-->
শিরোনাম

জাতীয় কবি নজরুলের জন্মদিন আজ

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ
জাতীয় কবি নজরুলের জন্মদিন আজ

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: গাহি সাম্যের গান/ মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহীয়ান! কিংবা আরতির থালা তসবির মালা/আসিবে না কোন কাজে/মানুষ করিবে মানুষের সেবা/আর সব কিছু বাজে। অথবা বিশ্বের যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর/অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর। আজো মধুরো বাঁশরী বাজে।

 

বিদায়, হে মোর বাতায়ন-পাশে নিশীথ জাগার সাথী / ওগো বন্ধুরা, পান্ডুর হ’য়ে এল বিদায়ের রাতি!। এসব সাম্যর কথা, প্রেমের কথা, মানুষের কথা, অভিমানের কথা যিনি বলেছেন তিনি কবি কাজী নজরুল ইসলাম।

 

বিংশ শতাব্দীর অন্যতম জনপ্রিয় বাঙালি কবি, ঔপন্যাসিক, নাট্যকার, সঙ্গীতজ্ঞ কাজী নজরুল ইসলাম। বাংলা সাহিত্য, সমাজ ও সংস্কৃতির অন্যতম শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব এ কবি পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ দুই স্থানেই সমানভাবে সমাদৃত। তার কবিতায় বিদ্রোহী মনোভাবের কারণে তাকে বিদ্রোহী কবি বলে আখ্যায়িত করা হয়।

 

বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের অন্যতম সেই প্রাণপুরুষের জন্মদিন আজ। আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মদিন। ১৩০৬ বঙ্গাব্দের (ইংরেজি ১৮৯৯, ২৪ মে) এদিনে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে তার জন্ম। বাঙালির আবেগ-অনুভূতিতে জড়িয়ে থাকা চিরবিদ্রোহী এ কবির ১২৪তম জন্মজয়ন্তী আজ। তিনি বেঁচেছিলেন ৭৭ বছর। জন্মের পর থেকে মাত্র ৪৩ বছর বয়স পর্যন্ত স্বাভাবিক জীবন কাটিয়েছেন।

 

এর মধ্যে সাহিত্য রচনার কাল ছিল মাত্র ২৪ বছর। তারপরও বাঙালির জীবনে নজরুলের দিগন্তবিস্তারি প্রভাব! মানবতাবাদী কবি নজরুল একুশ শতকে এসে হয়ে উঠেছেন মনুষ্যত্বের কবি। যখন দেশে দেশে সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গিবাদ, ধর্মীয় কুসংস্কার বাড়ছে। তার বিপরীতে অসাম্প্রদায়িক ও মানবতার কবি নজরুল চর্চার বিকল্প নেই।

 

আমাদের প্রতিদিনের জীবনে যেমন রবীন্দ্রনাথকে ছাড়া চলে না, তেমনি নজরুলকে ছাড়াও প্রকৃত বাঙালির একদিন ভাবা যায় না। এখনো নজরুলের কবিতা, তার ছড়া, গান প্রতিদিন মানুষের মুখে মুখে ফেরে।

 

কাজী নজরুল ইসলামের বাবার নাম কাজী ফকির আহমেদ, মা জাহেদা খাতুন। দরিদ্র পরিবারে জন্মের পর দুঃখ-দারিদ্র্য ছিল তার নিত্যসঙ্গী। তার ডাকনাম ছিল দুখু মিয়া। বাবার অকাল মৃত্যুতে পরিবারের ভরণপোষণের জন্য তিনি শিশু বয়সেই মক্তবে শিক্ষকতা, হাজি পালোয়ানের মাজারে খাদেম, মসজিদে মুয়াজ্জিনের কাজ করেন। তবে নিজের দুঃখ নিয়ে নয়, তিনি জাতির দুঃখ-ক্লেশ, দৈন্য-লজ্জা ঘোচানোর জন্য ভাবতেন সবসময়।

 

তাকে বলা হয় বিশ শতকের বিশ ও ত্রিশের দশকে উপমহাদেশের অবিভক্ত বাংলার সাংস্কৃতিক জগতে সবচেয়ে বর্ণাঢ্য ব্যক্তিত্ব। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ব্যর্থ অনুকরণ ও অনুসরণের কৃত্রিমতা থেকে আধুনিক বাংলা কবিতাকে মুক্ত করার ক্ষেত্রে তার ভূমিকা ছিল সবচেয়ে সফল।

 

তিনিই রবীন্দ্র-উত্তর বাংলা সাহিত্যে আধুনিকতার পথিকৃৎ। নজরুল তার কবিতা, গান ও উপন্যাসে পরাধীন ভারতে বিশেষ করে অবিভক্ত বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতা, সামন্তবাদ, সাম্রাজ্যবাদ ও উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন।

 

কোমল আর কঠিনে মেশানো এক অপূর্ব ব্যক্তিত্ব কাজী নজরুল ইসলাম। প্রেমে পূর্ণ, বেদনায় নীল। আবার প্রতিবাদে ঊর্মিমাতাল। তিনি আমাদের অনন্ত প্রেরণার উৎসও। বাংলার মানুষের সবচেয়ে কাছের, প্রাণের মানুষ তিনি। স্বাধীনতার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্যোগে অসুস্থ কবিকে সপরিবারে বাংলাদেশে নিয়ে আসা হয়।

 

বঙ্গবন্ধু কাজী নজরুল ইসলামকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদান করেন। পরে তাকে জাতীয় কবি হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version