-->

অংশীজনের সঙ্গে ফের ইসিতে সংলাপ

শাহীন রহমান
অংশীজনের সঙ্গে ফের ইসিতে সংলাপ

শাহীন রহমান: নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক অচলাবস্থা নিরসনে সংলাপের বিষয়টি সামনে এসেছে। সংকট উত্তরণে সংলাপই মুখ্য ভূমিকা রাখতে পারে বলে বিভিন্ন মহল থেকে বলা হচ্ছে। কিন্তু এর দায়-দায়িত্ব কে নেবে বা নিতে পারে তা নিয়ে চলছে কানাঘুষা। জানা গেছে, সংলাপের বিষয়ে এখনো কোনো অগ্রগতি নেই। কবে কোথায় সংলাপ হবে অথবা সংলাপ আদৌ হবে কিনা তা নিয়ে অস্পষ্টতা রয়েছে।

 

তবে রাজনৈতিক এই অচলাবস্থার মধ্যে ফের সংলাপের উদ্যোগ নিয়েছে ইসি। বিশেষ করে সম্প্রতি সংসদে পাস হওয়া আরপিও সংশোধন নিয়ে যে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে, তা নিরসনেই এই সংলাপের আয়োজন বলে জানা গেছে। সেই সংলাপে রাজনৈতিক কোনো এজন্ডা আছে কিনা জানা যায়নি।

 

ইসি কর্মকর্তারা জানান, সম্প্রতি সময়ে আরপিও সংশোধনে ইসির ক্ষমতা কমানো নিয়ে একটা বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে, তা নিরসনেই ইসির পক্ষ থেকে স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে আলোচনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সেখানে মুলত আরপিও সংশোধনের বিষয় নিয়ে আলোচনা হতে পারে। বিশেষ করে নির্বাচন বিশেষজ্ঞ, সুশীল সমাজ ও গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের নিয়ে বসছে নির্বাচন কমিশন। আপাতত কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপের কোনো এজেন্ডা ইসির নেই। তবে আলোচনায় ঘুরেফিরে গুরুত্ব পাবে আগামী নির্বাচন ও রাজনৈতিক দলগুলোর দাবি-দাওয়ার বিষয়টি।

 

ইসি শুরু থেকে বলছেন, দেশে কোন পদ্ধতিতে নির্বাচন হবে তা ঠিক করার দায়িত্ব রাজনৈতিক দলগুলোর। এজন্য প্রতিষ্ঠানটি সমস্যা সমাধানের জন্য দলগুলোর মধ্যে সমঝোতার কথা বলে আসছে বারবার। সম্প্রতি ইইউর প্রাক-নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দলের ইসির সঙ্গে আগামী নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সেখানে আগামী নির্বাচন নিয়ে ইসির প্রস্তুতির কথা ইইউকে জানিয়েছে ইসি। তবে কোন পদ্ধতিতে নির্বাচন হবে তা ঠিক করার দায়িত্ব ইসির নয় বলে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। ইসি সচিব এ বিষয়ে বলেছেন, ইসির দায়িত্ব নির্বাচন পরিচালনা করা। সুষ্ঠু নির্বাচনে ইসি সব ধরনের পদক্ষেপ নেবে।

 

কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন ইসি দায়িত্ব নেয়ার পর রাজনৈতিক দলসহ বিভিন্ন মহলের সঙ্গে সংলাপ করেছেন। তবে ইসির এবারের সংলাপে বিএনপি অংশ নেয়নি। এমনকি রাষ্ট্রপতির সংলাপের আমন্ত্রণ বিএনপি প্রত্যাখ্যান করেছে। শুধু বিএনপি নয়, সমমনা বেশ কয়েকটি দলও ইসি ও রাষ্ট্রপতির সংলাপ বর্জন করে। ইসির সংলাপে ঘুরেফিরে দলীয় সরকারে অধীনে নির্বাচনের প্রসঙ্গ বেশি আলোচিত হয়েছে। বিভিন্ন মহল থেকে ইসিকে বলা হয়েছে, দলীয় সরকারের প্রশাসনের অধীনে থেকে সুষ্ঠু নির্বাচন পরিচালনা করা বড় চ্যালেঞ্জ। কিন্তু ইসি বারবারই রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিষয়টি রাজনীতিবিদদের সিদ্ধান্তের ওপর ছেড়ে দিয়েছে।

 

ইসি সূত্রে জানা গেছে, আরপিও সংশোধনের বিভ্রান্তি নিরসনে আগামী বৃহস্পতিবার মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়েছে। ইসিতে আসার জন্য অংশীজনদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। ওই দিন বেলা ১১টায় অনুষ্ঠেয় এ মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করবেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। নির্বাচন কমিশন সচিব জাহাংগীর আলমের স্বাক্ষরিত আমন্ত্রণপত্র এরই মধ্যে (১৩ জুলাই) সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের কাছে বিতরণও করা হয়েছে।

 

ইসির অতিক্তি সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, ‘আরপিও সংশোধন পাস হয়েছে। ৯১ অনুচ্ছেদের একটি ধারা নিয়ে অনেকে নানা ধরনের আলোচনা-সমালোচনা করছেন, অনেকে ভিন্নতর ব্যাখ্যা দিচ্ছেন। এটা নিয়ে যে অস্পষ্টতা, তা দূর করতে এই মতবিনিময় সভায় অংশীজনদের কাছে ব্যাখ্যা তুলে ধরা হবে।

 

তিনি জানান, আমন্ত্রিত ব্যক্তিদের মতামত ও পরামর্শ নেয়া হবে। সেই সঙ্গে যাদের ভুল ধারণা রয়েছে, কমিশনের ব্যাখ্যা পেয়ে তা নিরসন হবে।

 

আরপিও ৯১ অনুচ্ছেদের সংশোধনী এনে অনিয়মের অভিযোগে ভোট বন্ধে নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা কমানো হয়েছে দাবির মধ্যে ৪ জুলাই বিরোধীদের আপত্তির মুখে সংসদে পাস হয় গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) সংশোধনী বিল, ২০২৩। তবে আইনমন্ত্রী এসব অভিযোগ নাকচ করে দাবি করেছেন, বিদ্যমান আইনের ৯১এ অনুচ্ছেদে ভোট বন্ধের ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের রয়েছে। ইসির ক্ষমতা কমানো হয়নি বরং এ নিয়ে বিরোধীরা জনগণকে বিভ্রান্ত করছে।

 

সবশেষ ১০ জুলাই সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল ব্রিফিংয়ে এসে দাবি করেছেন, আরপিও সংশোধনের ফলে নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা ‘আরো বেড়েছে ও সুসংহত হয়েছে’। ভোট বন্ধে ইসির কোনো ক্ষমতা ‘রহিত হয়নি’, বরং আরপিও সংশোধন নিয়ে জনগণকে ‘বিভ্রান্ত করা হচ্ছে, ইসিকে হেয় করা হচ্ছে’। ৯১ অনুচ্ছেদের এ ধারায় ‘ইলেকশন’ শব্দের পরিবর্তে ‘পোলিং’ শব্দটি ব্যবহারে ভোটে ইসির ক্ষমতা কমেছে বলে নির্বাচন বিশ্লেষকরা বলে এসেছেন। তবে সিইসি দাবি করছেন, এটা ‘অপব্যাখ্যা’ করা হচ্ছে, যা ‘দুঃখজনক’।

 

সিইসির মতে, ’৯১এ ধারায় কোনো পরিবর্তন যদি হতো, তাহলে আমাদের ক্ষমতা হেরফের হতো। সেখানে কিছু করা হয়নি। এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ধারা যেখানে পোলিং পিরিয়ডে আমরা যেকোনো একটি-দুটি কেন্দ্র বা সমস্ত কন্সটিটিউয়েন্সির ভোট আমরা বাতিল করে দিতে পারব। সে ক্ষমতা হুবহু আগের মতো রয়েছে।

 

সংশোধনে নতুন দফা ‘৯১এ’ সংযোজনের বিষয়ে তিনি জানান, নির্বাচন হয়ে যাওয়ার পর তার ফল সরকারিভাবে পাঠানোর পরে ইসির গেজেট করা ছাড়া আর কোনো কাজ থাকে না। এখন অভিযোগ থাকলে গেজেট উইথহেল্ড করতে পারব, সেক্ষেত্রে কন্সটিটিউয়েন্সির নির্বাচনটা বাতিল না করে যে যে কেন্দ্রে ফলাফল বাধাগ্রস্ত হয়েছে মনে করবে, সেসব কেন্দ্রে ফলাফল বাতিল করতে পারবে।

 

তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধভাবে করতে হলে সব দলের অংশগ্রহণের মাধ্যমেই করতে হবে, না হলে এর গ্রহণযোগ্যতা হারাতে পারে। একইভাবে দেশের স্থিতিশীলতা বিনষ্ট হতে পারে, আর্থিকভাবেও দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এ আশঙ্কা রয়ে যায়।

 

তবে ইসিতে রাজনৈতিক সংলাপ না হলেও ইসির দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, সংলাপের জন্য ইসির পথ উন্মুক্ত। সুষ্ঠু ভোট আয়োজনে আমরা আন্তরিক। রাজনৈতিক দলগুলো ভেদাভেদ ভুলে এক প্ল্যাটফরমে এলে সংলাপের আয়োজন করতে পারে সাংবিধানিক সংস্থা নিজেই।

 

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, বিএনপি ও আওয়ামী লীগ আলোচনার মাধ্যমে যদি সমাধান না করে, তাহলে সংঘাত হবে। এমন পটভ‚মিতে দুই দল সংলাপে বাধ্য হবে বলে তিনি মনে করেন।

 

তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংলাপ সফল হওয়ার জন্য দলগুলোর মধ্যে একটা সমপর্যায়ের সক্ষমতা থাকতে হবে। কিন্তু এখানে সেটি খুবই কম দেখতে পাওয়া যায়। আদর্শ ভিন্ন হতে পারে। কিন্তু বিশ্বাসের দিক থেকে কাছাকাছি থাকতে হয়। আওয়ামী লীগ-বিএনপি মুখে গণতন্ত্রের কথা বললেও তারা দলের অভ্যন্তরে এবং ব্যক্তিগতভাবে এতে বিশ্বাস করে না।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version