শাহীন রহমান: ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে পর এবার ইসির নজর চট্টগ্রাম-১০ আসনে উপনির্বাচনের দিকে। আগামী ৩০ জুলাই অনুষ্ঠিত হবে এ আসনের উপনির্বাচন।
জানা গেছে, বিতর্ক এড়িয়ে কীভাবে নির্বাচন সুষ্ঠু করা যায়, সেদিকে বেশি নজর দিচ্ছে ইসি। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে আর যাতে বড় ধরনের সমালোচনার মুখে পড়তে না হয়, সেটাই এখন ইসির ভাবনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ইসির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এ আসনের উপনির্বাচন সুষ্ঠু করতে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। যদিও ঢাকা-১৭ আসনের ব্যালটের ভোট হলেও এ আসনের ভোট হচ্ছে ইভিএমে। তবে কঠোর নজরদারির মধ্যে এ আসনের সব কেন্দ্রে থাকছে সিসি ক্যামেরা। রাজধানীর আগারগাঁও নির্বাচন ভবন থেকে ভোটের দিন সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থাও নেয়া হয়েছে।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, এরপর কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে, সেদিনে এবার তৎপর রয়েছে। বিশেষ করে ভোটে মাঠে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের হুঁশিয়ারি দেয়া হবে যাতে কোনো শৈথিল্য না থাকে কর্তব্য পালনে। তারা জানান, বিতর্কমুক্ত পরিবেশে নির্বাচন চায় ইসি।
গত ১৭ জুলাই অনুষ্ঠিত হয় ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচন। নির্বাচন সকাল থেকে সুষ্ঠু হলে শেষ মুহূর্তে বিতর্ক এড়াতে পারেনি তারা। এ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলমের ওপর হামলা ঘটনায় ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে তারা। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে এ সমালোচনায় ইসি অনেকটাই বিব্রত অবস্থার মধ্যে পড়েছে। হিরো আলমের ঘটনায় জাতিসংঘ থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থ বিবৃতি দিয়ে নিন্দা জানিয়েছে।
এদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিরো আলম ইসিতে চিঠি দিয়ে এ আসনের উপনির্বাচনের ব্যাপক কারচুপি ও জালিয়াতি হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন। একইসঙ্গে তিনি পুনর্নির্বাচনে দাবি জানিয়েছেন। ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে এক লোকই ১০ বার করে ভোট দিয়েছে বলেও অভিযোগ করেছেন জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের।
তিনি বলেন, এ নির্বাচনে জনগণের সম্পৃক্ততা ছিল না। সরকার বলছে, ১১ শতাংশ ভোট পড়েছে। বেসরকারিভাবে আমাদের খবর হলো, ৫-৬ শতাংশ লোকও হয়নি। হয়তো ৫ শতাংশ হতে পারে। বাকিগুলো তারা জোর করে ব্যালট করেছে (সিল মেরেছে)।
তবে ইসি ভোট কারচুপির এসব অভিযোগ আমলে না নিলেও হিরো আলমের মতো হামলার ঘটনায় তাদের সুনাম ক্ষুণ্ণ হয়েছে বলে মনে করছে। এ ঘটনার পুনরাবৃত্তি তারা চট্টগ্রামে চাই না। নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেন, ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিরো আলমের ওপর হামলার ঘটনায় আমরা মোটেই সন্তুষ্ট নই। আমরা এতে অখুশি।
তিনি বলেন, ভোটের দায়িত্বে নিয়োজিতদের মধ্যে কারো না কারো অবহেলা ছিল। একজন প্রার্থীর নিরাপত্তা দেয়ার দায়িত্ব ইসিসহ সবার। দায়ীরা বের হয়ে এলেই ব্যবস্থা নেয়া হবে। কে দায়ী তদন্ত হওয়ার আগে বললে তদন্ত প্রভাবিত হতে পারে। ভবিষ্যতে কোনো নির্বাচনে যেন এমন না ঘটে, সেজন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।
আর মাত্র ৬ দিন পরই অনুষ্ঠিত হবে চট্টগ্রাম-১০ আসনে উপনির্বাচন। যদিও চট্টগ্রাম-১০ আসনে উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মহিউদ্দিন বাচ্চুর শক্ত কোনো প্রতিদ্ব›দ্বী নেই। বলতে গেলে অনেকটা একতরফা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে সেখানে। তবে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকলেও নগর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে দুটি গ্রুপ সেখানে বিদ্যমান। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে কেউ যাতে হঠকারিতা করার শঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছে না ইসি।
চট্টগ্রাম নগরের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে দুটি ধারার মধ্যে একটি পক্ষের নেতৃত্বে ছিলেন প্রয়াত নেতা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী। অন্য পক্ষটি আ জ ম নাছিরের অনুসারী। মহিউদ্দিনের মৃত্যুর পর তার অনুসারীরা আছেন তার বড় ছেলে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের সঙ্গে। চট্টগ্রাম-১০ আসনে দলের মনোনয়ন পাওয়া মহিউদ্দিন বাচ্চু নগরীর রাজনীতিতে শুরু থেকেই প্রয়াত মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী। নগর যুবলীগে সাবেক আহব্বায়ক মহিউদ্দিন বাচ্চু নিজেকে মহিউদ্দিন চৌধুরীর কর্মী হিসেবেই পরিচয় দেন।
যদিও এ নির্বাচনে প্রতীক বরাদ্দের পর নগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির ঐক্যবদ্ধভাবে ভোটে লড়ার ঘোষণা দিয়েছেন। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, নির্বাচন এটা আমাদের অস্তিত্বের একটা লড়াই। তখন আমরা ঐক্যবদ্ধ হই। বিএনপি-জামায়াত এবং স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির যে অপরাজনীতি, অপপ্রচার, জনস্বার্থবিরোধী যে প্রচেষ্টা, জ্বালাও-পোড়াও বা মানুষ হত্যার রাজনীতি যখন করে তখন কিন্তু আমরা ঐক্যবদ্ধ হই। ওই রাজনীতি আমরা শক্তভাবে প্রতিরোধ করি।
তিনি বলেন, আমাদের প্রতিযোগিতা এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। গণসংগঠনে প্রতিযোগিতা থাকা স্বাভাবিক। আর ইতিবাচক প্রতিযোগিতা সংগঠনকে সমৃদ্ধ করে। নেতিবাচক প্রতিযোগিতা সংগঠনকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। আমাদের এখানে যে প্রতিযোগিতাটা আছে এটা হলো ইতিবাচক প্রতিযোগিতা। এটা সংগঠনকে সমৃদ্ধ করছে। এবং আমরা হলাম যে আওয়ামী লীগ, আমরা জাতে মাতাল তালে ঠিক। কখন কোন কাজটা করতে হবে, কখন ঐক্যবদ্ধ হতে হবে এটা আমরা সবাই জানি।
গত ২ জুন চট্টগ্রাম-১০ আসনের সংসদ সদস্য আফছারুল আমীনের মৃত্যুতে আসনটি শূন্য হয়। আগামী ৩০ জুলাই এ আসনের ভোটগ্রহণ হবে ১৫৬টি কেন্দ্রে। ৪ লাখ ৮৮ হাজার ৬৩৮ জন ভোটার সবগুলো কেন্দ্রে ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট দেবেন। চট্টগ্রামের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. হাসানুজ্জামান এর আগে বলেন, মোট ৫ প্রার্থীকে প্রতীক বরাদ্দ করা হয়েছে। এদের মধ্যে স্বতন্ত্র এক প্রার্থীর মনোনয়ন বাছাইয়ে বাতিল হয়েছিল।
পরে তিনি আপিলে প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন। প্রার্থীদের মধ্যে আওয়ামী লীগের মহিউদ্দিন বাচ্চু নৌকা, জাতীয় পার্টির মো. সামশুল আলম লাঙ্গল, তৃণমূল বিএনপির দীপক কুমার পালিত সোনালি আঁশ, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক জোটের রশিদ মিয়া ছড়ি এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী মনজুরুল ইসলাম ভূইয়া রকেট প্রতীক নিয়ে ভোটে লড়বেন।
আসন্ন চট্টগ্রাম-১০ আসনের (ডবলমুরিং, পাহাড়তলী ও হালিশহর) উপনির্বাচনে ১৬ থেকে ১৮ জনের ফোর্স মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সাধারণ কেন্দ্রে বিভিন্ন বাহিনীর ১৬ জন এবং ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে ১৮ জন সদস্য মোতায়েন থাকবে। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নির্দেশনায় নেয়া সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান ইতোমধ্যে এ-সংক্রান্ত পরিপত্র জারি করেছেন।
বিভিন্ন বাহিনীর প্রধানকে পাঠানো নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ৩০ জুলাই চট্টগ্রাম-১০ নির্বাচনী এলাকার শূন্য আসনে নির্বাচন উপলক্ষে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন অবাধ, শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠানের জন্য সরকার দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যথাযথ ভূমিকার ওপর সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠান বহুলাংশে নির্ভর করছে।
সব আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো সততার সঙ্গে তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করলেই সরকারের নিরপেক্ষতা জনগণের নিকট দৃশ্যমান হবে।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য