-->
শিরোনাম

ঈদুল আজহায় নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা

রুদ্র মিজান
ঈদুল আজহায় নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা

রুদ্র মিজান: সাদা পোশাকে মাঠে নামছে র‌্যাব-পুলিশ। চাঁদাবাজি, চুরি-ছিনতাই, হয়রানি ঠেকাতে গরুর হাট থেকে চলাচলের রাস্তা, শপিংমল সর্বত্র নজর রাখবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পশুর হাটের নিরাপত্তা, জাল টাকা রোধ এবং চাঁদাবাজি বন্ধে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

 

সেইসঙ্গে ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে প্রস্তুত রয়েছে র‌্যাব-পুলিশের স্টাইকিং ও মোবাইল টিম। আগামী সপ্তাহ থেকেই রাজধানীর পশুর হাটগুলো বসবে। এরই মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ করা হয়েছে।

 

জানা গেছে, এবার ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় কোরবানির পশু বেচাকেনার জন্য ১৭টি হাট বসছে। ডিএসসিসি এলাকায় ১০টি ও ডিএনসিসি এলাকায় ৭টি পশুর হাট বসবে এবার। পশুর হাটে যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ও নিরাপত্তা জোরধার করতে ইতোমধ্যে ইজারাদারদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কর্মকর্তারা।

 

এছাড়া স্থানীয় সংসদ সদস্য ও ডিএমপির অপরাধ এবং গোয়েন্দা বিভাগের পুলিশের উপকমিশনারদের (ডিসি) সঙ্গে পৃথকভাবে বৈঠক করা হয়েছে। এসব বৈঠকে সংশ্লিষ্টদের পরামর্শকে গুরুত্ব দিয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করছে ডিএমপি। থানা পুলিশের পাশাপাশি পশুর হাটগুলোয় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করবে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

 

বৈঠকে ইজারাদারদের প্রতি ডিবি কর্মকর্তা অনুরোধ জানিয়ে বলেছেন, হাটের আশপাশে কোনো ধরনের ভ্রাম্যমাণ দোকান যেন না থাকে। ভ্রাম্যমাণ দোকানে অজ্ঞান পার্টির তৎপরতা বেশি থাকে। সাধারণত এসব দোকান থেকে পশুর ক্রেতা-বিক্রেতারা চা, পান, বিড়ি, শরবত ও ঝালমুড়ি খেয়ে অজ্ঞান হয়ে যান। এসব দোকানকে কেন্দ্র করেই তৎপরতা চালায় অজ্ঞান পার্টি। ডিএমপির নিরাপত্তা পরিকল্পনা অনুযায়ী, প্রত্যেকটি হাটে পুলিশের কন্ট্রোলরুম এবং প্রয়োজনীয় স্থানে সিসিটিভি ক্যামেরা থাকবে। জাল টাকা শনাক্তের জন্য পুলিশ কন্ট্রোলরুমে বসানো হবে ইলেকট্রনিক মেশিন ও প্রজেক্টর।

 

গুরুত্বপূর্ণ হাট ও জনসমাগম এবং লেনদেন বিবেচনায় প্রায় প্রতিটি হাটে শতাধিকের বেশি পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হবে। হাট ও হাটের আশপাশে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে মোতায়েন থাকবে সাদা পোশাকের পুলিশ সদস্যরা। সাদা পোশাকে গোয়েন্দা পুলিশের তৎপরতা থাকবে হাট থেকে শুরু করে প্রয়োজনীয় সড়কে ও শপিংমলে। চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী, হয়রানি, চুরি, ছিনতাই প্রতিরোধে সক্রিয় থাকবে তারা। হাটগুলোয় বসানো হবে ওয়াচ টাওয়ার। সার্বক্ষণিক চিত্র পর্যবেক্ষণ করবেন পুলিশ সদস্যরা।

 

ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে ঢাকায় যাতে তীব্র যানজট সৃষ্টি না হয়, সে বিষয়ে পরিকল্পনা করেছেন ডিএমপি কর্মকর্তারা। এজন্য ট্রাফিক পুলিশ কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বিশেষ করে গবাদি পশুর হাট সংলগ্ন এলাকায় ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণে দায়িত্ব পালন করবেন অতিরিক্ত ট্রাফিক পুলিশ। সুষ্ঠু ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ও নির্বিঘ্নে হাট পরিচালনার জন্য ইজারাদারদের জন্য বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছে ডিএমপি।

 

নির্দেশনাগুলো হচ্ছে, জোর করে কোরবানির পশু হাটে না নামানো, নির্ধারিত সময়ের আগে কোরবানির পশু হাটে ঢুকতে না দেয়া, সিটি করপোরেশন ঘোষণা করা নির্ধারিত হারের বেশি হাসিল (খাজনা) না রাখা ও হাটের পাশপাশে ভ্রাম্যমাণ দোকান না রাখা। সিটি করপোরেশন এবং জেলা প্রশাসকের নির্ধারিত চৌহদ্দির বাইরে পশুর হাট না বসানো, জালনোট শনাক্তে বুথ স্থাপন, নাইটমোডে ছবি ধারণক্ষমতাসম্পন্ন সিসিটিভি স্থাপন, নির্ধারিত হাসিলের তালিকা বড় করে ব্যানারে প্রকাশ্য স্থানে লাগানো, হাটে জেনারেটরের ব্যবস্থা রাখা ও পর্যাপ্তসংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করা। একইভাবে পশুর হাটকেন্দ্রিক নিরাপত্তার পাশাপাশি ঢাকার বিভিন্ন প্রবেশ ও বের হওয়ার পথে নিরাপত্তা জোরদার করবে ডিএমপি।

 

ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার (ক্রাইম) বিপ্লব বিজয় তালুকদার বলেন, ঈদকে কেন্দ্র করে আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। ছিনতাই প্রতিরোধে ঈদের আগে কেউ যদি বড় ধরনের লেনদেন করতে চান, তাহলে তিনি পুলিশের সহযোগিতা নেবেন। পশুবাহী ট্রাক কেউ যাতে ডাকাতি করতে না পারে, সেজন্যও আমরা পরিকল্পনা নিয়েছি। রাজধানীতে প্রবেশের সময় এক হাটের ট্রাক আরেক হাটে জোর করে না রাখার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এজন্য প্রতিটি ট্রাকের সামনে সংশ্লিষ্ট হাটের ব্যানার লাগানোর জন্য বলা হয়েছে।

 

রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ী ১৬ ও ১৮নং সেক্টর সংলগ্ন বউবাজার এলাকা, মিরপুর সেকশন-৬-এর ইস্টার্ন হাউজিং এলাকা, বাড্ডা ইস্টার্ন হাউজিং আফতাবনগর ব্লক-বি থেকে এইচ পর্যন্ত খালি জায়গা, ভাটারা (সাঈদনগর) সংলগ্ন খালি জায়গা, মোহাম্মদপুরের বছিলা, ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের খেলার মাঠ, কাওলা শিয়ালডাঙ্গা-সংলগ্ন খালি জায়গা এবং ৪৪নং ওয়ার্ডের কাচকুড়া ব্যাপারীপাড়ার রহমাননগর আবাসিক প্রকল্প এলাকায় বসবে গবাদি পশুর হাট। এছাড়া দেশের সর্ববৃহৎ গবাদি পশুর হাট বসবে গাবতলীতে।

 

এরই মধ্যে সব হাটের ইজারা চূড়ান্ত করেছে ডিএনসিসি। ডিএসসিসির অস্থায়ী কোরবানির পশুর হাটের মধ্যে থাকছে যাত্রাবাড়ীর দনিয়া কলেজ-সংলগ্ন খালি জায়গা, ধোলাইখাল ট্রাকস্ট্যান্ড-সংলগ্ন খালি জায়গা, পোস্তগোলা শ্মশানঘাটসংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, ইনস্টিটিউট অব লেদার টেকনোলজি কলেজসংলগ্ন উন্মুক্ত এলাকা, মেরাদিয়া বাজারসংলগ্ন খালি জায়গা, লিটল ফ্রেন্ডস ক্লাবসংলগ্ন খালি জায়গা ও কমলাপুর স্টেডিয়াম-সংলগ্ন খালি জায়গা, লালবাগের রহমতগঞ্জ ক্লাবসংলগ্ন খালি জায়গা ও আমুলিয়া মডেল টাউনসংলগ্ন খালি জায়গা।

 

ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে পুলিশ সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত এক সভায় পুলিশ সদস্যদের নির্দেশনা দিয়েছে সদর দপ্তর। ঈদ উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সমন্বয়ের জন্য পুলিশ সদর দপ্তর এবং প্রতিটি জেলা-ইউনিটে কন্ট্রোলরুম চালু থাকবে। নির্ধারিত ঘাট ব্যতীত কোরবানির পশু ওঠানামা রোধ করা হবে। পশুর হাটে অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন করা হবে। পশুর হাট ইজারাদার কর্তৃক হাসিল হার প্রদর্শন, জাল নোট শনাক্তকরণ মেশিন স্থাপন এবং যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে সক্রিয় থাকবে পুলিশ।

 

কোরবানির পশু পরিবহনে ব্যবহৃত নৌকা ও ট্রাকে চাঁদাবাজি রোধে পুলিশ ও অন্য সংস্থার সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। ঈদের দিন অস্থায়ী চামড়া ক্রয় কেন্দ্রগুলোয় পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা হবে।

 

পশুর চামড়া পাচার রোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক দৃষ্টি রাখবে। নৌপথে যাত্রীদের নিরাপত্তা এবং চাঁদাবাজি রোধে নবগঠিত নৌপুলিশ ইউনিট অন্যান্য পুলিশ ইউনিটের সহায়তায় চেকপোস্ট স্থাপনসহ টহলের ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

 

পুলিশের পাশাপাশি সারা দেশে সক্রিয় রয়েছে র‌্যাব। র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার প্রধান কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গবাদি পশুর হাটের নিরাপত্তায় প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। সে অনুসারে নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করবে র‌্যাব। র‌্যাব পেট্রোলিং টিমের কার্যক্রম বাড়ানো হবে, অস্থায়ী ক্যাম্প ও চেকপোস্ট স্থাপন করা হবে।

 

মহাসড়কে পশুবাহী ট্রাকে চাঁদাবাজি ও ডাকাতি রোধে এবং গরুর হাটে চাঁদাবাজি, ছিনতাইকারী ও অজ্ঞান পার্টি প্রতিরোধে সাদা পোশাকে র‌্যাবের কার্যক্রম গতিশিল থাকবে।

 

এছাড়া হাটে ওয়াচ টাওয়ার ও অস্থায়ী ক্যাম্প বসানো হবে। ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশপথ, রেলপথ, নৌপথ ও সড়কপথে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে র‌্যাব সদস্যরা সক্রিয় থাকবে। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে র‌্যাব কার্যক্রম শুরু করেছে বলে জানান তিনি।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version