-->
শিরোনাম

নির্বাচন সামনে রেখে তিন স্তরে বড় পরিবর্তনের উদ্যোগ

মোতাহার হোসেন
নির্বাচন সামনে রেখে তিন স্তরে বড় পরিবর্তনের উদ্যোগ

মোতাহার হোসেন: পুলিশ প্রশাসন ও জনপ্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয় থেকে শুরু করে জনপ্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনে কর্মকর্তা পদে পরিবর্তন আনার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

 

বিশেষ করে সচিব, অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম সচিব, উপসচিব পদে রদবদল করা হচ্ছে। একই সঙ্গে বিভাগীয় কমিশনার, পুলিশের ডিআইজি, মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার, জেলায় জেলা প্রশাসক, জেলা পুলিশ সুপার ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, থানায় ওসি পর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি করা হচ্ছে।

 

ইতোমধ্যে সচিব পদে ৩ জন, ৪০ জেলায় নতুন ডিসি নিয়োগ করা হয়েছে। একইভাবে দেশের কয়েকটি জেলার জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়েছে।

 

প্রশাসন সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সমাগত হওয়ায় প্রশাসনের তিন স্তরে কর্মকর্তাদের বদলির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। অবশ্য সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার বলেছেন, নির্বাচন সামনে রেখে প্রশাসনকে তিন স্তরে সাজাচ্ছে সরকার। অন্য সময়ের তুলনায় নির্বাচন সামনে রেখে প্রশাসনে ব্যাপক রদবদল কার্যক্রম বহুদিন ধরে চলে আসছে। তিনি দায়িত্বে থাকার সময়েও এ রকম করেছেন উল্লেখ করে জনাব মজুমদার বলেন, এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়।

 

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেছেন, প্রশাসনে নিয়োগ-বদলি স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় হয়ে থাকে। তবে মাঝে মধ্যে মেয়াদ পূরণের আগে প্রয়োজনে বা কোনো কর্মকর্তাকে ওই পদের জন্য অপরিহার্য মনে না করলে সরকার তাকে সেই পদ থেকে সরিয়ে অন্যত্র বদলি অথবা জনপ্রশাসনে সংযুক্তি দিতে পারেন। আবার মেয়াদ পূর্তির আগে অন্য কোনো পদে, অন্য কোনো স্থানে সরকার চাইলে যেকোনো কর্মকর্তাকে বদলি, সংযুক্তি, পদায়ন করতে পারে।

 

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা ভোরের আকাশকে জানান, প্রশাসনের প্রয়োজনে জনপ্রশাসনে কর্মরত কর্মকর্তাদের বিভিন্ন সময়ে রদবদল করা হয়ে থাকে। এরই অংশ হিসেবে বর্তমানেও প্রশাসনে বিভিন্ন স্তরে জনপ্রশাসনে পরিবর্তন তথা রদবদল প্রসঙ্গে সংশ্লিষ্ট মহল থেকে বলা হচ্ছে, ‘প্রশাসনের সর্বস্তরে কাজের গতি আনতে’ সচিব, অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম সচিব, উপসচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের (দায়িত্বে মেয়াদ পূর্তি সাপেক্ষে) বদলি করার বিধান মেনেই কর্মকর্তাদের রদবদল করা হচ্ছে। পাশাপাশি মাঠ পর্যায়ে প্রশাসন ও পুলিশে বড় ধরনের রদবদল হতে চলেছে। পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন জেলা প্রশাসক এবং পুলিশ সুপারদের তত্ত্বাবধানে অনুষ্ঠিত হবে, এজন্য একে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট মহল।

 

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, পুলিশ বিভাগে বড় ধরনের রদবদল হবে। সূত্র জানায়, ডিসি এবং এসপিরা বদলি হওয়ার আগে প্রায় তিন বছরের জন্য একটি জেলায় নিযুক্ত হন। নির্বাচনের সময় জেলা প্রশাসকরা রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং এসপিরা নিজ নিজ জেলায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বজায় রাখতে দায়িত্ব পালন করেন।

 

সূত্র জানায়, জেলাগুলোতে সরকার শিগগিরই নতুন ডিসি ও এসপি নিয়োগ দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। এর অংশ হিসেবে গত কয়েক দিনে জনপ্রশাসন সচিবকে বদলি করা হয়েছে। পুলিশ সুপার, ডিসি, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, ওসি পর্যায়ে প্রায় দেড় শতাধিক কর্মকর্তাকে বদলি করে নতুন কর্মস্থলে পদায়ন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রশাসনে ২২তম ব্যাচের ক্যাডারদের যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

 

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রশাসনিক সংস্থা সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ড (এসএসবি) সম্প্রতি এ সংক্রান্ত একটি সভা করে, যা সরকারি কর্মচারীদের চাকরির রেকর্ড যাচাই-বাছাই করে তাদের উচ্চ পদে পদোন্নতির জন্য সুপারিশ করে। এসব পদোন্নতি জুলাইয়ের মধ্যে কার্যকর হতে পারে। অবশ্য পুরোনো ডিসিদের প্রত্যাহার করে প্রায় ৪০ জন নতুন ডিসি নিয়োগ দিয়েছে। যাদের বেশিরভাগ ইতোমধ্যে তাদের মেয়াদ শেষ করেছেন।

 

দুই থেকে তিনজন ডিসিকে বদলি করা হতে পারে বলে সূত্র জানিয়েছে। অধিকাংশ ডিসি ২৭তম ব্যাচ থেকে পদায়ন করা হবে, যাদের নিয়োগ ফখরুদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়। তবে ২৫তম ব্যাচের কয়েকজন ডিসিকে পদায়ন করা হবে। ইতোমধ্যে ডিসি হিসেবে নিযুক্ত ১৫ সরকারি কর্মকর্তাই ২৫তম ব্যাচের।

 

বর্তমানে ২৬ জেলার মধ্যে ২০ জন ডিসি ২২তম ব্যাচের, ২৯ জন ২৪তম ব্যাচের এবং ১৫ জন ২৫তম ব্যাচের। ২২তম ব্যাচের ডিসিরা তাদের মেয়াদ শেষ করেছেন। গত ১২ মে ১১৪ জন যুগ্ম সচিবকে অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি দেয় সরকার। এ পদোন্নতির মাধ্যমে অতিরিক্ত সচিবের সংখ্যা দাঁড়াল ৪২০ জন।

 

এদিকে, পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (প্রশাসন) মো. কামরুল আহসান বলেন, তারা কর্মকর্তাদের ইন-সিটু পদোন্নতির প্রস্তাব পাঠিয়েছেন এবং এটি এখন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে রয়েছে। রদবদলের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা নিয়মিত প্রক্রিয়া। তিনি বলেন, যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে রদবদল করা হবে।

 

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ সদর দপ্তরের সূত্র জানায় , যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসানীতি ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে সরকার পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি সম্পন্ন পুলিশ কর্মকর্তাদের সামনে আনতে চায়। সে অনুযায়ী, পুলিশ সদর দপ্তর ১৫তম বিসিএস ব্যাচ থেকে ১৬ জন অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শককে (গ্রেড-২) অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-১) পদে পদোন্নতি চেয়েছে।

 

প্রস্তাবটি অনুমোদিত হলে অতিরিক্ত আইজিপি পদমর্যাদার ৬ জন কর্মকর্তা পুলিশ সদর দপ্তরে এবং অতিরিক্ত আইজিপি পদমর্যাদার ১০ জন কর্মকর্তাকে সিআইডি, পুলিশ টেলিকম, রেলওয়ে ও হাইওয়ে পুলিশ, পিবিআই, শিল্প পুলিশ, সন্ত্রাসবিরোধী ইউনিট (এটিইউ), সারদা পুলিশ একাডেমি, পুলিশ স্টাফ কলেজ ও আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নে নিয়োগ দেয়া হবে।

 

এছাড়া পুলিশ সদর দপ্তর ১৭তম বিসিএস ব্যাচ থেকে ৩৪ জন ডেপুটি আইজিপিকে অতিরিক্ত আইজিপি, ২২তম ব্যাচের ১৫৭ জন অতিরিক্ত ডিআইজিকে ডিআইজি পদে, ২৪তম ব্যাচের ২৬৬ জন এসপি পদমর্যাদার কর্মকর্তাকে অতিরিক্ত ডিআইজি এবং ২৮তম ও ২৯তম ব্যাচ থেকে ২৪৭ জন অতিরিক্ত এসপিকে এসপি হিসেবে পদোন্নতি দিতে প্রস্তাব করেছে।

 

অন্যদিকে, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপি) ইতোমধ্যে ৩১ মে নতুন কমিশনার পেয়েছে এবং রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ শিগগিরই নতুন কমিশনার পাবে বলে জানা গেছে। এর আগে গত বছরের ৩ আগস্ট ৪০টি জেলায় নতুন এসপি নিয়োগ দেয়া হয়।

 

নতুন পদায়নের জন্য ইতোমধ্যেই ২০ থেকে ২৫ জন এসপির জন্য একটি নতুন তালিকা চ‚ড়ান্ত করা হয়েছে। ২৫তম এবং ২৭তম ব্যাচের কর্মকর্তারা পদায়নের জন্য অগ্রাধিকার পাবেন বলে পুলিশ সদর দপ্তরের এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানিয়েছেন। ২০০৬ সালে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের সময় ২৫তম ব্যাচে নিয়োগ দেয়া হয়। প্রত্যাশা থাকবে নতুনভাবে পদায়ন হওয়া কর্মকর্তারা জনসেবা, জনগণের উন্নয়ন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বজায় রাখতে বলিষ্ঠ ভ‚মিকা রাখবেন।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version