-->
শিরোনাম

জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশন শুরু আজ

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ
জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশন শুরু আজ

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: একটি দেশের সরকারের যে কর্মকান্ডের ওপর সব মহলের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি থাকে তা হলো জাতীয় বাজেট।

 

এখানে নতুন কী থাকছে, কোন জিনিসের দাম বাড়ছে, কোন পণ্যের কমছে সেদিকে থাকে সাধারণ মানুষের মূল আগ্রহ। বরাবরই বাজেট অংকের হিসাবে যতটা না মনোযোগ পায়, তার চেয়ে বেশি মনোযোগ থাকে বাজারদরের ওপর। বাজেট ঘিরে তৈরি হয় রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিপক্ষকে আক্রমণের মোক্ষম সময়।

 

সরকারি দল বলে উন্নয়নের বাজেট, বিরোধী দল বলে গরিব মারার বাজেট। প্রতি বছর এসব বিষয় মাথায় রেখেই পেশ করা হয় নতুন বাজেট। এর জের ধরে আজ বাংলাদেশে আরো একটি বাজেট পেশ করা হবে।

 

বাংলাদেশের ৫২তম এবং আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের ২৪তম বাজেট পেশ হবে। রাষ্ট্রপতি এরই মধ্যে জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশন ডেকেছেন। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের তুলনায় নতুন অর্থবছরের বাজেটের আকার হবে ১২ শতাংশ বেশি।

 

সর্বশেষ ২০২২ সালের ৯ জুন অর্থমন্ত্রী ২০২৩ সালের ৩০ জুন শেষ হতে যাওয়া চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বাজেট জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করেছিলেন।

 

তাজউদ্দীন আহমদ ১৯৭২ সালের ৩০ জুন একই সঙ্গে ১৯৭১-৭২ ও ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করেছিলেন। আর এ বছর নতুন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল দেশের ৫২তম বাজেট উপস্থাপন করবেন।

 

২০২৩-২৪ অর্থবছরের এ বাজেটকে বলা হচ্ছে নির্বাচনী বাজেট। নানা কারণে এবারের বাজেট গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। বাজেট কেমন হবে, তা নিয়ে এখনই চলছে আলোচনা। সংশ্লিষ্টদের মতে, বাজেটে নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। তবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ থাকবে প্রধান চ্যালেঞ্জ।

 

এছাড়া রাজস্ব আদায় বাড়ানো, আইএমএফসহ উন্নয়ন সহযোগীদের দেয়া বিভিন্ন সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়ন ও উচ্চ প্রবৃদ্ধি বজায় রাখা এবারের বাজেটের মূল চ্যালেঞ্জ হিসেবে থাকছে। এগুলো মোকাবিলা ও সমন্বয় করে নির্বাচনের বছরে কীভাবে ব্যয় সমন্বয় করা যাবে, তা নিয়ে বাজেটের কাজ প্রায় চূড়ান্ত করছে অর্থ মন্ত্রণালয়।

 

জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও আগামী বছরের জন্য চূড়ান্ত করা বাজেটে অনুমোদন দিয়েছেন। আজ জাতীয় সংসদে সরকারের ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার জাতীয় বাজেট পেশ করবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

 

জানা গেছে, এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকার ব্যয়সংবলিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) অনুমোদন দেয়া হয়েছে। নতুন এডিপি চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপির তুলনায় প্রায় ১৬ শতাংশ বেশি এবং মূল এডিপির তুলনায় ৭ শতাংশ বেশি।

 

অন্যান্য বছরের মতো এ বছরও দেশের সম্পদ, বৈদেশিক অর্থায়ন ও সামষ্টিক অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের এডিপি প্রণয়ন করা হয়েছে।

 

এদিকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, আজ অনুষ্ঠিত হবে মন্ত্রিসভার বিশেষ বৈঠক। জাতীয় সংসদ ভবনের মন্ত্রিপরিষদ সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত হবে এই বিশেষ বৈঠক। মন্ত্রিসভার বিশেষ বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মন্ত্রিসভার বিশেষ বৈঠকে নতুন অর্থবছরের বাজেট অনুমোদন দেয়া হবে।

 

মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত নতুন অর্থবছরের বাজেটে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন জাতীয় সংসদে উপস্থাপনের জন্য সম্মতিসূচক স্বাক্ষর করবেন। রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের পরই অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালকে সঙ্গে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদের অধিবেশন কক্ষে প্রবেশ করবেন। পরে স্পিকারের অনুমতিসাপেক্ষে জাতীয় সংসদে সরকার আগামী অর্থবছরের জাতীয় বাজেট উপস্থাপন করবে।

 

অন্যদিকে দেশের ইতিহাসে দ্বিতীয়বার ১ জুন বাজেট উপস্থাপন করা হচ্ছে জাতীয় সংসদে। এর আগে প্রয়াত অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত ২০১৭-১৮ অর্থবছরের ৪ লাখ ২৬৬ কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করেছিলেন ১ জুন। অর্থমন্ত্রী হিসেবে তাজউদ্দীন আহমদ দেশের প্রথম বাজেট (৭৮৬ কোটি টাকা) জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করেছিলেন ৩০ জুন।

 

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, গত এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আর্থিক, মুদ্রা ও মুদ্রা বিনিময় হার সংক্রান্ত সমন্বয় কাউন্সিলের ২০২২-২৩ অর্থবছরের দ্বিতীয় বৈঠক ও সম্পদ কমিটির বৈঠকে আগামী বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৭.৫ ধরার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। তবে বাজেট চ‚ড়ান্ত করার আগে বাজেট ঘাটতি একটু বাড়িয়ে ৫.৩ শতাংশ এবং প্রবৃদ্ধির হার একটু কমিয়ে ৭.৩ শতাংশ করা হতে পারে।

 

জানা গেছে, সার্বিকভাবে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সরকারের সুদ ব্যয়ে বরাদ্দ থাকছে ১ লাখ ২ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে ভর্তুকিতে বরাদ্দ রয়েছে ১ লাখ ২ হাজার কোটি টাকা।

 

আগামী অর্থবছরে এটি বাড়িয়ে ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা করা হতে পারে। বিপুল ভর্তুকির মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে বরাদ্দ থাকছে ৩৩ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের বাজেটে বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকিতে ১৭ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল, পরে সংশোধিত বাজেটে তা বাড়িয়ে ২৩ হাজার কোটি টাকা করা হয়েছে।

 

আগামী অর্থবছরে কৃষি খাতে ভর্তুকিতে ১৭ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ থাকছে। চলতি অর্থবছরের বাজেটে যা ছিল ১৬ হাজার কোটি টাকা। এদিকে জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। সরকারের শেষ বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় নতুন করে ৭ লাখ ৩৫ হাজার জন বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধীকে অন্তর্ভুক্তির সিদ্ধান্তের কথা অবহিত করা হয়।

 

চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরের জন্য তা বাড়িয়ে ৫ লাখ কোটি টাকা করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকেই (এনবিআর) সংগ্রহ করতে হবে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version