তাপপ্রবাহে পুড়তে থাকা দাবদাহ থেকে আপাতত স্বস্তির কোনো লক্ষণ নেই।
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, আগামী কয়েকদিনে তাপমাত্রা আরো বাড়তে পারে। সারা দেশের ওপর দিয়ে মে মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে শুরু হওয়ায় জ্যৈষ্ঠের এই খরতাপ আরো প্রায় এক সপ্তাহ অব্যাহত থাকতে পারে। ফলে এ মুহূর্তে স্বস্তির আভাস আবহাওয়া অফিসের কাছে নেই।
তারা জানায়, কোথাও কোথাও বৃষ্টিপাতের আভাস থাকলেও তাতে গরম কমবে না। বরং বাতাসে জলীয় বাষ্প মিশে গিয়ে দাবদাহ আরো বাড়িয়ে দেবে। এদিকে, প্রচন্ড গরমে স্বাভাবিকভাবেই জনজীবনে হাঁসফাঁস অবস্থা শুরু হয়েছে। গরমে রোগ-বালাই এড়িয়ে সুস্থ থাকা বেশ কষ্টসাধ্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। দিনের চেয়ে রাতে তাপমাত্রা আরো বেড়ে যাওয়ায় পরিস্থিতি আরো জটিল করে তুলছে।
এ অবস্থায় বিশেষজ্ঞরা সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।
তারা জানান, মে মাসের শেষ সপ্তাহ থেকেই দেশের ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে জ্যৈষ্ঠের খরতাপ। কিছুদিন পরেই প্রকৃতিতে আসছে বর্ষকাল। বর্ষার আগে ভয়াবহ দাবদাহ ভাবিয়ে তুলছে বিশেষজ্ঞদের।
তারা বলছেন, অব্যাহত তাপদাহের কারণে ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে বয়স্ক ও শিশুরা। জ্বর-ডায়ারিয়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগের তথ্য বলছে, গত কয়েক দিন ধরে তীব্র গরমে রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। এখন প্রতিদিন ৭০০-এর বেশি রোগী সেবা নিচ্ছে। এদের মধ্যে নিউমোনিয়া, জন্ডিস, শ্বাসকষ্ট, খিঁচুনি, জ্বর-কাশি, ডায়রিয়া, টাইফয়েড রোগী বেশি।
চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রচন্ড গরমের কারণে শিশুদের জ্বর, মাথাব্যথা, ভাইরাল জ্বর, ডায়রিয়া, টাইফয়েড, আমাশয় রোগের প্রকোপ বাড়ছে। এ কারণে তারা প্রচন্ড গরমে ও রোদে শিশুদের বাইরে বের হতে নিষেধ করছেন।
তারা বলেন, শিশুদের ঘামতে দেয়া যাবে না, বিশুদ্ধ খাবার ও পানি দিতে হবে। এদিকে ভ্যাপসা গরমের পাশাপাশি ভয়াবহ লোডশেডিংয়েও ভোগাচ্ছে।
তারা জানান, দুদিন আগে দেশের কয়েকটি স্থানে সামান্য বৃষ্টিপাত হয়েছে। এতে গরম না কমে উল্টো আরো বেড়ে গেছে। বৃষ্টিপাত হওয়ায় জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বাড়তে শুরু করেছে। বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বাড়লে ভ্যাপসা গরম আরো বাড়বে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদ মো. মনোয়ার হোসেন।
তিনি বলেন, চলতি সপ্তাহে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু তথা বর্ষা টেকনাফ উপক‚লে পৌঁছাতে পারে। সেক্ষেত্রে বাড়বে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা। এই সময়ে তাপপ্রবাহের সঙ্গে থাকবে ভ্যাপসা গরমও। তবে কোথাও কোথাও বজ্রসহ বৃষ্টি হলে সাময়িকভাবে গরম কমবে।
আবহাওয়া বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, প্রশান্ত মহাসাগরের তাপমাত্রার ওপর সারা পৃথিবীর আবহাওয়া নির্ভর করে। সেখানে তাপমাত্রা বেশি থাকলে তাকে ‘এল নিনো’ বলি। আর তাপমাত্রা কম থাকলে বলা হয় ‘লা নিনা’। আমরা এখন ‘এল নিনো’ ফেজে ঢুকছি। আগামী জুলাই মাসে পুরোপুরি এই ফেজে ঢুকে যাব। এ অবস্থা কখনো তিন বছর, কখনো পাঁচ বছর কখনো আবার সাত বছর স্থায়ী হয়।
অর্থাৎ ওইদিকে ঠান্ডা বেশি থাকলে এশিয়ার এদিকে গরম বেশি থাকে।
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, দেশের ৬০টি জেলার ওপর দিয়ে মৃদু থেকে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। তবে চট্টগ্রাম ও সিলেটের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি ও বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।
সংস্থাটি জানায়, রাজশাহী ও পাবনার ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। চট্টগ্রাম, রাঙামাটি, কুমিল্লা, চাঁদপুর, নোয়াখালী ও বান্দরবানসহ ঢাকা, রংপুর, ময়মনসিংহ, সিলেট, খুলনা ও বরিশাল বিভাগ এবং রাজশাহী বিভাগের অবশিষ্টাংশের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। এর ফলে সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে।
আবহাওয়া অফিস জানায়, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি ও বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। মঙ্গলবার সকালে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ২৩.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বশেষ রেকর্ড করা সর্বোচ্চ তাপমাত্রা হচ্ছে রাজশাহীতে ৪০.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে রাঙামাটিতে ১৪ মিলিমিটার।
প্রচন্ড দাবদাহ থেকে বাঁচতে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেন, এই সময়ে দীর্ঘক্ষণ রোদে থাকা যাবে না। হালকা কাপড়ের ও হালকা রঙের ঢিলেঢালা সুতির জামা পরতে হবে। বাইরে বেরোলে কাপড়, টুপি অথবা ছাতা দিয়ে মাথা ঢাকতে হবে। পিপাসা না পেলে প্রচুর পানি পান করতে হবে। দুপুরে বা প্রচন্ড গরমে ভারী কাজ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। বাইরে কাজ করলে বেশি সময় ধরে বিশ্রাম নিতে হবে।
তারা বলেন, এ সময় দুর্বলবোধ হতে পারে, মাথা ঘুরতে পারে, মাথায় যন্ত্রণা হতে পারে। প্রবল ঘাম, গা-বমি ভাব, এমনকি ফিট হওয়ার মতো লক্ষণ দেখা দিলে নিকটবর্তী হাসপাতাল বা চিকিৎসা কেন্দ্রে যোগাযোগ করা জরুরি।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য