-->
শিরোনাম

উত্তর ও উত্তর পূর্বাঞ্চলের সব নদীর পানি বাড়ছে

নিজস্ব প্রতিবেদক
উত্তর ও উত্তর পূর্বাঞ্চলের সব নদীর পানি বাড়ছে

উজানে ভারী বৃষ্টির কারণে ব্রহ্মপুত্র, যমুনা ও পদ্মা নদীসহ দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে প্রায় সব প্রধান নদ-নদীর পানি বাড়ছে। এ পরিস্থিতি চলতে থাকলে সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলার কিছু পয়েন্টে নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে আশপাশের নিম্নাঞ্চলে বন্যার সৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। তবে পানি উন্নয় বোর্ড জানিয়েছে উজান থেকে নেমে আসা ঢলের কারণে দেশের উত্তর এবং উত্তর পূর্বাঞ্চলে সাময়িক বন্যা দেখা দিলেও এই মুহূর্তে বড় বন্যার আশঙ্কা নেই।

 

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান ভূইয়া জানান, উজানে ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। আগামী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসেও ভারী বৃষ্টি হতে পারে বলে জানা যায়। এ অবস্থায় অনেক নদ-নদীর পানি বাড়ছে। সুনামগঞ্জ ও সিলেটের নিম্নাঞ্চলের কিছু এলাকায় স্বল্পমেয়াদি বন্যা হতে পারে বলে আমরা শঙ্কা প্রকাশ করছি।

 

এদিকে কয়েক দিনের টানা বৃষ্টি ও উজানের ঢলে কুড়িগ্রামের ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তা, দুধকুমারসহ ১৬টি নদ-নদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে। এতে চর ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। তবে বৃষ্টির কারণে পানি বৃদ্ধি পেলেও এখন পর্যন্ত সবগুলো পয়েন্টে বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

 

তবে নদী এলাকার ঘরবাড়িতে পানি প্রবেশ না করলেও তলিয়ে গেছে পটোল, ঢ্যাঁড়সসহ বিভিন্ন সবজি ক্ষেত। কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ-আল-মামুন জানান, এ জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত সবগুলো নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলেও এখনো বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে আগামী ২২ ও ২৩ জুন এসব নদ-নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। তবে আগামী ১০ দিনের মধ্যে বড় কোনো বন্যার সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন পাউবোর এ কর্মকর্তা।

 

পানি উন্নয় বোর্ড জানায় ভারতের গজলডোবা ব্যারেজের সবগুলো গেট খুলে দেয়ায় দেশের তিস্তায় পানি হুহু করে বাড়ছে। উজান থেকে নেমে আসা পানির চাপ কমাতে তিস্তা ব্যারেজের ৪৪টি গেটের সবকটি খুলে দেয়া হয়েছে। উজানে ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল আর বৃষ্টির পানিতে তিস্তা বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। সোমবার সকাল ৬টা থেকে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধায় তিস্তা ব্যারেজ পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ৫২.১৫ মিটার অতিক্রম করে ৫২.২০ মিটার দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়া, কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র, দুধকুমার ও ধরলা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে তবে এসব নদীর পানি এখনো বিপৎসীমার নিচে আছে।

 

লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীল কুমার বলেন, ‘ভারতের গজলডোবা ব্যারেজের সবগুলো গেট খুলে দেয়ায় দেশে তিস্তায় পানি হুহু করে বাড়ছে। উজান থেকে নেমে আসা পানির চাপ কমাতে তিস্তা ব্যারেজের ৪৪টি গেটের সবকটি খুলে দেয়া হয়েছে। ‘তিস্তার পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় তিস্তাপাড়ে চর ও নিম্নাঞ্চলে পানি ঢুকতে শুরু করেছে।

 

এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, গত ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জে ৫০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এতে সুরমা, যাদুকাটা, রক্তি নদীর পানি বাড়লেও বিপৎসীমার ৭৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সুনামগঞ্জের সীমান্তবর্তী নিম্নাঞ্চলে এরইমধ্যে ঢলের পানি ঢোকায় ও সব ধরনের রাস্তাঘাট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন ৩ লাখেরও বেশি মানুষ।

 

এমনকি অনেকেই এরইমধ্যে বসতভিটার সব আসবাবপত্র নৌকায় করে উচু স্থানে নিয়ে যাচ্ছেন।

 

নিম্নাঞ্চলের বাসিন্দারা জানান, নদীর পানি বাড়ায় প্রতিনিয়ত আতঙ্কে রয়েছেন তারা। তারা বলেন, গত বছর বন্যার পানিতে সবকিছু ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। সেজন্য এ বছর পানি পুরোপুরি আসার আগে ঘরের আসবাবপত্র নৌকায় করে নিয়ে উচু স্থানে নিয়ে যাচ্ছি।

 

পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, আগামী ৪৮ ঘণ্টা সুনামগঞ্জে অতিভারী বৃষ্টিপাতের শঙ্কা রয়েছে। এতে সুনামগঞ্জের সব নদ-নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version