রাজশাহী ও সিলেট সিটি করপোরেশনে আজ বুধবার ভোট। সকাল ৮টা থেকে ইভিএমের ভোটগ্রহণ শুরু হবে। বিরতি ছাড়াই ভোট চলবে বেলা ৪টা পর্যন্ত। এদিকে রাজধানীর আগারগাঁও নির্বাচন ভবন থেকে সার্বিক নির্বাচন পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছে রাখছে ইসি। এজন্য প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা স্থাপনা করা হয়েছে। এসব ক্যামেরা মাধ্যমে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করা হবে। এছাড়া নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ থেকে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
ইসি সূত্রে জানা গেছে, ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রেগুলোকে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এদিকে ইসি কর্মকর্তারা জানান, সিটি করেপোরেশনের ভোট সুষ্ঠু করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এর অংশ হিসেবে ইভিএমসহ নির্বাচনের সরঞ্জাম পাঠানো হচ্ছে কেন্দ্রগুলোয়।
তারা জানান, রাজশাহী সিটি ভোটের প্রথমবারের মতো ব্যবহার করা হচ্ছে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম)।
এ সিটির মোট ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ১৫৫। আর ভোটগ্রহণ কক্ষের সংখ্যা ১ হাজার ১৫৩টি। তবে সাতটি ভোটকেন্দ্র বাদে বাকি ১৪৮টিই ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে নির্বাচন কমিশন। এ ভোটকেন্দ্রগুলোয় থাকবে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এর পাশাপাশি কেন্দ্রগুলোয় সিসিটিভি ক্যামেরাও থাকবে।
রিটার্নিং অফিসার মো. দেলোয়ার হোসেন জানান, ১৫৫টি কেন্দ্রেই সিসিটিভি ক্যামেরা স্থ্পান করা হয়েছে। তবে গুরুত্বপূর্ণ ১৪৮ কেন্দ্রের সবগুলোয়ই সিসিটিভি ক্যামেরার পাশাপাশি বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থাও নেয়া হবে।
তিনি জানান, এসব সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে ঢাকা থেকে নির্বাচন কমিশন ভোট পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ করবে। কোথাও কোনো অনিয়ম বা অব্যবস্থাপনা হলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। ভোটগ্রহণ চলাকালে কেন্দ্রে গোলযোগ সৃষ্টি বা সহিংসতার চেষ্টা করলে তা কঠোর হাতে দমন করা হবে।
অন্যদিকে সিলেট সিটি করপোরেশনের নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরবচ্ছিন্ন করতে নগরীতে প্রায় ২৬০০ পুলিশ সদস্য মাঠে আছে বলে জানান, সিলেট মেট্রোপলিটন কমিশনার মো. ইলিয়াছ শরিফ। তিনি বলেন, নির্বাচনে কোনো বিশৃঙ্খলা হলে তারা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রের তালিকা তৈরি করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তালিকা অনুযায়ী ১৯০টি কেন্দ্রের ১৩২টিকেই গুরুত্বপূর্ণ ধরা হয়েছে।
সিলেট সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সিলেটের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ফয়সাল কাদির জানান, ভোট শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে; নির্বাচনে পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে।
সিলেট সিটির মেয়র পদে আট প্রার্থী রয়েছেন। ৪২টি ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২৭২ জন, ১৪টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে নারী কাউন্সিলর পদে ৮৭ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ৭৯.৫০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এ নগরীতে মোট ভোটার ৪ লাখ ৮৭ হাজার ৬০৫ জন। এর মধ্যে পুরুষ ২ লাখ ৫৩ হাজার ৭৬৩ এবং নারী ২ লাখ ৩২ হাজার ৮৪২ জন। মোট ভোটকেন্দ্র ১৯০টি এবং ভোটকক্ষ ১ হাজার ৩৬৪টি।
এ সিটিতে মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন আওয়ামী লীগের মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী (নৌকা), জাতীয় পার্টির নজরুল ইসলাম বাবুল (লাঙল), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মাহমুদুল হাসান (হাতপাখা), জাকের পার্টির মো. জহিরুল আলম (গোলাপ ফুল), স্বতন্ত্র মোহাম্মদ আবদুল হানিফ কুটু (ঘোড়া), স্বতন্ত্র মো. ছালাহ উদ্দিন রিমন (ক্রিকেট ব্যাট), স্বতন্ত্র মো. শাহ জাহান মিয়া (বাস) এবং স্বতন্ত্র মোশতাক আহমেদ রউফ মোস্তফা (হরিণ)।
এ সিটিতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থীরা আইন অনুযায়ী ভোটে থাকলে তারা বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন। ফলে দলটির নেতাকর্মীরা ভোটের মাঠে নেই। ২০০২ সালে সিলেট সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠার পর এখন পর্যন্ত চারবার নির্বাচন হয়েছে। ২০০৩ সালে প্রথম নির্বাচনে বিজয়ী বদর উদ্দিন কামরান, ২০০৮ সালের দ্বিতীয় নির্বাচনেও কারাগার থেকে মেয়র নির্বাচিত হন।
২০১৩ সাল থেকে মেয়র পদে আছেন বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আরিফুল হক চৌধুরী। তবে এবার তিনি দলের সিদ্ধান্ত মেনে নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন না। এদিকে ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের বাধা সৃষ্টির জন্য ঢাকা থেকে প্রচুর লোক আনা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জাতীয় পার্টির মনোনীত মেয়রপ্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুল।
রাজশাহী: রাজশাহী সিটি নির্বাচনে ময়র পদে প্রার্থী ৪ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের এইচএম খায়রুজ্জামান লিটন (নৌকা), জাতীয় পার্টির মো. সাইফুল ইসলাম স্বপন (লাঙল), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. মুরশিদ আলম (হাতপাখা) এবং জাকের পার্টির মো. লতিফ আনোয়ার (গোলাপফুল) প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তবে ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী ভোটে থাকলে তারা মাঠে নেই।
১২ জুন বরিশাল নির্বাচনে দলের প্রার্থীর ওপর হামলার কারণে তারা নির্বাচন বর্জন করেছে। তবে প্রার্থিতা প্রত্যাহারে নির্দিষ্ট সময়ের পরে বর্জন ঘোষণা দেয়ায় আইন অনুযায়ী তারা ভোটে রয়েছেন। অন্যদিকে ভোটের তিন দিন আগে মাঠ থেকে সরে দাঁড়ানোর ইচ্ছার কথা জানিয়েছেন রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জাতীয় পার্টির মনোনীত মেয়র পদপ্রার্থী সাইফুল ইসলাম স্বপন : এ সিটিতে ১০টি সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে ৪৬ জন এবং ৩০টি সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১১১ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। মোট ভোটার ৩ লাখ ৫১ হাজার ৯৮২ জন। পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৭১ হাজার ১৬৭ এবং নারী ভোটার ১ লাখ ৮০ হাজার ৮০৯ জন, হিজড়া ৬ জন।
১৯৮৭ সালের ১ আগস্ট রাজশাহী সিটি করপোরেশনের যাত্রা শুরু হয়। এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের আগে তিনবার নির্বাচন করে বিএনপির প্রার্থীকে দুবার হারিয়ে মেয়র হয়েছেন। একবার হেরেছেন। এবার বিএনপি নেই ভোটে। তবে জাতীয় পার্টি, জাকের পার্টি ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন। এর মধ্যে ইসলামী আন্দোলন ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে বরিশালের ভোটের পর।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য