-->
শিরোনাম

ফের দূষিত শহরের তালিকায় শীর্ষে ঢাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক
ফের দূষিত শহরের তালিকায় শীর্ষে ঢাকা

ফের বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত বায়ুর মানের তালিকায় আবারও শীর্ষে উঠে এসেছে বাংলাদেশির রাজধানীর নাম। রোববার দূষিত শহরের তালিকায় শীর্ষে উঠে এসেছে ঢাকা।

 

জানা যায রোববার সকাল সাড়ে আটটায় এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (একিউআই) স্কোর ১৭৯ নিয়ে ঢাকার বাতাসের মান ‘অস্বাস্থ্যকর’অবস্থায় আছে। আগেরদিন শনিবার (২৭ মে) ৯২ স্কোর নিয়ে ঢাকার অবস্থান ছিল ১২তম।

 

ভারতের দিল্লি ও ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তা যথাক্রমে ১৬২ ও ১৫৯ একিউআই নিয়ে দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে রয়েছে। সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বায়ুর মান পর্যবেক্ষণকারী প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠান আইকিউ এয়ার এ তালিকা প্রকাশ করেছে।

 

একিউআই স্কোর ১০১ থেকে ২০০ হলে সেটিকে খারাপ বলে গণ্য করা হয়। একইভাবে, ২০১ থেকে ৩০০ এর মধ্যে একিউআই স্কোরকে ‘খারাপ’ বিবেচনা করা হয়। এছাড়া ৩০১ থেকে ৪০০ এর স্কোর ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ বলে বিবেচিত হয়। আর ঝুঁকিপূর্ণ একিউআই স্কোর বাসিন্দাদের জন্য গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে।

 

প্রতিদিনের বাতাসের মান নিয়ে তৈরি করা একিউআই সূচক একটি নির্দিষ্ট শহরের বাতাস কতটুকু নির্মল বা দূষিত সে সম্পর্কে মানুষকে তথ্য দেয়। সেই সঙ্গে তাদের জন্য কোন ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হতে পারে তা জানায়। বাংলাদেশে একিউআই নির্ধারণ করা হয় দূষণের পাঁচটি ধরনকে ভিত্তি করে- বস্তুকণা (পিএম১০ ও পিএম২.৫), এনও২, সিও, এসও২ এবং ওজোন (ও৩)।

 

রাজধানী ঢাকা দীর্ঘদিন ধরে বায়ু দূষণের কবলে। এখানকার বাতাসের গুণমান সাধারণত শীতকালে অস্বাস্থ্যকর হয়ে যায় এবং বর্ষাকালে কিছুটা ভালো থাকে। ২০১৯ সালের মার্চে পরিবেশ অধিদফতর ও বিশ্বব্যাংকের একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ঢাকার বায়ু দূষণের তিনটি প্রধান উৎস হলো ইটভাটা, যানবাহনের ধোঁয়া ও নির্মাণাধীন ধুলো।

 

এ অবস্থায় শিশু, প্রবীণ ও অসুস্থ রোগীদের বাড়ির ভেতরে এবং অন্যদের বাড়ির বাইরের কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়। এ পরিমাণে বায়ুদূষণ গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে।

 

এর আগে ২০১৯ সালের মার্চ মাসে পরিবেশ অধিদপ্তর (ডিওই) এবং বিশ্বব্যাংকের একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ঢাকার বায়ুদূষণের তিনটি প্রধান উৎস হলো ইটভাটা, যানবাহনের ধোঁয়া ও নির্মাণাধীন স্থাপনার ধুলা। সাধারণত জুনের মাঝামাঝিতে বর্ষাকাল শুরু হলে ঢাকার বাতাস সতেজ হতে শুরু করে। জুন থেকে অক্টোবর পর্যন্ত বায়ু নির্মল থাকে।

 

শুধু বাংলাদেশেই নয়, বায়ুদূষণ বিশ্বব্যাপী মৃত্যু ও অক্ষমতার শীর্ষ ঝুঁকির কারণগুলোর মধ্যে একটি। দূষিত বাতাসে দীর্ঘদিন শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণের ফলে হূদরোগ, দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসযন্ত্রের রোগ, ফুসফুসের সংক্রমণ এবং ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায় বলে বিভিন্ন গবেষণায় স্বীকৃত হয়েছে।

 

ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন (ডব্লিউএইচও) জানায়, বায়ুদূষণের কারণে প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী আনুমানিক ৭০ লাখ মানুষ মারা যাচ্ছে, যা মূলত স্ট্রোক, হূদরোগ, ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ, ফুসফুসের ক্যান্সার ও তীব্র শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণের কারণে হচ্ছে।

 

তখন শিকাগো ইউনিভার্সিটির এনার্জি পলিসি ইনস্টিটিউট প্রকাশিত সর্বশেষ ‘এয়ার কোয়ালিটি লাইফ ইনডেক্স’-এর প্রকাশিত তথ্যে বলা হয়, বায়ুদূষণের কারণে ঢাকায় বসবাসরত মানুষের গড় আয়ু কমেছে প্রায় সাত বছর সাত মাস। আর সারা দেশের মানুষের কমেছে পাঁচ বছর চার মাস।

 

লাইফ ইনডেক্সের তথ্যমতে, বায়ুদূষণের কারণে সারা বিশ্বে মানুষের গড় আয়ু কমেছে দুই বছর দুই মাস। স্থায়ীভাবে দূষণ বন্ধ করা গেলে বিশ্বের মানুষের গড় আয়ু ৭২ থেকে ৭৪ বছর হতো, যা সার্বিক হিসাবে ১৭ বিলিয়ন জীবন-বর্ষ। নির্মল বায়ুর জন্য স্থায়ী কোনো নীতি যেটি জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমাতে পারে, সেটা গড় আয়ু বাড়ানোর পাশাপাশি জলবায়ুর ইতিবাচক পরিবর্তনে ভূমিকা রাখতে পারে বলে গবেষকরা মনে করেন। তারা এ ক্ষেত্রে উদাহরণ হিসেবে চীনকে উল্লেখ করে বলেছে, ২০১১ সালের তারা যে নীতি গ্রহণ করেছে, তাতে তাদের গড় আয়ু বেড়েছে আড়াই বছর।

 

বিশেষজ্ঞদের মতে, ঢাকার ভয়ানক ধুলো দূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য কর্তৃপক্ষকে একটি বিশেষ কর্মপরিকল্পনা তৈরি করতে হবে। কেননা প্রতি বছর শীতকালে, বিশেষ করে নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বায়ুদূষণের পরিমাণ আরো বেড়ে যায়। যা নগরবাসীর মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করছে। শীতের আগমনের সঙ্গে সঙ্গে শহরের বাতাসের গুণমানের দ্রুত অবনতি ঘটতে থাকে।

 

নির্মাণাধীন স্থাপনা, ভাঙাচোরা রাস্তা, ইটভাটা এবং অন্যান্য উৎস থেকে দূষিত কণা প্রচুর পরিমাণে বাতাসে মিশে যাওয়ার কারণে এমন হচ্ছে। ধুলো দূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য শহরের রাস্তাগুলোয় নিয়মিত পানি ছিটিয়ে দেয়া এবং শহরে অযোগ্য মোটরযানের চলাচল বন্ধ করার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

 

একই সঙ্গে, সব নির্মাণাধীন সাইট আচ্ছাদিত করে রাখার জন্য সরকারকে অনুরোধ করেন তারা।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version