-->
শিরোনাম

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে তৎপর সিটি করপোরেশন, মিলছে না কাক্সিক্ষত ফল

নিজস্ব প্রতিবেদক
ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে তৎপর সিটি করপোরেশন, মিলছে না কাক্সিক্ষত ফল

সারা দেশে দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে ডেঙ্গু। রাজধানী ঢাকাতে এর প্রকোপ বেশি। শুরু থেকেই ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে তৎপর সিটি করপোরেশন। যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছেন দুই মেয়র। কিন্তু এরপরো কাক্সিক্ষত ফল মিলছে না। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ১২৯টি ওয়ার্ডে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে ডেঙ্গুরোগীর সংখ্যা। হাসপাতালে ডেঙ্গুর চিকিৎসাসেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা।

 

অধিকাংশ হাসপাতালে ডেঙ্গু ওয়ার্ডে খালি নেই শয্যা। অনেক হাসপাতালে মেঝেতে বিছানা পেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন রোগীরা। যোগাযোগ করা হলে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের দাবি, তারা ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে নানামুখী কর্মসূচি পরিচালনা করছেন, নিয়েছেন বিভিন্ন উদ্যোগ। তবে আপাতদৃষ্টিতে ডেঙ্গু পরিস্থিতির বাড়বাড়ন্ত রূপ বলছে এসব উদ্যোগের ফল পাচ্ছেন না।

 

এ দিকে নগরে মশা নিধন বা নিয়ন্ত্রণ সিটি করপোরেশনের অন্যতম প্রধান কাজ। কিন্তু ডিএনসিসি ও ডিএসসিসি এ কাজে ব্যর্থ বলে মনে করেন নাগরিকরা। তবে ডিএনসিসি ও ডিএসসিসির সংশ্লিষ্ট দপ্তরের দাবি, সাধারণত এডিস মশা বাসাবাড়ির আঙিনায় পরিত্যক্ত পাত্রে জমে থাকা পানিতে জন্মায়। এক্ষেত্রে প্রত্যেক বাসায় ঢুকে এডিস মশা নিধনের সক্ষমতা করপোরেশনের নেই। তাই এ মশা নিধনে নগরের সব বাসিন্দাকে সচেতন হতে হবে। নিজ বাড়ির আঙিনা নিজেকেই নিয়মিত পরিষ্কার রাখতে হবে। জনসচেতনতা ছাড়া মশা নিয়ন্ত্রণ বা নিধন সম্ভব নয়। রাজধানীতে ডেঙ্গুর এমন নাজুক পরিস্থিতি তৈরি হলেও মশা নিধনে তেমন কিছুই করতে পারছে না ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। তাদের মশা নিধনে কোনো পদ্ধতিই কাজে লাগছে না। ফলে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা।

 

এদিকে আগামী আগস্ট, সেপ্টেম্বরে ডেঙ্গু পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হবে বলে মনে করছেন কীটতত্তবিদরা। তারা জানান, বর্ষা মৌসুমে সামনের দিনগুলোতে ডেঙ্গু আরো ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। কারণ, যেখানেই বৃষ্টির পানি জমছে, সেখানেই এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যাচ্ছে। আবার এমন কিছু জায়গায় এডিস মশা প্রজনন করছে, যেখানে বৃষ্টির পানির সম্পর্ক নেই। এর মধ্যে রয়েছে বহুতল ভবনের পার্কিংয়ের জায়গা, নির্মাণাধীন ভবনের বেজমেন্ট, ওয়াসার মিটার বাক্স এবং বাসাবাড়িতে জমিয়ে রাখা পানি।

 

মশা নিয়ে জনসচেতনা তৈরিতে সবচেয়ে বেশি প্রচারণা বা কর্মসূচি চালাচ্ছে ডিএনসিসি। তারা স্কুলে পাঠ্যপুস্তকে এডিস ও কিউলেক্স মশা নিয়ে জনসচেতনতামূলক অধ্যায় যুক্ত করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে একটি প্রস্তাব করেছে। মশা নিয়ে গবেষণায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ব বিদ্যালয়ের সঙ্গে ডিএনসিসির সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। স্কুল-কলেজে ফ্রি বিলি করতে মশা সচেতনতার এক লাখ কার্টুন বই ছাপানো হয়েছে। এছাড়া ঢাকা উত্তরের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ-মাদরাসা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে জনসচেতনতামূলক প্রচারণা চলছে।

 

গত সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোলরুমের ইনচার্জ ডা. মো. জাহিদুল ইসলাম সই করা ডেঙ্গুবিষয়ক প্রতিবেদনে বলা হয়, গত রোববার সকাল ৮টা থেকে সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২ হাজার ২৯৩ জন। তাদের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা এক হাজার ২৩৮ ও ঢাকার বাইরের এক হাজার ৫৫ জন।

 

এছাড়া সোমবার ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে দেশে ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৮৫ জনে। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২৪ জুলাই পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৩৫ হাজার ২৭০ জন। এর আগে ২০২২ সালে ডেঙ্গুতে দেশের ইতিহাসের সর্বোচ্চ ২৮১ জন মারা যান। ওই বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে ডেঙ্গুতে ২৭ জনের মৃত্যু হয়। একই সঙ্গে আলোচ্য বছরে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন ৬২ হাজার ৩৮২ জন।

 

২০২০ সালে করোনা মহামারিকালে ডেঙ্গু সংক্রমণ তেমন একটা দেখা না গেলেও ২০২১ সালে সারা দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হন ২৮ হাজার ৪২৯ জন। একই বছর দেশব্যাপী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ১০৫ জনের মৃত্যু হয়েছিল। রাজধানীর ১৯৬ দশমিক ২২ বর্গকিলোমিটার এলাকা নিয়ে ডিএনসিসির ৫৪টি ওয়ার্ড।

 

ডিএনসিসির স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্র জানায়, গত ১৭ মে বর্ষা মৌসুম সামনে রেখে এডিসের বংশবিস্তার নিয়ন্ত্রণে ৫৪টি ওয়ার্ডে মশক নিধন কার্যক্রম শুরু করে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। এর মধ্যে জনসচেতনতা তৈরি করতে তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর (বিএনসিসি) ও জাতীয় স্কাউট দল। মূলত তারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে মশক নিধন কার্যক্রম ও জনসচেতনতা সৃষ্টির কাজ করছেন।

 

এছাড়া যেসব ভবনে এডিসের লার্ভা পাওয়া যাচ্ছে, তাদের জরিমানা করছেন ডিএনসিসির ভ্রাম্যমাণ আদালত। মসজিদের ইমাম, স্কুল-মাদরাসা, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নিয়েও জনসচেতনতামূলক কর্মকান্ড পরিচালনা করছে ডিএনসিসি।

 

ডিএসসিসিও সারা বছর এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে নানা কর্মসূচি পালন করেছে। ৭৫টি ওয়ার্ডে নিয়মিত মশার ওষুধ ছিটানোসহ জনসচেতনা তৈরি করেছে তারা। এখন এডিস মশা নিয়েও সমান গুরুত্ব দিচ্ছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। তবে ডিএনসিসির তুলনায় তাদের কর্মসূচি বা কার্যক্রম কম বলে জানিয়েছেন নাগরিকরা।

 

ডিএসসিসির স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্র জানায়, মশা নিয়ন্ত্রণে ডিএসসিসির ৭৫টি ওয়ার্ডে সারা বছরই নানা কর্মসূচি পালন করে ডিএসসিসি। এরই অংশ হিসেবে প্রতিদিন ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাসহ নানা কর্মসূচি পালন করছেন তারা। নিয়মিত করা হচ্ছে জরিমানা।

 

তবে ডিএনসিসির তালিকা অনুযায়ী এখন জুরাইন, যাত্রাবাড়ী, মুগদা এলাকায় ডেঙ্গু রোগী বেশি বলে জানিয়েছে ডিএসসিসি। প্রতিদিন এসব এলাকা থেকে শত শত মানুষ ডেঙ্গু চিকিৎসা নিতে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে যাচ্ছেন।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version