দ্রব্যমূল্য নিয়ে জনগণের কষ্ট লাঘবে উচ্চ মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেছেন, আমরা স্বীকার করে নিচ্ছি মূল্যস্ফীতি ও লোডশেডিংয়ে মানুষ কষ্টে আছে। স্বীকার করে বসে থাকলে তো হবে না। নানা কৌশল দিয়ে এটি মোকাবিলা করতে হবে। আমাদের প্রথম উদ্দেশ্যই হবে মূল্যস্ফীতি যেন আর না বাড়ে, সেটি নিশ্চিতে কাজ করা।
মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় সরকারপ্রধান এ নির্দেশনা দেন। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা। সভা শেষে প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসনগুলো তুলে ধরে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।
সভার বরাত দিয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, মূল্যস্ফীতি মোকাবিলা করতেই হবে। প্রথম উদ্দেশ্য আর যেন এটা না বাড়ে। এনাফ, নো মোর। বাজারে স্টক বাড়াতে হবে। ইমপোর্ট অথবা ইন্টারনাল প্রোডাকশন বাড়াতে হবে। দেশব্যাপী বিভিন্ন পয়েন্টে নিত্যপণ্যের স্টক বাড়াতে হবে। সংবেদনশীল আইটেম যেগুলো রাতারাতি দাম বেড়ে যায়, সেগুলোর স্টক বাড়াতে হবে। টিসিবিকে আরো জোরালোভাবে স্টক করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এ মুহূর্তে আমাদের দুটি বড় সমস্যা হচ্ছে মূল্যস্ফীতি এবং বিদ্যুৎ। এই দুটি সমস্যা সমাধানে কাজ করতে হবে। এ সময় পেঁয়াজসহ কৃষিপণ্যের জন্য আঞ্চলিক সংরক্ষণাগার নির্মাণের নির্দেশও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি কেন এত বেশি হবে। আমরা এটি নিয়ন্ত্রণের জন্য কৃষি পণ্য সংরক্ষণ করব। চাল, ডাল, তেল ইত্যাদি পণ্যের রিজার্ভ বাড়াতে হবে। এটি টিসিবির মাধ্যমে করতে হবে।
এক্ষেত্রে শুধু ঢাকায় নয়, অন্যান্য শহরগুলোতেও করতে হবে।’ একনেকে প্রধানমন্ত্রী ‘জি টু জি’ ভিত্তিতে নেয়া ঋণের ব্যবহার বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন বলেও জানান পরিকল্পনামন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘এক্ষেত্রে তাদের গাফিলতি থাকলে ভিন্ন কথা কিন্তু আমাদের দিক থেকে যেন কোনো সমস্যা না থাকে।’ সেই সঙ্গে ডলার সংকট মোকাবিলায় মিতব্যয়ী সাশ্রয়ী হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। একনেক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বেশকিছু নির্দেশনাও দেন। সেগুলো হলো প্রকল্পে সরকারি বিধিনিষেধ মেনে গাড়ি কেনা, প্রকল্প প্রস্তাবের গভীরে গিয়ে নিখুঁতভাবে মূল্যায়ন করাসহ ইত্যাদি।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘ডলার সংকট সাময়িক। আমরা আশা করি আমাদের রিজার্ভ বাড়বে।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আগামী অর্থবছরে ৬ শতাংশের মধ্যে হয়তো মূল্যস্ফীতি রাখা যাবে না। কিন্তু সরকারি উদ্যোগগুলো দ্রুত নিলে কার্যকর ফল পাওয়া যাবে।
যেমন আমাদের বাণিজ্যমন্ত্রী বললেন, দাম না কমালে পেঁয়াজ আমদানি করা হবে। কিন্তু এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে দুই সপ্তাহ সময় লাগল। যখনই আমদানির চিঠি এলো, তখনই দাম কমতে শুরু করল।’
এর আগে, মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠক হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, শুধু ঢাকায় স্টক করলে হবে না রাজশাহী, খুলনা, সিলেট, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জায়গায় সংবেদনশীল পণ্যের স্টক বাড়াতে হবে। বৈজ্ঞানিক ভিত্তিতে চাল, ডাল, আলু, তেল, পেঁয়াজ যা আছে সবকিছুর স্টক বাড়াতে হবে। এসব কৌশল দ্রুত নিতে হবে। মূল্যস্ফীতি কেন বাড়ছে গবেষণা করে এর কারণ খুঁজে বের করার নির্দেশও দিয়েছেন সরকারপ্রধান।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য