-->
শিরোনাম

আগামী ২৪ মে বিশিষ্ট রাজনীতিক ব্যারিস্টার সালেহ্উদ্দিনের ৪০তম মৃত্যুবার্ষিকী

নিজস্ব প্রতিবেদক
আগামী ২৪ মে বিশিষ্ট রাজনীতিক ব্যারিস্টার সালেহ্উদ্দিনের ৪০তম মৃত্যুবার্ষিকী

আগামী ২৪ মে বুধবার মহান ভাষা আন্দোলনের ভাষাসৈনিক, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, জাতীয় পরিষদ সদস্য(এমএনএ), গণপরিষদ সদস্য (এমসিএ), বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ সদস্য(এমপি), বাংলাদেশ জাস্টিস পার্টির প্রতিষ্ঠাতা বিশিস্ট রাজনীতিক ও পার্লামেন্টারিয়ান মরহুম ব্যারিস্টার সৈয়দ কামরুল ইসলাম মোহাম্মদ সালেহ উদ্দিনের ৪০তম মৃত্যুবার্ষিকী পালনে ব্যাপক আয়োজন করেছে ব্যারিস্টার সালেহ্উদ্দিন স্মৃতি সংসদ ।

 

ব্যারিস্টার সালেহউদ্দিন গত ২রা জুলাই ১৯৩৭ ফরিদপুরের গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে মাতুলালয়ে জন্মগ্রহণ করেন। অবিভক্ত ভারতবর্ষের কম্যুনিস্ট পার্টির সদস্য হিসাবে রাজনৈতিক সংগ্রাম শুরু করেন। বাবা সৈয়দ মোহাম্মদ আব্দুল হালিম ছিলেন অল বেঙ্গল মুসলিম স্টুডেন্ট এসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং দাদা সৈয়দ আব্দুল করিম অবিভক্ত ভারতবর্ষে কংগ্রেসের রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন।

 

তিনি ১৯৫২’র মহান ভাষা আন্দোলনে রাজবন্দী হিসাবে ১৯৫৩ বরিশালের তৎকালীন বিএম ইন্সটিটিউট থেকে ম্যাট্রিকুলেশন, ১৯৫৬ রাজবন্দী হিসাবে বাগেরহাটের পিসি কলেজ থেকে আইএ, ১৯৫৯ সালে যশোরের মাইকেল মধূসুদন কলেজ থেকে বিএ পাশ করে ১৯৬৩ লন্ডন গমন করেন এবং ইনার টেম্পল থেকে ১৯৬৮ ব্যারিস্টারী পাশ করে ১৯৬৯ কুইন্স কাউন্সিলর (কিউসি) নির্বাচিত হয়ে ব্রিটিশ হাইকোর্টের কুইন্সবেঞ্চ ডিভিশনে আইনপেশা শুরু করেন। তিনি ব্রিটিশ সিভিল সাভির্সের একজন সদস্য ছিলেন।

 

ছাত্রজীবন থেকে সক্রিয় রাজনীতির সাথে যুক্ত ব্যারিস্টার সালেহ্উদ্দিন রাজনৈতিক কারনে মাত্র ১৩ বছর বয়সে কারারুদ্ধ হন। ১৯৫২ বরিশাল টাউন ইয়ূথলীগের সম্পাদক নির্বাচিত হন। তিনি পূর্ব-পাকিস্থান ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটিতে ভূমিকা পালন করেন। ৫২’র ভাষা আন্দোলনে ঢাকায় পুলিশের গুলিবর্ষনের প্রতিবাদে ২২ ফেব্রুয়ারী ১৯৫২ বরিশাল শহরের এক প্রতিবাদ মিছিল থেকে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে।

 

তিনি লন্ডনে প্রবাসী বাঙালী ছাত্রসংগঠন“পাক ইয়ূথ ফেডারেশন” গঠন করেন এবং তাঁর নেতৃত্বে প্রবাসী ছাত্র-জনতা ১৯৬৮’র ৭ই জুলাই লন্ডনস্থ পাকিস্থান হাইকমিশন ভবন দখল করে অসহযোগ আন্দোলনের উপর জনমত গড়ে তুলেন। ১৯৬৮ তিনি “The Right of East Pakistan Defense Front” গঠন করে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন এবং তাঁর উদ্যোগে ব্রিটিশ এমপি ও কুইন্স কাউন্সিলর স্যার টমাস উইলিয়ামকে তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্থানে শেখ মুজিবর রহমানকে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা থেকে আইনী সুরক্ষার জন্য প্রেরন করেন।

 

স্বাধিকার আন্দোলনে যোগদানের জন্য ব্রিটিশ সরকারের লোভনীয় চাকুরী ছেড়ে তিনি দেশে ফিরে ১৯৭০ আওয়ামী লীগের টিকিটে তৎকালীন ফরিদপুর-২ থেকে জাতীয় পরিষদ সদস্য (এমএনএ) নির্বাচিত হন। ১৯৭১’এ মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে মুক্তিযুদ্ধের প্রাথমিক পর্যায়ে অন্যতম সংগঠকের ভূমিকা পালন করেন। ২৬ মার্চ ১৯৭১ তাঁর নেতৃত্বে ছাত্র-জনতা বৃহত্তর ফরিদপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয় ও পুলিশ সুপার কার্যালয়ে পাকিস্থানী পতাকা নামিয়ে স্বাধীণ বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন।

 

তিনি ১৮ মার্চ ১৯৭১ ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারী ডাকবাংলোর সামনে বিশাল জনসমাবেশে স্বাধীণ বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করে তাঁর এলাকায় মুক্তিযুদ্ধের সূচণা করেন। মুক্তিযুদ্ধকালীন মুজিবনগর সরকারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে বিভিন্ন মুক্তিযুদ্ধ ক্যাম্প তত্বাবধান করেন ও রাজনৈতিক প্রশিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭২ গণপরিষদের সদস্য(এমসিএ) হিসাবে বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নে দ্বায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করে সংবিধানে স্বাক্ষরদান করেন।

 

১৯৭৩’র প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফরিদপুর-৩ (বর্তমান ফরিদপুর-১) থেকে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য(এমপি) নির্বাচিত হয়ে মওলানা ভাসানীর ন্যাপে যোগদান করে সংসদে বিরোধীদলের ভূমিকা করেন। ২১ সেপ্টেম্বর ১৯৮১ তিনি বাংলাদেশ জাস্টিস পার্টি প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি অত্যন্ত সৎ, নির্ভিক, প্রচারবিমুখ,সহজ-সরল জীবনযাপনকারী ছিলেন। গত ১৯৮৩ সাল ২৪ মে তৎকালনি ঢাকার পিজি হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন। বনানী কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়। মরহুমের স্মৃতিকে সংরক্ষণের লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ব্যারিস্টার সৈয়দ কামরুল ইসলাম মোহাম্মদ সালেহউদ্দিন টেকনিক্যাল কলেজ।

 

তাকে নিয়ে ব্যারিস্টার সালেহউদ্দিন:জীবন ও রাজনীতি গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়েছে। এ উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ জাস্টিস পার্টি’সহ বিভিন্ন সামাজিক-রাজনৈতিক সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচী গ্রহণ করেছে। স্মৃতি সংসদের উদ্যোগে ১৪৮ উত্তর বাসাবোতে বাদ-আসর এক দোয়া মাহফিল, ফরিদপুর জেলার মধুখালী উপজেলার বনমালিদিয়া শাহ সৈয়দ হাবিবুল্লাহ মাজার মসজিদ ও ঢাকার বনানী কবরস্থানে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।

 

ভোরের আকাশ/নি 

 

মন্তব্য

Beta version