-->
শিরোনাম

খুলনা বরিশাল সিটিতে ভোট কাল

শাহীন রহমান
খুলনা বরিশাল সিটিতে ভোট কাল

শাহীন রহমান: বিএনপির বর্জনের মধ্য দিয়েই ভোট হচ্ছে খুলনা ও বরিশাল সিটিতে। ইসির তফসিল অনুযায়ী আগামীকাল সোমবার সকাল থেকেই এই দুটিতে ভোটগ্রহণ করা হবে। যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি গ্রহণের পর থেকে দেশের রাজনীতি ও নির্বাচনের চরিত্র পাল্টাতে শুরু করেছে। যার সরাসরি প্রভাব পড়েছে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে। বিএনপির বর্জনের মধ্যেও এবার জনগণের দৃষ্টি ফিরছে খুলনা ও বরিশাল সিটিতে।

 

বিশেষ করে গাজীপুরের সুষ্ঠু নির্বাচন প্রভাব ফেলছে এই দুই সিটি ভোটারদের মধ্যে। একদিকে যেমন তাদের ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার জন্য উৎসাহ বাড়িয়ে দিয়েছে, অন্যদিকে নির্বিঘেœ ভোট দেয়ার ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন ভোটাররা।

 

ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শনিবার রাত থেকে নির্বাচনী প্রচার বন্ধ হয়ে গেছে। টানা প্রচার-প্রচারণা শেষে প্রার্র্থীরা জয়-পরাজয়ের হিসাব-নিকাশ শুরু করে দিয়েছে। তবে ক্ষমতাসীনদের কাছে খুলনা সিটি নির্বাচনের হিসাব সহজে মিললেও বরিশাল পরিস্থিতি জটিল করে তুলছে। এই সিটিতে মেয়র প্রার্থী নিয়ে স্থানীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে যথেষ্ট বিভেদ রয়েছে। নানা গ্রুপে বিভক্ত হওয়ায় সুবিধা হাতপাখার প্রতীকের প্রার্থীর দিকে ঝুঁকে পড়ার আশঙ্কা করছেন কেউ কেউ।

 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বরিশাল সিটি নির্বাচনে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যে দলের প্রার্থী আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ (খোকন সেরনিয়াবাতের) বিরোধিতা করছে না। তবে ভেতরে ভেতরে বিভেদ চরম আকার ধারণ করেছে।

 

আশঙ্কা করা হচ্ছে, ভোটার উপস্থিতি বাড়লে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর জন্য হিতে বিপরীত হতে পারে। এই সিটিতে মেয়র পদে ৬ জন প্রার্থী হলেও মূলত চারজন প্রার্থীর প্রচার-প্রচারণা রয়েছে সমানতালে। তাদের পোস্টার-মাইকিংয়ে এলাকা ছেয়ে গেছে। বিএনপি ভোট বর্জন করলেও এই সিটিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিয়ায় পড়তে হতে পারে।

 

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি সর্বশক্তি নিয়ে ভোটের মাঠে রয়েছে চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলনের মেয়র প্রার্থী মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম। হাতপাখা প্রতীকে তিনি নির্বাচনে রয়েছেন। অন্যদিকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মো. ইকবাল হোসেনও পিছিয়ে নেই। বিএনপি ভোট বর্জন করলেও এই সিটিতে বিএনপির সাবেক মেয়র আহসান হাবীব কামালের ছেলে কামরুল আহসান রুপমও মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী।

 

কেন্দ্র বিএনপির কঠোর নিষেধাজ্ঞার কারণে স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীরা তার পেছনে নেই। ফলে এই সিটির বিএনপির ভোট ব্যাংক কার পক্ষে যাবে সেটি নিয়েই এখন বেশি আলোচনা চলছে। যদিও আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ দাবি করেছেন বিএনপির ভোটাররা তাকেই ভোট দেবে।

 

তবে এই সিটির সাবেক মেয়র মজিবুর রহমান সারেয়ার বলেছেন, বিএনপির নেতাকর্মীরা ভোট দিতে যাবে না। তবে যারা যাবে তারা আর যেখানেই হোক, নৌকায় ভোট দেবে না। তবে স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা মনে করছেন, নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি কম হলে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর জন্য সুবিধা হবে।

 

এ সিটির হাতপাখার প্রার্থী সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীমও বেশ আলোচনায় রয়েছেন। বরিশালে তাদের বড় ভোটব্যাঙ্ক রয়েছে। অন্যদিকে এ সিটিতে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ সদ্যবিদায়ী মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহর চাচা। চাচার সঙ্গে তার সম্পর্ক যেমন ভালো নয়। তেমনি রাজনীতিতে তার প্রভাব অনেক কম। এ কারণে ভোটের হিসাব নিকাশ জটিল হয়ে পড়ছে বলে জানা গেছে।

 

বরিশাল সিটি করপোরেশনে মেয়র পদে চূড়ান্ত প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন আওয়ামী লীগের আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ, জাতীয় পার্টির মো. ইকবাল হোসেন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সৈয়দ মোহাম্মদ ফয়জুল করীম, জাকের পার্টির মিজানুর রহমান বাচ্চু, স্বতন্ত্র কামরুল আহসান রুপম ও আলী হোসেন।

 

তবে বরিশালে বিপরীত চিত্র লক্ষ্য করা গেছে খুলনা সিটি নির্বাচনে। এখানেও আগামী সোমবার ভোট অনুষ্ঠিত হবে। জানা গেছে, বিএনপি ভোট বর্জন করায় আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আব্দুল খালেক সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। সাবেক এই মেয়রের শক্ত কোনো প্রতিদ্ব›দ্বী না থাকায় অনেকটা নির্বিঘ্নে বৈতরণী পার হতে চলেছেন। এদিকে অনেকে মনে করছে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় ভোট অনেকটা একতরফাভাবে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে। ভোটার উপস্থিতি কম হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ কারণে ইসির জন্য এখন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে ভোটার উপস্থিতি বাড়ানো।

 

এই সিটির মেয়র পদে দলীয় প্রার্থী জয় নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মধ্যে কোন দুশ্চিন্তা নেই। তবে বিএনপি নির্বাচন বর্জন করায় ‘একতরফা’ নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ কমে গেছে ভোটারদের। পাশাপাশি দলের নেতাকর্মীদের ভোটকেন্দ্রে না যাওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন বিএনপি নেতারা। এই সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ থেকে নৌকা প্রতীক নিয়ে তালুকদার আবদুল খালেক, জাতীয় পার্টি থেকে লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে মো. শফিকুল ইসলাম মধু, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ থেকে হাতপাখা প্রতীক নিয়ে মো. আব্দুল আউয়াল, জাকের পার্টি থেকে গোলাপ ফুল প্রতীক নিয়ে এসএম সাব্বির হোসেন ও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে টেবিল ঘড়ি প্রতীক নিয়ে এসএম শফিকুর রহমান প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এই ৫ প্রার্থীর মধ্যে আওয়ামী লীগের তালুকদার আবদুল খালেক ৩ বার মেয়র পদে নির্বাচন করে ২ বার বিজয়ী হন।

 

জাতীয় পার্টির প্রার্থী গত ২ নির্বাচনে জামানত হারিয়েছেন। ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী গত নির্বাচনে বিজয়ী প্রার্থীর ভোটের ১০ ভাগের একভাগ ভোট পেয়েছিলেন। জাকের পার্টি এবার নতুন মুখ। অন্যদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী এসএম শফিকুর রহমান গত নির্বাচনে ভোট পেয়েছিলেন ১ হাজার ৭২টি।

 

এদিকে ইসি জানিয়েছে, আগামীকাল সোমবার খুলনা-বরিশাল সিটি করপোরেশন ছাড়াও এদিন নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার পৌরসভা, কক্সবাজার জেলার পৌরসভা এবং স্থানীয় সরকারের অন্যান্য সাধারণ নির্বাচন ও উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এসব ভোট পর্যবেক্ষণ করতে উচ্চ পর্যায়ের একটি মনিটরিং সেল গঠন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এই সেল আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবন থেকে ভোটের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে।

 

এদিকে বরিশাল মেট্রপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ১২৬টি কেন্দ্রের মধ্যে ১০৬টি কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ। বিএমপি কমিশনার সাইফুল ইসলাম বলেন, পুলিশের হিসাবে ৭০টি কেন্দ্র গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু প্রার্থীরা যেসব কেন্দ্র নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন, সেগুলো যুক্ত করে মোট ১০৬টিকে গুরুত্বপূর্ণ ধরা হয়েছে। শনিবার বেলা সাড়ে ১১টায় নগরীর বিএমপি হেডকোয়ার্টারে নির্বাচনের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ কমিশনার এসব কথা বলেন।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version