঘরবাড়ি উড়িয়ে নিয়ে গেছে। আহত হয়েছে এক নারীসহ তিনজন।
সেন্টমার্টিনের স্থানীয় বাসিন্দা ইউপি সদস্য আবুল ফয়েজ বলেন, বাতাসের গতি তীব্র থেকে তীব্রতর ছিল। মানুষের ঘর বাড়ির টিন, ছাউনি, কাঠ, বাঁশ উড়িয়ে নিয়েছে। বড় বড় গাছ ও নারিকেল গাছ দুমড়েমুচড়ে পড়েছে, দোকানপাট ভেঙে উড়ে গেছে। পুরো সেন্টমার্টিনে বৃষ্টির পানি ও বাতাসের তীব্রতায় কিছুই দেখা যায় না। সব ধোঁয়াশা হয়ে ছিল।
কক্সবাজার আবহাওয়া অধিদপ্তরের সহকারী আবহাওয়াবিদ আব্দুর রহমান বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোখা টেকনাফ থেকে ৫০-৬০ কিলোমিটার দূরত্বে দক্ষিণ মিয়ানমারের সিট্যুয়ে অঞ্চল দিয়ে চলে গেছে।
তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের মূল ঝুঁকিটা চলে যাওয়ায় টেকনাফ, কক্সবাজারসহ বাংলাদেশের অঞ্চলগুলো অনেকটা ঝুঁকিমুক্ত । এর ফলে শুরু থেকে ঘূর্ণিঝড় মোখা নিয়ে আমাদের যে ঝুঁকির আশঙ্কা ছিল, এখন আর ততটা ঝুঁকি নেই। ঘূর্ণিঝড় মোখার পিক আওয়ার ছিল দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত । এ সময়ে দ্রুত বেগে জলোচ্ছ্বাস প্রবাহিত হয়েছে। তখন ঘণ্টায় ১২০-১৩০ কিলোমিটার পর্যন্ত ঝোড়ো হাওয়া ছিল।
এদিকে কক্সবাজার উপকূল অতিক্রম করে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখা মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলের রাখাইন প্রদেশে আছড়ে পড়েছে বলে খবর জানিয়েছে সেখানকার গনমাধ্যম। সেখানকার গনমাধ্যমের বরাত দিয়ে আন্তর্জাতিক গনমাধ্যম জানিয়েছে, এ পর্যন্ত মিয়ানমারে ঘূর্ণিঝড় মোখা আঘাতে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। মিয়ানমার আবহাওয়া অফিস বলছে, রাখাইন রাজ্যের সিট্যুয়ে শহরের কাছে ঘন্টায় ঘন্টায় ২০৯ কিলোমিটার গতি নিয়ে আছড়ে পড়েছে ঘূর্ণিঝড় মোখা। দেশটির সেনাবাহিনীর তথ্যে বলছে, কিয়াউকপিউ ও গওয়া শহরে ঘরবাড়ি বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার, মোবাইল ফোনের টাওয়ার, নৌকা, ল্যাম্পপোষ্ট ক্ষতি হয়েছে। মোখার তান্ডবে দেশটির বৃহত্তর শহর দক্ষিণ পশ্চিমের কোকো দ্বীপপুঞ্জের বেশ কিছু ভবনের ছাদ উড়ে গেছে।
এদিকে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ কামরুজ্জামান বলেছেন, তীব্র বাতাসে টেকনাফ ও সেন্টমার্টিনে ৮০ শতাংশ কাঁচাঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। গাছপালা পডে কোন কোন এলাকার সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ ছিল তবে ঝড়ের গতি কমে আসলে গাছপালা সরানো হয়। বর্তমানে স্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করছি।
শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ের তান্ডবে কক্সবাজার সদর, ঈদগাঁও, চকরিয়া, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, পেকুয়া রামু ও উখিয়ার উপকূলে ব্যাপক ক্ষতিসাধিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ শাহীন ইমরান। তবে কোথায় ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে জলোচ্ছ্বাস হয়নি।
কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ড.তানজির সাইফ আহমদ জানান, শুষ্ক মৌসুমে জেলার উপকূলীয় অঞ্চলের ৫৯৫ কিলোমিটার বেঁড়িবাঁধ সুরক্ষিত করা হয়েছে। কারণ চলতি অর্থ বছরে মহেশখালী, কুতুবদিয়া,কক্সবাজার সদর, টেকনাফে ৩২ কোটি টাকার জরুরি ভিত্তিতে বাঁধের মেরামত করা হয়েছে। এবার ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে ৪/৫ ফুট জলোচ্ছ্বাস হলেও টেকসই বেঁড়িবাধ থাকায় কোন এলাকায় পানি ঢুকতে পারেনি।
ভোরের আকাশ/আসা
মন্তব্য