সরকারি দলের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ধর্মীয় সংখ্যালঘু স্বার্থবান্ধব অঙ্গীকারসমূহ ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ। প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে আলোচনার পাশাপাশি রাজপথের আন্দোলনকে তীব্রতর করতে তারা সারা দেশে তিনমাসব্যাপী নানা কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। নির্ধারিত সময়ে দাবিসমূহ বাস্তবায়িত না হলে আগামী ৬ অক্টোবর রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে ঐক্য পরিষদ।
শুক্রবার ঢাকার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সেমিনার কক্ষে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভায় এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। ঐক্য পরিষদের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সরকারি দলের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ধর্মীয় সংখ্যালঘু স্বার্থবান্ধব অঙ্গীকারসমূহ বাস্তবায়নের দাবিতে সমমনা সব ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর সংগঠনসমূহকে সমন্বয় করে ঘোষিত কর্মসূচিসমূহ পালন করা হবে। রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের সকল জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ৮ সেপ্টেম্বর, ময়মনসিংহ ও রংপুর বিভাগে ১৫ সেপ্টেম্বর, সিলেট বিভাগে ১৬ সেপ্টেম্বর, চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগে ২২ সেপ্টেম্বর, ঢাকা বিভাগের সকল জেলা-উপজেলায় ২৩ সেপ্টেম্বর সকাল-সন্ধ্যা গণঅনশন এবং বিকেল ৩টা থেকে ৬টা পর্যন্ত গণসমাবেশের কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
আর ঢাকায় ২২ ও ২৩ সেপ্টেম্বর ৪৮ ঘণ্টার কেন্দ্রীয় গণঅনশন ও গণসমাবেশ কর্মসূচি পালিত হবে। সভায় আরেক প্রস্তাবে আগামী ৬ অক্টোবর শুক্রবার দুপুর ২টায় ঢাকায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সংখ্যালঘু ঐক্যমোর্চাসহ মহাসমাবেশ আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
সভায় অতীতের যেকোনো ক্রান্তিকালে বা নির্বাচনের পূর্বাপর সংঘটিত ঘটনার নির্মম অভিজ্ঞতার আলোকে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে শঙ্কা ও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। আর ধর্মান্ধ-সাম্প্রদায়িক মহলবিশেষ আবারো এদেশের ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর ওপর অব্যাহত হামলাকে অধিকতর জোরদার করতে পারে এবং এ ধরনের পরিস্থিতি আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা বিপন্ন করতে পারে। তাই দেশের ও বিদেশের মানবতাবাদী দেশপ্রেমিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও জনগণের সবাইকে সজাগ, সতর্ক ও সচেতন থাকার উদাত্ত আহব্বান জানানো হয়।
সভায় ২০১৮ সালের নির্বাচনের পূর্বে প্রতিশ্রুত সংখ্যালঘু স্বার্থবান্ধব অঙ্গীকারসমূহ বাস্তবায়নে যথাযথ উদ্যোগ অদ্যাবধি না নেয়ায় গভীর ক্ষোভ প্রকাশ করে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে তা বাস্তবায়নে সরকারের কাছে জোর দাবি জানানো হয়।
সংগঠনের তিন সভাপতি সাবেক এমপি ঊষাতন তালুকদার, ড. নিমচন্দ্র ভৌমিক ও নির্মল রোজারিওর পর্যায়ক্রমিক সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সভায় ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সকল পর্যায়ের কর্মকর্তা, অঙ্গসংগঠনসমূহের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং ৭৪টি সাংগঠনিক জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক উপস্থিত ছিলেন। সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট দিপংকর ঘোষ, অধ্যক্ষ সুখেন্দু শেখর বৈদ্য ও শ্যামল পালিত সামগ্রিক সভার সঞ্চালনা করেন।
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত তার বক্তব্যে সরকারি দলের নির্বাচনী প্রতিশ্রæতি বাস্তবায়নের আন্দোলনের বিষয় সবাইকে অবহিত করার পর বিভিন্ন জেলা ও মহানগর নেতৃবৃন্দসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ আন্দোলনের পরবর্তী রূপরেখা প্রণয়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
সভায় গৃহীত প্রস্তাবে ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস পালনকল্পে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতির প্রতি সুগভীর শ্রদ্ধা নিবেদনার্থে আগামী ১৪ আগস্ট ২০২৩ সোমবার সন্ধ্যায় ঢাকাসহ সারা দেশে আলোর মিছিল বের করে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতির সামনে প্রদীপ প্রজ্বলনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
আর দাবি আদায়ের আন্দোলন আরো জোরালো করতে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে শুভেচ্ছা জ্ঞাপন, চলমান আন্দোলনের কর্মসূচি ও সংগঠনের দাবিসমূহ নিয়ে গণতন্ত্র ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সকল রাজনৈতিক দল এবং বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশি কূটনীতিক ও মিশনপ্রধানদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। একই সঙ্গে সংগঠনের বিদেশি শাখাসমূহ ৭ দফা দাবিসংবলিত স্মারকলিপি স্ব স্ব রাষ্ট্রের মিশনপ্রধানদের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী সমীপে স্মারকলিপি যাতে প্রদান করে তজ্জন্য প্রবাসী নেতৃবৃন্দের সঙ্গে যোগাযোগের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
সভার আরেক প্রস্তাবে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর নির্বাচনের সকল পর্যায়ে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা, নির্বাচনকালীন, নির্বাচন পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সময়ে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন-নিপীড়ন ও সহিংসতা প্রতিরোধ ও সুরক্ষা, নির্বাচনী প্রচারণায় সাম্প্রদায়িকতা ও ধর্মীয় বিদ্বেষ না ছড়ানো এবং সকলের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জাতীয় নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে স্মারকলিপি পেশের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য