-->
শিরোনাম
ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচন

নৌকার প্রার্থী আরাফাত জয়ী

নিজস্ব প্রতিবেদক
নৌকার প্রার্থী আরাফাত জয়ী

ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে বেসরকারি ফলে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থী মোহাম্মদ এ আরাফাত। নির্বাচনের পর ভোট গণনা শেষে রিটার্নিং কর্মকর্তা মনির হোসাইন খান এ ফল ঘোষণা করেন।

 

এ আসনের নির্বাচনে ১২৪ কেন্দ্রের মধ্যে মোহাম্মাদ আরাফাত পেয়েছেন ------------ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মো. আশরাফুল হোসেন ওরফে হিরো আলম পেয়েছেন---- ভোট। সোমবার সন্ধ্যা ৬টায় রাজধানীর বনানী বিদ্যানিকেতন স্কুল অ্যান্ড কলেজে স্থাপিত নির্বাচনী ফল পরিবেশন কেন্দ্র থেকে তিনি এ ফল ঘোষণা করেন।

 

এর আগে সকাল ৮টায় ভোট শুরু হয়। তা বিরতি ছাড়াই শেষ হয় বিকেল ৪টায়। এরপর শুরু হয় গণনা। ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে মোট ভোটার ৩ লাখ ২৫ হাজার ২০৫ জন। ভোট সুষ্ঠু পরিবেশে অনুষ্ঠিত হলেও ভোটার উপস্থিতি ছিল একেবারেই কম।

 

ভোট শেষে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেন, উপনির্বাচনে ১২ থেকে ১৪ শতাংশ ভোট পড়েছে। তিনি বলেন, ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনের ভোটগ্রহণ সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে হয়েছে। এ পর্যন্ত কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা দেখিনি।

 

এদিকে, ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচন সকাল থেকে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে হলেও প্রায় সব কেন্দ্রেই ভোটার উপস্থিতি ছিল হাতেগোনা। ভোটের শেষ সময়ে এসে নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলমের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। হিরো আলম প্রথম থেকেই অভিযোগ করে আসছিলেন, সব কেন্দ্রে থেকেই তার এজেন্ট বের করে দেয়া হয়েছে। এদিকে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির প্রার্থী ভোটের পরিবেশে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। তবে একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী ভোটে সুষ্ঠু পরিবেশ নেই বলে বর্জনও করেন।

 

দুপুরে ভোটের পরিবেশ দেখতে বিভিন্ন কেন্দ্র পরিদর্শন করেন নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা ও আহসান হাবিব খান। পরে সাংবাদিকদের রাশেদা সুলতানা বলেন, ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি তুলনামূলক কম হলেও সুষ্ঠু পরিবেশে ভোট হচ্ছে। অনিয়মের অভিযোগও পাওয়া যায়নি। ভোটের পরিবেশ ভালো। এজেন্টের সঙ্গে কথা বলেছি। ভোটারদের বাধা দেয়া, প্রতিবন্ধকতা ছিল না। সিসিটিভি ক্যামেরায়ও ভোটের কোনো অনিয়ম দেখিনি। কোনো অভিযোগও কেউ দেয়নি।

 

এ সময় তিনি কম ভোটার উপস্থিতির বিষয়ে ব্যাখা দিয়ে বলেন, ভোটার উপস্থিতিটা আমরা একটু দেখতে পাচ্ছি কম। কারণ হিসেবে আমার ব্যক্তিগত ধারণা, স্বল্প সময়ের মেয়াদ আছে এ সংসদের, এ জন্য ভোটারদের আগ্রহ কম হতে পারে। আর অভিজাত এলাকায় অনেকে হয়তো এ ভোট নিয়ে অতটা আগ্রহী নাও হতে পারে। টিপটিপ বৃষ্টি হচ্ছিল সকালে, এ জন্য হয়তো সকালে আসেনি অনেকে।

 

এদিকে ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ নেই অভিযোগ করে নির্বাচন বর্জন করেন স্বতন্ত্র প্রার্থী তারেকুল ইসলাম ভ‚ঞা। ৯টায় বনানী মডেল স্কুলে কেন্দ্র পরিদর্শন শেষে ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়ে তারেকুল বলেন, আমি একজন ছোট প্রার্থী। প্রশাসন আমার লোক ঢুকতে দিচ্ছে না। আমাকে যদি সবাই মিলে সহযোগিতা করত তাহলে একটা কথা ছিল। বিএনপি এবং সরকারবিরোধী দলের এতদিনের করা অভিযোগই সত্য প্রমাণ হলো। আমি আমার ভোটের কার্যক্রম থেকে সরে দাঁড়ালাম। আমি নির্বাচন বর্জন করলাম।

 

বিকেল ৩টার পর বনানী বিদ্যানিকেতন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভোটকেন্দ্র পরিদর্শনে গিয়ে হামলার মুখে পড়েন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিরো আলম। তাকে মারতে মারতে ভোট কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া হয়। হিরো আলমের ওপর যারা হামলা চালিয়েছে তাদের সবাই নৌকার ব্যাজ পরা ছিল। এর আগে সকালে বনানী মডেল স্কুল কেন্দ্র পরিদর্শন গিয়ে হিরো আলম অভিযোগ করেছিলেন, আওয়ামী লীগের লোকজন তার এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দিচ্ছে। যখনই বলতেছে একতারার লোক, হিরো আলমের লোক, তখনই কিন্তু বের করে দিতেছে। তাহলে এই রকম করে এজেন্ট বের করে দেয়ার মানে হইল, তারা একতরফা তাদের এজেন্ট দিয়ে সিল মারার চেষ্টা করতেছে।

 

তবে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির প্রার্থী ভোটের পরিবেশ নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন। ভোটার উপস্থিতি কম হলেও ভোটের পরিবেশ ‘ভালো’ দাবি করেন লাঙ্গলের প্রার্থী সিকদার আনিসুর রহমান। ভোট দিয়ে বলেন, খুবই ভালো লাগছে। ভোটের জন্য আদর্শ দিন। সবাই ভোট দিতে এলে এবং লাঙ্গলে ভোট দিলে লাঙ্গল বিজয়ী হবে।

 

আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোহম্মদ আলী আরাফাত ভোট প্রদান শেষে বলেন, জয় নিয়ে কোনো ‘সংশয়’ নেই, তার চিন্তা শুধু কতভাগ ভোটার কেন্দ্রে যাবেন, তা নিয়ে। গুলশান মডেল হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে নিজের ভোট দিয়ে নৌকার প্রতীকের এ প্রার্থী বলেন, জয়ের বিষয়ে আমরা আশাবাদী। আমাদের চেষ্টা ছিল মানুষকে ভোট দিতে নিয়ে আসা। আমাদের একটা চ্যালেঞ্জ ছিল, মানুষকে ভোট দিতে আনা। কারণ, মাত্র ৫-৬ মাসের নির্বাচন।

 

একটা অনীহা থাকে। বনানী বিদ্যানিকেতন স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে ভোট দিয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, ভোটার উপস্থিতি কম, তবে কোথাও ঝামেলা হয়নি। কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। পোলিং এজেন্ট বের করে দেয়ার কোনো ধরনের ঘটনা কানে আসেনি।

 

এদিকে সকাল থেকে আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশনের অডিটরিয়ামে স্থাপিত নিয়ন্ত্রণ কক্ষে বসে ভোটের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার, নির্বাচন কমিশনার ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এদিন তারা ঢাকা-১৭ উপনির্বাচনের পাশাপাশি যশোরের বেনাপোল ও পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া পৌরসভার নির্বাচন সিসি ক্যামেরায় পর্যবেক্ষণ করেন।

 

নতুন নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব নেয়ার পর এবারই প্রথমবারের মতো ব্যালটে অনুষ্ঠিত হয় ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে। তবে এই উপনির্বাচনেও অংশ নেয়নি বিরোধী দল বিএনপি। গত ১৪ মে ঢাকা-১৭ আসনের সাবেক সাংসদ আকবর হোসেন পাঠান ফারুকের মৃত্যুর পর এই আসনটি শূন্য হলে ১ জুন উপনির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে ইসি।

 

এদিকে ঢাকা-১৭ আসনের উপ-নির্বাচন নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে বলে দাবি করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা সিনিয়র জেলা নির্বাচন অফিসার মো. মুনীর হোসাইন খান। তবে একতারা প্রতীকের প্রার্থী আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলমের ওপর হামলার বিষয়ে তিনি বলেন, হামলার ঘটনায় যারা জড়িত, ভিডিও দেখে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

 

ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আটজন। তাদের মধ্যে দলীয় প্রার্থী হচ্ছেন আওয়ামী লীগের মোহম্মদ আলী আরাফাত, জাতীয় পার্টির সিকদার আনিসুর রহমান, জাকের পার্টির কাজী মো. রাশিদুল হাসান, তৃণমূল বিএনপির শেখ হাবিবুর রহমান, বাংলাদেশ কংগ্রেসের মো. রেজাউল ইসলাম স্বপন ও বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তি জোটের মো. আকবর হোসেন।

 

স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন আলোচিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর মো. আশরাফুল আলম (হিরো আলম) এবং মো. তারিকুল ইসলাম। নির্বাচনে ৩ লাখ ২৫ হাজার ২০৫ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পেয়েছেন। এদের মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৭১ হাজার ৬২৫ ও নারী ভোটার ১ লাখ ৫৩ হাজার ৫৮০ জন। ১২৪টি কেন্দ্রের ৬০৫টি কক্ষে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলে।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version