-->
শিরোনাম

ভোগান্তি ছাড়াই ঢাকায় ফিরছে মানুষ

নিজস্ব প্রতিবেদক
ভোগান্তি ছাড়াই ঢাকায় ফিরছে মানুষ

পরিবার-পরিজনের সঙ্গে ঈদ উদযাপন শেষে কর্মজীবী মানুষ ফিরতে শুরু করেছে ব্যস্ত রাজধানী ঢাকায়। যাত্রীরা বলছেন, এবার অনেকটা স্বস্তি নিয়েই তারা ঢাকায় ফিরছেন। কোথাও যানজট নেই, বিভিন্ন পরিবহনে বাড়তি ভাড়া নেয়ার অভিযোগও তেমন মেলেনি। কোনো ভোগান্তি পোহাতে হয়নি টিকিট পেতে।

 

রোববার গাবতলীর বাস কাউন্টার ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন জেলা থেকে ঢাকায় আসা গাড়িগুলো গাবতলী ব্রিজ ও কাউন্টারের সামনে যাত্রী নামিয়ে দিচ্ছে। বাস থেকে নেমে গন্তব্যের উদ্দেশে সিএনজি, মোটরসাইকেল কিংবা রিকশার খোঁজ করছেন যাত্রীরা। তবে এখনো ঈদ করতে ঢাকা থেকে মানুষ বিভিন্ন এলাকায় যাচ্ছে। অল্প যাত্রী হলেও নির্ধারিত সময়ে ঢাকা ছেড়ে যাচ্ছে বাসগুলো।

 

বেসরকারি অনেক প্রতিষ্ঠান খুলেছে শনিবার। তবুও পরিবার-পরিজনের সঙ্গে ঈদ আনন্দ শেষে জীবিকার তাগিদে এখনো ঢাকায় ফিরছে মানুষ। গতকাল পবিত্র ঈদুল আজহার চতুর্থ দিন সকালে রাজধানীর মহাখালী বাস টার্মিনালে গিয়ে এমন চিত্র দেখা যায়। এদিন সকালে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছেড়ে আসা আন্তঃজেলা বাসগুলোকে মহাখালী বাস টার্মিনালে এসে থামতে দেখা যায়।

 

এসব বাসে আসা যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বেশিরভাগই ঈদের ছুটি শেষে ঢাকায় ফিরেছেন।

 

গত ২৯ জুন সারাদেশে উদযাপিত হয় মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ। ঈদ উপলক্ষে প্রথমে ২৮, ২৯ ও ৩০ জুন নির্ধারিত হয় সরকারি ছুটি। পরে সরকারের নির্বাহী আদেশে ২৭ জুনও সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। এতে ঈদে সরকারি ছুটি মেলে চার দিন। ৩০ জুন চার দিনের ছুটি শেষ হলেও ১ জুলাই সাপ্তাহিক ছুটি শনিবার।

 

ফলে আরো এক দিন ছুটি পেয়ে যান সরকারি চাকরিজীবীরা। ফলে টানা পাঁচ দিন ছুটি মেলে তাদের। সরকারি নির্দেশনা মেনে ব্যাংক ও বিমা কোম্পানিতে ঈদ উপলক্ষে চার দিনের ছুটে দেয়া হয়। ফলে ব্যাংক ও বিমা কোম্পানির চাকরিজীবীরাও টানা পাঁচ দিনের ছুটি পেয়ে যান।

 

রাজধানীর ধোলাইপাড়, যাত্রাবাড়ী ও সায়েদাবাদ ঘুরে দেখা গেছে, সকাল থেকে ফাঁকা সড়কগুলোতে কিছুক্ষণ পর পর এসে থামছে যাত্রীবাহী গাড়ি। এসব গাড়িতে করে দূর-দূরান্ত থেকে আসা যাত্রীদের অধিকাংশই চাকরিজীবী। অনেকে একা ফিরছেন, কেউ ফিরছেন পরিবার নিয়ে।

 

সাতক্ষীরা থেকে ঢাকায় ফিরেছেন সরকারি চাকরিজীবী আজিজুল ইসলাম। তিনি বলেন, ছুটিতে বাড়ি গিয়েছিলাম পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে। গিয়েছিলাম স্ত্রী-সন্তানদের সঙ্গে নিয়ে। অফিস খুলেছে, তাই একাই দ্রæত ঢাকায় ফিরলাম। বৃহস্পতিবার অফিস শেষে তাদের আনতে যাব। আগামী শনিবার সবাইকে নিয়ে ঢাকায় থাকব ইনশাল্লাহ। আসলে ওরা তো শুধু ঈদের ছুটিতেই বাড়ি যায়। তাই ভাবলাম কিছুদিন দাদাবাড়ি আর নানাবাড়ি বেড়াক।

 

বরিশাল থেকে ঢাকায় ফেরা চাকরিজীবী সামসুন্নাহার রেখা জানান, ঈদের ছুটির দুদিন আগেই ছুটি নিয়ে বাড়িতে গিয়েছিলাম। এখন আবার ছুটি শেষে আজই ফিরে আসলাম। পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতেই গিয়েছিলাম। প্রতি বছর তো আসলে রোজার ঈদ আর কোরবানির ঈদ আমাদের কাছে বেশি আনন্দের। বাড়িতে সবাই এই আনন্দে একসঙ্গে মিলিত হই। ঢাকায় ফিরে সব ফাঁকা মনে হচ্ছে, প্রিয় মানুষগুলোকে রেখে ফিরতে হয়েছে ব্যস্ত শহরে। তবে এটাই তো নিয়ম।

 

বগুড়া থেকে ছেড়ে আসা শাহ ফতেহ আলী বাসে ঢাকায় ফিরেছেন বেসরকারি চাকরিজীবী রবিউল ইসলাম। তিনি বলেন, সকাল পৌনে ৬টায় রওনা দিয়েছি। পৌঁছাতে ১০টা বেজেছে। গতকালই অফিস খুলেছে। তবে একদিন বেশি ছুটি নিয়ে আজ ফিরলাম। এখন বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হয়ে অফিসে যাবো। পথে কোনো ভোগান্তি না হলেও বাসে বাড়তি ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ করেন এই যাত্রী।

 

ফার্মাসিটিক্যাল কোম্পানিতে চাকরি করেন ফজল রহমান। তিনি বলেন, আজ থেকে অফিস খোলা। তাই বাড়িতে বাবা, মা, ভাই, বোন, স্ত্রী, সন্তানকে রেখে বাধ্য হয়ে ফিরতে হলো। সবচেয়ে বেশি খারাপ লাগছে ছোট বাচ্চাটার জন্য। কিন্তু কিছুই করার নেই। শেরপুর থেকে ঢাকায় ফিরেছেন বেসরকারি টিভি চ্যানেলের সিনিয়র ব্রডকাস্ট ইঞ্জিনিয়ার রাশেদ সিরাজুল। তিনি বলেন, ঈদ করতে স্ত্রীকে নিয়ে বাড়ি গিয়েছিলাম। অফিস খোলা তাই আজ আবার ফিরে এলাম। পথে কোনো সমস্যা হয়নি।

 

বেসরকারি চাকরিজীবী আহসান হাবিব জনি তিনি বলেন, ৩ জুলাই অফিস খুলবে। একদিন হাতে রেখেই আজ ঢাকায় ফিরেছি। যেন বিশ্রাম নিয়ে আগামীকাল পুরোদমে অফিস শুরু করতে পারি। পাবনার শাহজাদপুর থেকে আসা মোস্তফা বলেন, কোনো জ্যাম নাই। নির্ধারিত সময়ে বাস ছেড়েছে। বাস ছেড়েছে সকাল ৮টায়। সাড়ে ১১টার আগেই গাবতলী এসেছি। আগেও ৭০০ টাকা ভাড়া ছিল, আসার সময়ও ৭০০ টাকা ভাড়া দিয়ে ঢাকায় আসলাম। বেসরকারি এই চাকরিজীবী বলেন, ঈদের দুইদিন বাড়ি গিয়েছিলাম। তখনও স্বস্তি নিয়ে গিয়েছি। এবার ঈদযাত্রা ভালো হয়েছে।

 

রোজিনা এন্টারপ্রাইজের ম্যানেজার আমিরুল ইসলাম বলেন, রংপুর থেকে সকাল ৮টার মধ্যে সব গাড়ি গাবতলীতে পৌঁছেছে। কোনো গাড়ি দেরি করেনি। সড়কে কোনো যানজট নাই তাই দেরি ও হচ্ছে না। রয়েল এক্সপ্রেসের কাউন্টার ম্যানেজার মিলন জানান, সকাল থেকে নির্ধারিত সময়েই গাড়িগুলো এসেছে।

 

বেলা ১১টার মধ্যে ৭টা গাড়ি আসার কথা, সবগুলোই এসেছে। শ্যামলী পরিবহনের ম্যানেজার প্রকাশ বলেন, গাড়ি সময়মতো আসছে। এবার ঝামেলাও কম। ঢাকা ছেড়ে যাত্রীরা যাচ্ছে। তবে যাত্রী সংখ্যা কম, সীমিত যাত্রী নিয়ে যাচ্ছে। ১০ জন হলেও বাস ছেড়ে দিচ্ছে। টাঙ্গাইল বাইপাস থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র আকাশ বলেন, ১৮০ টাকা ভাড়া। স্ট্যান্ডিং টিকিটে ২০ টাকা বেশি দিয়ে আসলাম। যানজট নাই, কোথাও বাস থামায়নি। দ্রুতই ফিরতে পেরেছি।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version