-->
শিরোনাম

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে উজ্জীবিত নেতাকর্মী

নিখিল মানখিন
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে উজ্জীবিত নেতাকর্মী

নিখিল মানখিন: আমেরিকার নতুন ভিসানীতিকে কেন্দ্র করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত হয়েছেন বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

 

তারা বলছেন, ভিসানীতির হুঙ্কারে আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছিল চাপা উদ্বেগ। বর্তমান সরকারের অবস্থান ও পরিণতি এবং আমেরিকার পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে চলছিল আলোচনা-সমালোচনা। এমন পরিস্থিতিতে শনিবার ভিসানীতির দুশ্চিন্তা উড়িয়ে দেয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যে প্রশান্তি ফিরে পায় দলটির নেতাকর্মীরা। 

 

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিদেশি কূটনীতিকদের আনাগোনা ও আলাপচারিতায় মুখর দেশের রাজনীতির মাঠ। সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়টি উঠে আসছে বিদেশি কূটনীতিকদের আলাপচারিতায়। বাংলাদেশের ওপর অযাচিত হস্তক্ষেপ এবং বিধিনিষেধ প্রয়োগের হুমকি দিতেও দ্বিধা করছে না তারা।

 

বিদেশি কূটনৈতিক তৎপরতা মোকাবিলা করে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। দেশের স্বার্থ রক্ষায় বিদেশিদের কড়া জবাব দিতেও দ্বিধা করছে না দলটি। তিন দেশ সফর শেষে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে নিজেদের স্পষ্ট অবস্থান জানিয়ে তারই প্রমাণ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

 

পর্যবেক্ষক মহল বলছেন, ২০২২ সালের শেষের দিকে এসে যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে শতভাগ ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার অগ্নিপরীক্ষায় পড়ে বাংলাদেশ। কূটনৈতিক মহলের আলোচিত খবর ছিল র‌্যাবের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি, যা বিদায়ী বছরে দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির মাঠও উত্তপ্ত করে।

 

নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে লবিস্ট নিয়োগের কথাও বলেছিল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। কিন্তু নতুন বছরেও নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে জাতীয় নির্বাচনের আগে বাংলাদেশের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসানীতির বিষয়টি নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

 

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্রিঙ্কেন গত ২৪ মে এক বিবৃতিতে নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করেন। নতুন এই নীতির আওতায় বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত বাংলাদেশিদের ভিসা না দেয়ার কথা বলা হয়। মার্কিন সরকারের এই ভিসানীতি নিয়ে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে তুমুল আলোচনা শুরু হয়।

 

আমেরিকার এমন হুঙ্কার যেন নানা প্রশ্নের জন্ম দেয় আওয়ামী লীগ এবং তার সহযোগী সংগঠনগুলোর মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মনে। আমেরিকার হস্তক্ষেপের জবাবে বাংলাদেশ বিশেষ করে বর্তমান সরকারের অবস্থান ছিল অস্পষ্ট।

 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের মাঠ পর্যায়ের অনেক নেতাকর্মী ভোরের আকাশকে বলেন, একটি স্বাধীন দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে আমেরিকাসহ কিছু বিদেশি রাষ্ট্রের অযাচিত হস্তক্ষেপ মেনে নেয়া যায় না। আবার ভিসানীতি ঘোষণা এবং বিধিনিষেধ প্রয়োগের হুমকির পরবর্তী পরিণতির বিষয়টিও পুরোপুরি উড়িয়ে দিতে পারি না।

 

তারা বিশ্বের অনেক দেশকে নিয়ে খেলা করেছে। তাদের খেলায় বলির পাঁঠা হয়েছে অনেক দেশ। তাই হঠাৎ করে বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে আমেরিকার গর্জন অনেকটা অস্বাভাবিক ও অমঙ্গল বলে মনে হয়েছে। দলের একনিষ্ঠ নেতাকর্মী হিসেবে সাময়িক সময়ের জন্য হলেও এমন কথাবার্তা আমাদের মনে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছিল, তা উড়িয়ে দিতে পারি না।

 

ভিসানীতির জবাবে বাংলাদেশ এবং সরকারের সুস্পষ্ট অবস্থান দেখতে পাচ্ছিলাম না। কিন্তু শনিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসী বক্তব্যে আমরা সত্যিই বেশ উজ্জীবিত হয়েছি। আমরা বুঝে গেছি, বর্তমান সরকারের পায়ের তলায় এখনো শক্ত মাটি রয়ে গেছে। দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা পরবর্তী সব ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলা করব বলে অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন আওয়ামী লীগের মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।

 

আমেরিকার ভিসানীতির জবাব দিতে গিয়ে গত শনিবার বিকেলে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, কে আমাদের ভিসা দেবে না, কে আমাদের স্যাংশন দেবে, তা আমাদের চিন্তার বিষয় না। বিশ ঘণ্টা জার্নি করে আটলান্টিক পাড়ি দিয়ে আমেরিকা যাওয়ার প্রয়োজন নেই আমাদের, পৃথিবীতে আরো অনেক মহাদেশ আছে।

 

সেখানেই আমরা যাতায়াত করব। তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করব। আমাদের অর্থনীতি আরো উন্নত হবে, মজবুত হবে, আরো চাঙা হবে। আমরা নিজের পায়ে চলব। নিজের দেশকে গড়ে তুলব বলে জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

 

প্রধানমন্ত্রীর দ্ব্যর্থহীন সাহসী বক্তব্যের পর আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলও যেন প্রাণ ফিরে পেল। দীর্ঘদিন আলোচনার বাইরে থাকা ১৪ দলের নেতারা হয়ে ওঠেন দৃশ্যমান। রোববার ইস্কাটনে কেন্দ্রীয় ১৪ দলের বৈঠকে বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতিকে দুরভিসন্ধিমূলক বলে আখ্যায়িত করেন জোটের নেতারা।

 

জোটের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র এবং আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু বলেন, ‘মার্কিন ভিসানীতি অনাকাক্সিক্ষত ও অনাহূতভাবে আসায় তা অত্যন্ত দুরভিসন্ধিমূলক মনে হচ্ছে। এটা কারো কারো পক্ষে ব্যবহার করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

 

কিন্তু আমরা মনে করি, জাতি সংবিধানের প্রতিটি প্রক্রিয়া সমুন্নত রাখার জন্য ঐক্যবদ্ধ থাকবে। আমরা একটি সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন উপহার দেয়ার জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ। এ ক্ষেত্রে অন্য কোনো হস্তক্ষেপ আমরা কামনা করি না বলে জানান আমির হোসেন আমু।

 

২০ ঘণ্টা জার্নি করে আমেরিকা যাব না, অন্য দেশ ও মহাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়াব প্রধানমন্ত্রী কি চাচ্ছেন বা সরকার কি চাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যাক এমন প্রশ্নের জবাবে রোববার তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, অবশ্যই নয়। আমাদের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক অত্যন্ত চমৎকার। আমরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আরো ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক করতে চাই।

 

সে কারণে আপনারা দেখেছেন, সাম্প্রতিক সময়ে সরকার পররাষ্ট্রসহ অন্যান্য বিষয়ে অনেক ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যারা মার্কিন ভিসানীতি ঘোষণা করার পর যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিয়ে টেনশনে আছেন, তাদের টেনশন কমানোর জন্য প্রধানমন্ত্রী ওই কথা বলেছেন।

 

তিনি বলেন, আমরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আরো ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক চাই। একই সঙ্গে অন্যান্য দেশ, যেমন দক্ষিণ আমেরিকা এখনো উন্মুক্ত নয়, সেখানে আমরা বাণিজ্য খুব একটা বাড়াতে পারিনি, সেখানে আমরা বাড়াতে চাই। মধ্যপ্রাচ্যে শুধু শ্রমিক রপ্তানি করা হয়, মধ্যপ্রাচ্যে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে, ফ্যাশন সচেতনতা বেড়েছে, সেখানেও আমাদের বাণিজ্য বাড়ানো প্রয়োজন।

 

মন্ত্রী বলেন, আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোতে আমাদের বাণিজ্য সম্ভাবনা প্রচুর, সেখানেও আমরা বাণিজ্য বাড়াতে চাই। ওশেনিয়া অঞ্চলে আমাদের বাণিজ্য সম্ভাবনা প্রচুর, সেখানেও আমরা বাড়াতে চাই, প্রধানমন্ত্রী সে কথাই বলেছেন।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version