দেশে দাবদাহ কমছেই না। উল্টো দিন যত যাচ্ছে গরমের তীব্রতা আরো বাড়ছে। এর মধ্যে যুক্ত হয়েছে লোডশেডিং। এখন লোডশেডিং চলছে দিনের অধিকাংশ সময়ে। গ্রামের চেয়ে শহরে গরমের তীব্রতা আরো বেশি।
বিশেষ করে গরমে নাকাল রাজধানীবাসী। বাধ্য হয়েইে কিছুটা স্বস্তি পেতে তারা ছুটছেন চার্জার ফ্যানের দোকানগুলোয়। আর এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ক্রেতাদের কাছ থেকে নানা অজুহাতে বাড়তি দাম নিচ্ছেন অধিকাংশ ব্যবসায়ী।
বাজার ঘুরে আরো দেখা যায়, ১২ ইঞ্চি চার্জার ফ্যান বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার ৫০০ টাকায়, যার পূর্বমূল্য ছিল ২ হাজার ৮০০ টাকা। ১৬ ইঞ্চি ফ্যান বিক্রি হচ্ছে ৭ হাজার টাকায়, যার পূর্ব মূল্য ছিল ৪ হাজার টাকা। ১৮ ইঞ্চি ফ্যান ১১ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা আগে ছিল ৯ হাজার টাকা। আবার ব্র্যান্ড ভেদে দাম হাজার টাকা কমবেশিও বিক্রি হচ্ছিল। খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন আমাদের এগুলায় কোনো লাভ নেই।
লাভ হলো আমদানিকারকদের আর বড় বড় দোকানদারের, যারা ২০০ থেকে ৪০০ পিস স্টকে রাখছে। আমরা দিনে ৯ থেকে ১০ পিস করে আনি। চাহিদা বেশি দেখে ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা বেশিতে বিক্রি করি। লাভ তো আমদানিকারকদের।
এদিকে ক্রেতারা বলছেন, দীর্ঘদিন নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ থাকায় চার্জার ফ্যান কেনার প্রয়োজনীয়তা বোধ করেননি তারা। তবে হঠাৎ গরম বেড়ে যাওয়ায় এবং বিদ্যুৎ পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় বাধ্য হয়েই কিনছেন চার্জার ফ্যান। কিন্তু অস্বাভাবিক দাম রাখা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তারা।
এসব ফ্যানের দাম ক্ষণে ক্ষণেই বাড়ে মন্তব্য করে নাজমুল নামে এক বিক্রয়কর্মী বলেন, এখন যেই দাম শুনবেন, ঘুরে আসলেই শুনবেন ৫০০ টাকা বেশি। আমি নিজে নবাবপুর থেকে সকালে ৫টা ফ্যান নিয়ে আসছি। এগুলা বিক্রি করে দুপুরে আরো দুই কার্টুন আনতে গিয়া দেখি পাইকারিতেই দাম বাড়ায়া দিছে।
বৃষ্টি হলেই চাহিদা কমে যাবে, তাই ঝুঁকি নিতে চান না জানিয়ে সুন্দরবন স্কয়ারের ইলেকট্রনিক পণ্য বিক্রেতা আশিক বলেন, আমার কাছে ৩০০ পিস ছিল, সব বিক্রি করে দিছি। এখন নতুন করে আনতে গেলে ৪ হাজার টাকার ফ্যান ৪ হাজার টাকাই ধরবো। তাহলে আমি বেচুম কত টাকায়? এখন লাভ করতে হইলে মাইনসের মাথায় বাড়ি দেয়া লাগবো।
অন্যদিকে ডলার সংকট ও এলসি করতে না পারার কারণ দেখিয়ে আমদানিকারকরা বলছেন, নতুন পণ্য আনতে না পারায় পণ্যের সংকট রয়েছে। আর গরম বেড়ে যাওয়ায় চাহিদাও বেড়েছে। তাই সব পক্ষই দাম বাড়িয়েছে।
এ বিষয়ে সামস ইলেকট্রিক মার্কেটের ইলেকট্রনিক পণ্যের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান খান ইলেকট্রিকের স্বত্বাধিকার লিটন খান বলেন, যেকোনো জিনিসের চাহিদা বেশি থাকলে দাম সামান্য বাড়ে। সরকারও এটার ওপর কর আরোপ করে বেশি। এখানে আমাদের কিছু করার থাকে না। আর ব্যবসায়ীরা লস করলে তো তখন আপনারা আসেন না। সুখের সময় কেন দেখতে আসেন?
চার্জার ফ্যানের অস্বাভাবিক দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে লিটন বলেন, অস্বাভাবিক আবার কি? ডলার সংকট চলছে। ৯০ টাকার ডলার ১১০ টাকা হইছে। এইটা অস্বাভাবিকভাবে বাড়ে নাই? ব্যাংক কমিশন বেশি নিচ্ছে আমাদের থেকে। এখন আমাদের পুরো টাকাটা দিতে হয় আগে। তারপর মাল আনতে হয়।
এদিকে চার্জার ফ্যানের দাম শুনে নাভিশ্বাস ওঠে যাওয়ার অবস্থা ক্রেতাদের। তারা বলছেন দেশে যখন কোনো কিছুর চাহিদা বাড়ে, তখন সেটার দামও বেড়ে যায়। এটা খুব কষ্টের। জীবনযাত্রার মান কমে যাচ্ছে কিন্তু বেতন বাড়ছে না। খুব কষ্টে আছি।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য