-->
শিরোনাম
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচন কাল

ভোটার উপস্থিতির চেয়ে নির্বাচন সুষ্ঠু করার দিকে নজর ইসির

শাহীন রহমান
ভোটার উপস্থিতির চেয়ে নির্বাচন সুষ্ঠু করার দিকে নজর ইসির

শাহীন রহমান: আগামীকাল সোমবার অনুষ্ঠিত হবে ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচন। ইতোমধ্যে এই নির্বাচনের প্রার্থীদের প্রচার শেষ হয়েছে। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ব্যালটের মাধ্যমে ভোট গ্রহণ করা হবে। জাতীয় নির্বাচনে আগে ব্যালটের মাধ্যমে ঢাকার-১৭ আসনের নির্বাচনকে ট্রায়াল হিসেবে দেখছে ইসি। এছাড়াও ভোটার উপস্থিতির নির্বাচন সুষ্ঠু করার প্রতিই বেশি নজর তাদের। নির্বাচন নিয়ে যাতে কোনো ধরনের বিতর্ক সৃষ্টি না হয়, সেদিকে কড়া দৃষ্টি রাখতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

 

আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার বিষয়ে বিদেশি কূটনীতিকরা একের পর বাংলাদেশ সফরে আসছেন। নির্বাচন সুষ্ঠু করার ওপর জোর দিয়ে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে বৈঠক করেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বেসামরিক নিরাপত্তা এবং গণতন্ত্র ও মানবাধিকার বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া ও দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু।

 

এছাড়া ইউরোপীর ইউনিয়নের একটি প্রতিনিধি দলও বাংলাদেশ সফরে রয়েছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সরকারের বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে তারা ধারাবাহিক বৈঠক করে যাচ্ছেন। তাদের এই সফরের মধ্যেই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচন। এছাড়াও আসনটি কূটনৈতিক এলাকার আওতাভুক্ত। ফলে এই নির্বাচনের প্রভাব কূটনীতিকদের যেমন নজর কাড়বে, তেমনি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এর প্রভাব পড়তে পারে। এ কারণেই ইসি কর্মকর্তারা বলছেন ভোটার উপস্থিতি যাই হোক, নির্বাচন যেন সুষ্ঠু হয় সেদিকে নজর দিতে হবে। ভোটার উপস্থিতি বাড়ানোর দায়িত্ব প্রার্থীদের। ব্যালটের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

 

উপনির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও ঢাকার সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. মুনীর হোসাইন খান জানান, ইতোমধ্যে আইনশৃঙ্খলা নিয়ে বৈঠক হয়েছে। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে কমিশন প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছে। ভোটের সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। তিনি জানান, ভোটের আগের দিন আজ রোববার কেন্দ্রে কেন্দ্রে নির্বাচনী সামগ্রী পাঠানো হবে। ভোটের দিন ভোরে বনানীর একটি নির্ধারিত জায়গা থেকে ব্যালট পেপার কেন্দ্রে পাঠানো হবে।

 

এই কমিশনের অধীনে ব্যালট পেপারে প্রথমবারের মতো সংসদীয় আসনের উপনির্বাচন হতে যাচ্ছে। নির্বাচন সামনে রেখে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। নির্বাচনে ৮ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ঢাকার বুকে অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনের প্রার্থীদের প্রচার চলেছে অনেকটা নীরবেই। ফলে আলোচনার কেন্দ্রে নেই এই আসনের উপনির্বাচন। তবে আলোচিত কন্টেন্ট ক্রিয়েটার আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলমের প্রচারে কিছুটা হলেও নজর কেড়েছে। পাশাপাশি নির্বাচনী প্রচারে সক্রিয় ছিলেন আওয়ামী লীগের নৌকা মার্কার প্রার্থী মোহাম্মদ আলী আরাফাত।

 

এর বাইরে জাতীয় পার্টির সিকদার আনিসুর রহমান, জাকের পার্টির কাজী মো. রাশিদুল হাসান, সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের মো. আকতার হোসেন, বাংলাদেশ কংগ্রেসের রেজাউল করিম স্বপন, তৃণমূল বিএনপির শেখ হাবিবুর রহমান, স্বতন্ত্র তরিকুল ইসলাম ভূঞা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও নির্বাচনী প্রচার চোখে পড়েনি।

 

এ আসনের উপনির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি নিয়ে চিন্তায় রয়েছে ইসি। তবে ভোটার উপস্থিতির চেয়ে ভোট সুষ্ঠু করার পক্ষেই নজর বেশি তাদের। সব কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। নির্বাচন ভবন থেকে ভোট পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হবে। নির্বাচন সুষ্ঠু করতে গত ৪ জুলাই আইনশৃঙ্খলা নিয়ে ইসির সভা হয়েছে।

 

সভা শেষে ইসি সচিব জানান, নির্বাচন কমিশনের বার্তা একটি সুষ্ঠু, সুন্দর নির্বাচন করা। পুলিশ প্রশাসনের প্রতি শতভাগ আস্থা রয়েছে ইসির। এই উপনির্বাচন সুষ্ঠু করতে ইসির নির্দেশনা অনুযায়ী সুষ্ঠু ভোট আয়োজনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সব ধরনের পদক্ষেপ নেবে বলেও আশ্বাস মিলেছে। ঢাকার পুলিশ কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক পুলিশের নিরপেক্ষ ভূমিকার ‘গ্যারান্টি’ দিয়েছেন।

 

এদিকে ঢাকা-১৭ উপ-নির্বাচনে প্রার্থীদের প্রচার শেষ হয়েছে। ইসির নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ভোট শুরুর আগে প্রার্থীদের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটানো হলে তার প্রার্থিতা বাতিল করা হবে। নির্বাচন পরিচালনা শাখার উপসচিব মো. আতিয়ার রহমান স্বাক্ষরিত এক নির্দেশনায় এই সতর্কতা দেয়া হয়েছে।

 

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ১৫, ১৮, ১৯ ও ২০ ওয়ার্ড এবং ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট এলাকা নিয়ে গঠিত ঢাকা-১৭ আসন। গত ১৫ মে এই আসনের এমপি চিত্রনায়ক আকবর হোসেন পাঠান ফারুকের মৃত্যুর পর ঢাকা-১৭ আসনটি শূন্য হয়। এদিকে আগামীকাল অনুষ্ঠিত উপনির্বাচনের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ স্থানে চেকপোস্ট (নিরাপত্তা চৌকি) বসাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোকে নির্দেশনা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন ।

 

প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল স্বাক্ষরিত নির্দেশনায় নির্বাচনী এলাকার প্রবেশ পথে এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থানসমূহে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চেকপোস্ট বসাতে হবে। নির্বাচন শেষ না হওয়া পর্যন্ত চেকপোস্টগুলো সার্বক্ষণিকভাবে চালু থাকবে। মহিলা, শারীরিক প্রতিবন্ধী ও হিজরা ভোটাররা যাতে নিরাপদে, নির্বিঘ্নে ও স্বাচ্ছন্দ্যে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন, সে লক্ষ্যে কর্তব্যরত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা প্রয়োজনীয় আইনানুগ সহায়তা প্রদান করবে।

 

এছাড়া বলা হয়েছে, ভোটের দিন সংশ্লিষ্ট মহাসড়কে যানজট নিরসনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এ বিষয়ে পুলিশ কর্তৃপক্ষ সার্বিক সহায়তা ও নিরাপত্তা প্রদান নিশ্চিত করবে।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version