দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে ৩০০ আসনে সীমানা নির্ধারণের চূড়ান্ত গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে। এতে মাত্র ১০টি আসনের সীমানায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। ৩০০ আসনের বাকিগুলোতে সীমানায় কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি।
যে ১০টি আসনের সীমানায় পরিবর্তন এসেছে, সেগুলো হলো পিরোজপুর-১ ও ২, কুমিল্লা-১ ও ২ ফরিদপুর-২ ও ৪ এবং নোয়াখালী- ১ ও ২ আসন এবং গাজীপুর ২ ও গাজীপুর ৫। এর মধ্যে চারটি আসনের সীমানায় এসেছে বড় পরিবর্তন।
শনিবার নির্বাচন কমিশন সচিব জাহাঙ্গীর আলম স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন গেজেট আকার জারি হয়েছে।
গেজেট বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, নির্বাচন কমিশন সীমানা নির্ধারণ আইনের ধারা ৬-এর উপ-ধারা (৪) অনুযায়ী দাবি/আপত্তি/সুপারিশ/মতামত দরখাস্তসমূহের তথ্যাবলি পর্যালোচনা করে এবং শুনানিকালে উপস্থাপিত তথ্য ও যুক্তিতর্ক বিবেচনান্তে প্রাথমিক তালিকায় প্রকাশিত নির্বাচনী এলাকার প্রয়োজনীয় সংশোধন করে জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনের পুনর্নির্ধারিত সীমানার চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করেছে।
সংসদীয় আসনের সীমানা পরিবর্তনের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর জানিয়েছেন, অল্প কয়েকটি আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে। অধিকাংশ আসনের সীমানা আগের মতোই আছে। তবে ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, ১০-১২টি আসনের সীমানায় সামান্য পরিবর্তন এসেছে।
গত ২৬ ফেব্রুয়ারি সংসদীয় আসনের সীমানার প্রাথমিক খসড়া প্রকাশ করে ইসি। সে সময় গেজেট বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, ১৯ মার্চের মধ্যে আপত্তি থাকলে উত্থাপন করতে হবে। এতে ৩৮টি আসনে মোট ১৮৬টি দাবি-আপত্তির আবেদন জমা পড়ে। পরে ৩ থেকে ১৪ মে পর্যন্ত চারটি পৃথক দিনে আবেদনগুলোর শুনানি করে নির্বাচন কমিশন। এতে ‘অল্প’ কয়েকটি আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণের সিদ্ধান্ত নেয় সংস্থাটি।
গত বছর সেপ্টেম্বরের দ্বাদশ জাতীয সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ প্রকাশ করে ইসি। সেখানে চলতি বছরের ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে আগামী জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহের মধ্যে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা বলা হয়। রোডম্যাপে অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণের কথাও বলা হয়।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, শনিবার ৩০০ আসনের চ‚ড়ান্ত সীমানা নির্ধারণের গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে। চূড়ান্ত এই সীমানার তালিকা অনুযায়ী আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
ইসির প্রকাশিত গেজেটে একাদশ সংসদ নির্বাচনের নির্ধারিত সীমানা অনুযায়ী, পিরোজপুর-১ আসনটি পিরোজপুর সদর, নাজিরপুর ও নেছারাবাদ উপজেলা নিয়ে গঠিত ছিল। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নির্ধারিত নতুন সীমানায় এই আসনটি পিরোজপুর সদর উপজেলা, নাজিরপুর ও ইন্দুরকানী উপজেলা নিয়ে গঠন করা হয়েছে।
একই সঙ্গে আগে কাউখালী, ভান্ডারিয়া ও ইন্দুরকানী উপজেলা নিয়ে গঠিত পিরোজপুর-২ সংসদীয় আসনটি নতুন সীমানা অনুযায়ী কাউখালী, ভান্ডারিয়া ও নেছারাবাদ উপজেলা নিয়ে গঠন করা হয়েছে। অর্থাৎ ইন্দুরকানী উপজেলাকে পিরোজপুর-২ আসন থেকে সরিয়ে পিরোজপুর-১ আসনে এবং নেছারাবাদ উপজেলাকে পিরোজপুর-১ আসন থেকে পিরোজপুর-২ আসনে যুক্ত করা হয়েছে।
দাউদকান্দি ও মেঘনা উপজেলা নিয়ে গঠিত কুমিল্লা-১ আসনটি নতুন সীমানায় দাউদকান্দি ও তিতাস উপজেলা নিয়ে গঠিত হলো। আগের সীমানা অনুযায়ী হোমনা ও তিতাস উপজেলা নিয়ে কুমিল্লা-২ আসনটি নতুন সীমানায় হোমনা ও মেঘনা উপজেলা নিয়ে গঠন করা হয়েছে।
নগরকান্দা ও সালথা উপজেলা এবং সদরপুর উপজেলার কৃষ্ণপুর ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত ফরিদপুর-২ আসন থেকে কৃষ্ণপুর ইউনিয়ন বাদ দিয়ে ফরিদপুর-৪ আসনের সঙ্গে। একাদশ সংসদ নির্বাচনের সীমানায় ফরিদপুর-৪ আসনটি ভাঙ্গা ও চরভদ্রাসন এবং কৃষ্ণপুর ইউনিয়ন ছাড়া সদরপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত ছিল। নতুন সীমানায় এই আসনটি ভাঙ্গা, চরভদ্রাসন ও সদরপুর উপজেলা নিয়ে গঠন করা হয়েছে।
নোয়াখালী-১ ও ২ আসনের সীমানায় একটি ইউনিয়ন রদবদল করা হয়েছে। নোয়াখালী-১ থেকে বজরা ইউনিয়ন কেটে নোয়াখালী-২ আসনের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। নোয়াখালী ১ আসনটি চাটখিল উপজেলা এবং বারগাঁও, নাটেশ্বর ও অম্বর নগর ইউনিয়ন বাদে সোনাইমুড়ী উপজেলা নিয়ে গঠিত ছিল।
এখন সেটি হলো চাটখিল উপজেলা এবং বারগাঁও, নাটেশ্বর, অম্বর নগর ও বজরা ইউনিয়ন বাদে সোনাইমুড়ী উপজেলা নিয়ে। আর সেনবাগ উপজেলা এবং সোনাইমুড়ী উপজেলার বারগাঁও, নাটেশ্বর ও অম্বর নগর নিয়ে আগে গঠিত নোয়াখালী-২ আসনটি নতুন সীমানায় সেনবাগ উপজেলা ও সোনাইমুড়ী উপজেলার বারগাঁও, নাটেশ্বর, অম্বরনগর ও বজরা ইউনিয়ন নিয়ে গঠন হয়েছে।
একাদশ সংসদের নির্বাচনী আসন অনুযায়ী গাজীপুর সিটি করপোরেশনের আওতাভুক্ত ৩৯ নম্বর ওয়ার্ড গাজীপুর ৫ আসনের অন্তর্ভুক্ত ছিল। নতুন সীমানায় ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডটি গাজীপুর-২ আসনের সঙ্গে যুক্ত করে করে ৫ আসন থেকে বাদ দেয়া হয়েছে।
ফলে নতুন নির্বাচনি সীমানা অনুযায়ী গাজীপুর-২ ও ৫ আসনে পরিবর্তন এসেছে। এর বাইরের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে নতুন গঠিত প্রশাসনিক এলাকা অন্তর্ভুক্তের ফলে আরো আটটি আসনে সাময়িক পরিবর্তন এসেছে। অবশ্য এ আটটির ক্ষেত্রে আসনগত কোনো পরিবর্তন আসেনি।
এর মধ্যে কালকিনি উপজেলা নিয়ে গঠিত মাদারীপুর-৩ আসনের সঙ্গে ডাসার উপজেলা যুক্ত হওয়ায় নতুন সীমানায় এই আসনটি হয়েছে কালকিনি ও ডাসার উপজেলা নিয়ে। ময়মনসিংহ-৪ আসনে ময়মনসিংহ সদর আসনের সঙ্গে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনকে যুক্ত করা হয়েছে। আর ধর্মপাশা, তাহিরপুর ও জামালগঞ্জ উপজেলা নিয়ে একাদশের গঠিত সুনামগঞ্জ-১ আসন ধর্মপাশা ও মধ্যনগর করায় মধ্যনগরের নাম যুক্ত হয়েছে। জগন্নাথপুর ও দক্ষিণ সুরমা উপজেলা নিয়ে গঠিত সুনামগঞ্জ-৩ আসনের দক্ষিণ সুরমার নাম পরিবর্তন করে সরকার শান্তিগঞ্জ উপজেলা করার নির্বাচনী সীমানায় এই অংশটুকু পরিবর্তন আনা হয়েছে।
সিলেট সিটি করপোরেশন ও সিলেট সদর উপজেলা নিয়ে গঠিত সিলেট-১ আসনের সদর উপজেলার একটি ইউনিয়ন এবং তিনটি ইউপির আংশিক সিটি করপোরেশনে অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় এ আসনে পরিবর্তন হয়েছে। সিলেট-২ আসনে পরিবর্তন হয়ে সিটি করপোরেশনের ২৮ থেকে ৩০ ও ৪০ থেকে ৪২ নম্বর ওয়ার্ড এবং দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত হয়েছে। কক্সবাজার সদর ও রামু উপজেলা আসন নিয়ে গঠিত কক্সবাজার ৩ আসনের সদর উপজেলা ভেঙে ঈদগাঁও নামে নতুন আরেকটি উপজেলায় করায় এই নামটিও যুক্ত হয়েছে নতুন সীমানায়।
কাজী হাবিবুল আউয়ালো নেতৃত্বাধীন ইসি ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে ২০২৪ সালের জানুয়ারির মধ্যে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করবে।
সবশেষ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে কে এম নুরুল হুদা কমিশন ২০১৮ সালের ৩০ এপ্রিল ২৫টি আসনের সীমানায় পরিবর্তন এনে গেজেট প্রকাশ করে। এর আগে ১৯৮৪ ও ১৯৯১ সালের পর ২০০৮ সালে এটিএম শামসুল হুদা কমিশন নবম সংসদ নির্বাচনের জন্য শতাধিক আসনে সীমানা পরিবর্তন আনে। এরপর কাজী রকিবউদ্দিন আহমদ কমিশন দশম সংসদ নির্বাচনে ৫০টি আসনে ছোটখাটো পরিবর্তন আনে।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য