-->
শিরোনাম
শাসক নয়, সেবক হিসেবে কাজ করি

আন্তরিকভাবে কাজ করুন, দেশের উন্নয়ন যাতে বাধাগ্রস্ত না হয়: প্রধানমন্ত্রী

অনলাইন ডেস্ক
আন্তরিকভাবে কাজ করুন, দেশের উন্নয়ন যাতে বাধাগ্রস্ত না হয়: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা জনগণের সেবক। আমিও সরকার গঠন করার পর আমার বাবার মতো বলেছিলাম, আমি জনগণের সেবক। আমি শাসক হিসেবে নয়, সেবক হিসেবে কাজ করি।

 

তিনি বলেন, এদেশের মানুষের সেবা করাই আমরা একমাত্র কাজ। মানুষকে সুন্দর জীবন দেয়া, সেটাই আমার একমাত্র কাজ। সেভাবে কিন্তু আমি এই দেশটাকে পরিচালনা করছি।

 

সোমবার রাজধানীর শাহবাগে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস প্রশাসন একাডেমিতে ১২৭, ১২৮ এবং ১২৯তম আইন ও প্রশাসন প্রশিক্ষণ কোর্সসমূহের সমাপনী ও সনদ বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি এ আহব্বান।

 

জাতির পিতার একটি ভাষণ থেকে উদ্ধৃত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সরকারি কর্মচারী ভাইয়েরা, আপনাদের জনগণের সেবায় নিজেদের উৎসর্গ করতে হবে। জাতীয় স্বার্থকে সব কিছুর ঊর্ধ্বে স্থান দিতে হবে। এখন থেকে অতীতের আমলাতান্ত্রিক মনোভাব পরিবর্তন করে নিজেদের জনগণের খাদেম বলে বিবেচনা করতে হবে।

 

তিনি বলেন, একজন মা যেমন একটি সংসারকে আগলে ধরে সবার ভালো দেখতে চান, আমি কিন্তু সেই মানসিকতা নিয়ে দেশটাকে পরিচালনা করে এ পর্যন্ত নিয়ে এসেছি। এখান থেকে যেন আর আমাদের পিছিয়ে যেতে না হয়। সেদিকে সবাইকে দৃষ্টি দিতে হবে।

 

শেখ হাসিনা বলেন, সাধারণ মানুষ যেন ন্যায়বিচার পায়। মাদক, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও দুর্নীতির হাত থেকে যেন মানুষ মুক্তি পায়। এগুলো সমাজটাকে নষ্ট করে, একেকটা পরিবারকে নষ্ট করে। সেদিকে আমাদের বিশেষভাবে দৃষ্টি দেয়া একান্তভাবে দরকার।

 

তিনি বলেন, আমরা চাই আমাদের তরুণ প্রজন্ম দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে যেন দেশকে এগিয়ে নিয়ে যায়।

 

প্রধানমন্ত্রী অপচয় রোধের পাশাপাশি অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনা করে কৃচ্ছ্রতা সাধন করারও পরামর্শ দেন।

 

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ এখন বিশ্বে ৩৫তম অর্থনীতির দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। আমাদের দারিদ্র্যের হার ৪১ ভাগ ছিল। তা আমরা ১৮ দশমিক ৭ ভাগে নামাতে পেরেছি। অন্তত আরো ২ থেকে ৩ শতাংশ আমাদের নামাতেই হবে।

 

তিনি বলেন, অতি দারিদ্র্যের হার যা ২৫ দশমিক ৯ ভাগ ছিল, তা আমরা এখন ৫ দশমিক ৬ ভাগে নামিয়ে এনেছি। কিন্তু আমরা চাই না বাংলাদেশে একজন মানুষও অতি দরিদ্র থাকুক। এটাকে একেবারে শূন্যের কোটায় আমরা নামিয়ে আনতে চাই। কাজেই কোথায় এখনো এ ধরনের মানুষ আছে, আমরা সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দেব।

 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, কাঠামোগতভাবে, খাদ্য উৎপাদনের দিক থেকে, শিক্ষায়-দীক্ষায়, ডিজিটাল সেবা, প্রযুক্তি, সবদিক থেকে আজ বাংলাদেশে একটা বিরাট পরিবর্তন আমরা নিয়ে এসেছি। এটা যেন ব্যাহত না হয়। কারণ আমার একটা আশঙ্কা আছে। (যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশে) যখন সমস্ত কিছু কাটিয়ে ওঠে বাংলাদেশকে আর্থসামাজিক উন্নয়নের পথে জাতির পিতা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন, এমনকি যে চালের দাম ১০ টাকায় উঠে গিয়েছিল সেই চালের দাম তিন টাকায় নেমে এসেছিল।

 

আমাদের প্রবৃদ্ধি ৯ ভাগে উন্নীত হলো, যখন মানুষের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এলো, মানুষ আত্মবিশ্বাস ফিরে পেল, আমরা এগিয়ে যাব, ঠিক সে সময় কিন্তু ১৫ আগস্টের ঘটনাটা ঘটল। আমাদের সব আকাক্সক্ষা ধূলিসাৎ হয়ে গেল।

 

তিনি বলেন, ২১ বছর, পরে আবার আট বছর, এই ২৯ বছর জাতির জীবনে উন্নয়নের ধারাটা একদম থেমে গিয়েছিল। ২০০৯ সালে সরকার গঠন করে আজ ২০২৩ পর্যন্ত বাংলাদেশকে একটা জায়গায় আমরা আনতে পেরেছি।

 

তিনি বলেন, ‘একজন মা যেমন একটি সংসারকে আগলে সবার ভালো দেখতে চান, আমি কিন্তু সেই মানসিকতা নিয়ে দেশটাকে পরিচালনা করে এ পর্যন্ত নিয়ে এসেছি। এখান থেকে যেন আর আমাদের পিছিয়ে যেতে না হয় সেদিকে সবাইকে দৃষ্টি দিতে হবে।’

 

আইন ও প্রশাসন কোর্সের নবীন কর্মকর্তাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের বেতন-ভাতা যা কিছু সব জনগণের কাছ থেকে আসে। তাদের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য কাজ করা সবার কর্তব্য। এ কথা মনে রেখে সবসময় চলতে হবে।’

 

স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তাদের ডিজিটাল সেন্টারসহ সরকারের নানামুখী উদ্যোগগুলোর দিকে নজর রাখার আহব্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সাধারণ মানুষ যেন ন্যায়বিচার পায়। মাদক, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও দুর্নীতির হাত থেকে যেন মানুষ মুক্তি পায়। কারণ এগুলো সমাজকে নষ্ট করে। একটা পরিবারকে ধ্বংস করে। সেই দিকে আমাদের বিশেষভাবে দৃষ্টি দেয়া দরকার।

 

আমি চাই, আপনারা সেদিকে দৃষ্টি দেবেন।’ পাশাপাশি অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনা করে অপচয় সাধন নীতি মেনে চলার আহব্বান জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের টানা মেয়াদে নানামুখী পরিকল্পনা ও উদ্যোগ তুলে ধরেন। প্রশাসন ও আইন ব্যাচের প্রশিক্ষণার্থী কর্মকর্তাদের আগামী দিনের স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখার আহব্বান জানান শেখ হাসিনা।

 

তিনি বলেন, ‘আমার এই নবীন ছেলেমেয়েরাই হবে আগামী দিনের মূল কারিগর। পরবর্তী সময়ে যারা আসবে তারাও একইভাবে এগিয়ে যাবে।’

 

তিনি আরো বলেন, ‘একটা জিনিস মাথায় রাখতে হবে ১৪ বা ১৫ বছর আগের বাংলাদেশ কী ছিল? আর ২০০৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে কী পরিবর্তন হয়ে যায়নি? অবকাঠামো, শিক্ষা-দীক্ষা বা ডিজিটাল সিস্টেম ব্যবহারে সবদিক থেকে বাংলাদেশ আজ উন্নত। বিরাট একটা পরিবর্তন আমরা নিয়ে এসেছি। এটা যেন ব্যাহত না হয়।’

 

শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতির পিতার হত্যাকান্ডের পর বাংলাদেশের উন্নয়নের গতি ২৯ বছর থেমে ছিল। আজ বাংলাদেশটাকে আমরা একটা জায়গায় আনতে পেরেছি। আমি এসেছি আমার বাবার স্বপ্ন পূরণ করে দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে। আমি এটা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছিলাম।’

 

নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু করার প্রসঙ্গ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা পদ্মা সেতু করেছি। করতে পেরে দেখিয়ে দিয়েছি আমরা দুর্নীতি করি না। কিন্তু আমাদের সাহস আছে। আমরা কাজ করতে পারি। আমার দেশকে গড়তে পারি। আমি মনে করি, ওই একটা সিদ্ধান্তই আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি পরিবর্তন করে দিয়েছে।’

 

তিনি বলেন, ‘প্রত্যেকেই এখন আমাদের সঙ্গে আলাপ করতে গেলে একটু ভেবেচিন্তেই করে। কারণ, এই বাঙালিকে ৭ মার্চের ভাষণে জাতির পিতা বলেছিলেন, কেউ দাবায়ে রাখতে পারবা না। আমাদের দাবায়ে রাখতে পারবে না। বাঙালি জেগে উঠলে কিন্তু অসাধ্য সাধন করে ফেলতে পারে।’

 

প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘আমি এটা বিশ্বাস করি যে, দেশের জনগণের সেবা করাটাই হচ্ছে সব থেকে বড় কাজ। আজকের যে বাংলাদেশ, এর গতিধারাটা যেন অব্যাহত থাকে আমার এটুকুই দাবি। এই গতি যেন থেমে না যায়।’ সমাপনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version