-->

রাজধানীতে ভোগান্তি বেড়েছে ইচ্ছেমতো ‘ক্রসিং’ ও ‘ইউটার্নে’

নিজস্ব প্রতিবেদক
রাজধানীতে ভোগান্তি বেড়েছে ইচ্ছেমতো ‘ক্রসিং’ ও ‘ইউটার্নে’

যানজটের নগরী ঢাকা। প্রতিদিনই রাজধানীবাসির কয়েক কর্মঘণ্টা নষ্ট করে এই যানজট। নগরবাসীকে যানজট থেকে মুক্তি দিতে, সড়কে নির্বিঘ্নে যান চলাচল রাখতে রাজধানীতে নতুন নতুন প্রজেক্ট পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছে ঢাকা উত্তর এবং দক্ষিণ সিটি করপোরেশন।

 

এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলেও যানজট ও সড়কের বিশৃঙ্খলা থেকে কিছুতেই রেহাই পাচ্ছেন না সাধারণ মানুষ।

 

দেখা গেছে, এসব উন্নয়ন পরিকল্পনার নামে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে যে কর্মযজ্ঞ চলছে— অনেক ক্ষেত্রে তা নগরবাসীর দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে যানজট নিরসনের লক্ষ্যে যেসব ‘ক্রসিং’ ও ‘ইউটার্ন’ বন্ধ করে দিয়ে নতুন ইউটার্ন নির্মাণ করা হয়েছে, সেগুলোর ফলাফল খুব একটা কাজে আসেনি। পর্যাপ্ত জায়গা না নিয়ে এসব ইউটার্ন নির্মাণ করায় যানজট রয়ে গেছে আগের মতোই।

 

ফলে অপরিকল্পিত এসব ইউটার্ন নগরে নতুন করে যানজট সৃষ্টি করছে বলে নগরবাসীর অভিযোগ।

 

রাজধানীর সাতমসজিদ রোডের পিলখানা গেট থেকে মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত নতুন করে সড়ক বিভাজন তৈরি করছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। আর এটা করতে গিয়ে সড়কের বেশিরভাগ ইউটার্ন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সংস্থাটির চলমান এই প্রকল্পের কারণে শৃঙ্খলার বদলে জেঁকে বসেছে বিশৃঙ্খলা।

 

স্থানীয় বাসিন্দা, রিকশা, সিএনজি অটোরিকশা, প্রাইভেটকার ও বাসচালক এবং এ এলাকায় আগত মানুষের অভিযোগ, সকাল-বিকাল তীব্র যানজট সৃষ্টি হচ্ছে সাতমসজিদ রোডে। অনেক পথ ঘুরে ইউটার্নে পৌঁছাতে হচ্ছে। ফলে অতিরিক্ত সময় ও অর্থ দুটোই ব্যয় হচ্ছে তাদের।

 

গত ৪ বছর ধরে ধানমন্ডি এলাকার বিভিন্ন সড়কে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে দায়িত্ব পালন করে আসছেন ট্রাফিক পুলিশের উপ-পরিদর্শক (টিএসআই) খবির উদ্দিন। তিনিসহ ট্রাফিকের পাঁচ জনের একটি টিম দায়িত্ব পালন করছিলেন সাতমসজিদ রোডে ৩/এ সড়কের ইউটার্নের সামনে।

 

উল্টোপথে গাড়ি আসা, ইউটার্নে যানজট সৃষ্টি—এমন নানা বিশৃঙ্খলা সামলাতে হিমশিম খেতে দেখা যায় তাদের। ঝিগাতলা থেকে বের হয়ে সামনে ক্রসিং না থাকায় উল্টোপথে গাড়ি নিয়ে আসা কয়েকজনকে জরিমানা করতেও দেখা গেছে।

 

ট্রাফিক পুলিশের সদস্য খবির উদ্দিন বলেন, ‘নতুন করে রোড ডিভাইডার নির্মাণের পর সবচেয়ে বড় সমস্যা উল্টোপথে গাড়ি চলাচল। কাছে কোনও ইউটার্ন খুঁজে না পাওয়ায় চালকরা ঘুরে না গিয়ে উল্টোপথে আসছেন। ফলে মুহূর্তে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে।’

 

রিকশাচালক আব্দুস সালাম বলেন, ‘গত ১০ বছর ধরে এ রোডে রিকশা চালাই। আগে অনেক কাটাপথ ছিল। ভেতরের গলি থেকে বের হয়ে সহজে বড় রাস্তা পার হতে পারতাম। এখন অনেক পথ ঘুরে যেতে হয়। যাত্রীদের কাছে বেশি ভাড়া চাইলে অনেকে দিতে চান না। এমন তো আগে ছিল না। দ্রুত যাওয়ার জন্য অনেক যাত্রী উল্টোপথে যেতে বলেন। তখন সমস্যা হয়, পুলিশ ধরে গাড়ি উল্টিয়ে রাখে।’

 

রাজধানীতে যানজট নিরসনে ২০২১ সালের ৩ এপ্রিল তেজগাঁওয়ের শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ সরণি, বিমানবন্দর সড়ক ও উত্তরা হাউজ বিল্ডিং পর্যন্ত বিভিন্ন সড়কে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) ১০টি ইউটার্ন চালু করেছিল। এসব ইউটার্ন পর্যাপ্ত জায়গা নিয়ে নির্মাণ না করায় সড়কে প্রায়ই যানজট লেগে থাকে।

 

বিশেষ করে মহাখালী বাস টার্মিনালের সামনে, তেজগাঁও নাবিস্কো মোড় এবং সাত রাস্তার বিজি প্রেস এলাকায় ইউটার্নগুলোতে যানজট লেগেই থাকে। অতিরিক্ত যানজটের কারণে তেজগাঁও ট্রাফিক বিভাগ ইতোমধ্যে বন্ধ করে রেখেছে সাত রাস্তার বিজি প্রেস এলাকার ইউটার্নটি।

 

এ প্রসঙ্গে ডিএমপির তেজগাঁও ট্রাফিক বিভাগের ডিসি মো. সাহেদ আল মাসুদ বলেন, ‘ইউটার্নগুলো পর্যাপ্ত জায়গা নিয়ে নির্মাণ করা হয়নি। রাস্তার চারপাশে বড় বড় বিল্ডিং।

 

সুতরাং, রাস্তার মাঝখানে ইউটার্নগুলো নির্মাণ করা হয়েছে। ফলে রাস্তার একপাশ সরু হয়ে গেছে। এতে যানজট কমেনি। এ এলাকায় অতিরিক্ত যানজটের কারণে আমরা ইতোমধ্যে সাত রাস্তার বিজি প্রেস এলাকার ইউটার্নটি বন্ধ করে রেখেছি। বিষয়টি কর্তৃপক্ষকেও জানানো হয়েছে।’

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version