শাহীন রহমান: এবার জাতীয় নির্বাচনে প্রযুক্তিনির্ভর ভোট ব্যবস্থাপনার জন্য চালু করা হচ্ছে নির্বাচনী অ্যাপ। কিন্তু ইসি কী কাজে ব্যবহার করবে এই অ্যাপস। প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা বলছেন, দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা থেকে শুরু করে ফল প্রকাশ পর্যন্ত সব কাজ যেমন ম্যানুয়ালি করা হবে, সেই সঙ্গে অ্যাপস ব্যবহার করে প্রযুক্তিগতভাবে এই কর্মকান্ড পরিচালনা করা হবে।
অর্থাৎ এই অ্যাপসের মাধ্যম একজন প্রার্থী থেকে শুরু করে ভোটাররা আপডেট তথ্য পাবেন। তফসিল ঘোষণার পরই নির্বাচনী অ্যাপস চালু করা হবে। অ্যাপের মাধ্যমে একজন প্রার্থী ঘরেই বসেই মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারবেন। সেই সঙ্গে একজন ভোটারও তার কেন্দ্র সম্পর্কে অ্যাপসের মাধ্যমে জানতে পারবেন।
তারা জানান ‘বাংলাদেশ ইলেকশন অ্যাপস’ নামে এই অ্যাপস তৈরি হচ্ছে, তার মাধ্যমে ভোটাররা সহজে প্রার্থীর নাম, পরিচিতি, ছবি, দলীয় পরিচয় ও প্রার্থীর হলফনামার তথ্য দেখতে পাবেন। ভোটকেন্দ্র এবং ভোটার নম্বর, ভোটকেন্দ্রের ছবিও দেখতে পাবেন। ভোট শেষে কেন্দ্রভিত্তিক ফলাফল, দলভিত্তিক প্রাপ্ত আসন সংখ্যা এবং নিকটতম প্রার্থীর নাম ও প্রাপ্ত ভোট সংখ্যাও দেখতে পারবেন যে কেউ।
অ্যাপসটির বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. আহসান হাবিব খান বলেন, আগামী সংসদ নির্বাচন ব্যালট পেপারে হলেও প্রার্থীদের সুবিধা এবং ভোটারদের ভোগান্তি কমাতে নির্বাচন কমিশন এ উদ্যোগ নিয়েছে। মূলত নির্বাচন ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতার লক্ষ্যে এ ধরনের অ্যাপস করা হবে। এটা করার উদ্দেশ্য হচ্ছে স্বচ্ছতা। কোনো গোপনীয়তা নেই।
তাৎক্ষণিকভাবে তথ্য জানতে পারবেন। সবার কৌতূহল থাকে যেমন কত শতাংশ ভোট পড়েছে, সবাই জানতে চায়। আগে তো রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে গিয়ে ম্যানুয়ালি করা হতো। অ্যাপসটা হলে কিন্তু নিজেই জানতে পারবেন। কেন্দ্রে কেন্দ্রে যেতে হবে না। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকেই এই অ্যাপ ব্যবহার করা হবে। এরপর পর্যায়ক্রমে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে এই অ্যাপ ব্যবহার করা হবে।
আগামী ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে বা জানুয়ায়ির প্রথম সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হবে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন। এই নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গন এখন বেশ সরগরম। নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে বিদেশি রাষ্ট্রের তৎপরতাও চোখে পড়ার মতো। নির্বাচন নিয়ে পক্ষ-বিপক্ষ দুই শিবিরে বিভক্ত সারা দেশ। এরই মধ্যে নির্বাচন কমিশন তার সার্বিক প্রস্তুতিও গুছিয়ে আসছে। আর এই প্রস্তুতির একটি ধাপ হলো নির্বাচনী অ্যাপস চালু করা। অ্যাপস নিয়ে ইসি আনিসুর রহমান বলেন, মূলত সার্বিক ইলেকশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম হবে ওটা। নমিনেশন সাবমিট করা যাবে, এনআইডি নম্বর দিলে অনেক বিষয় অটো পূরণ হয়ে যাবে। ডকুমেন্ট স্ক্যান করে দিতে হবে।
নির্বাচনী কেন্দ্রগুলোর নামের তালিকা, ছবি থাকবে। কে কোথায় কোন কেন্দ্রে ভোট দিতে যাবে। এনআইডি নম্বর দিয়ে অ্যাপসে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। এতে গুগল ম্যাপেও ভোটার তার ভোটকেন্দ্র দেখতে পারবে। এছাড়াও ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের নামের তালিকা থাকবে। দুই ঘণ্টা অন্তর অন্তর ভোট পড়ার হার জানানো হবে। ১০টা, ১২টা, ২টা ও বিকেল ৪টায় আপডেট থাকবে। নির্বাচন শেষ হওয়ার পর ফলাফল অ্যাপসে কেন্দ্রভিত্তিক দেখতে পাওয়া যাবে। বেসরকারি ফলাফলটাও দেখা যাবে।
তিনি জানান, অ্যাপস ব্যবহারের ফলে নির্বাচনে সহিংসতা বা শক্তি প্রদর্শন কমে আসবে। ভোটাররাও সহজেই কেন্দ্র সম্পর্কে জানতে পারবেন। প্রার্থীও কত ভোট পড়েছে তাও জানতে পারবেন। ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার তালিকা ম্যানুয়ালি করতে হয়, এতে অনেক সময়ের ব্যয় হয়। এটা কমে আসবে।
এবার দেড়শ আসনে ইসি ইভিএম ব্যবহারের পরিকল্পনা নিয়ে এগোলেও অর্থ সংকট ও রাজনৈতিক মতানৈক্যের মধ্যে শেষ পর্যন্ত বাদ দিতে হয়েছে। এর মধ্যে ৩০০ আসনে সিসি ক্যামেরা ব্যবহারের পরিকল্পনার কথা জানালেও তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। বরং তাও বাদ দেয়ার আভাস এসেছে ইসি থেকে।
তবে জানা গেছে, নির্বাচনে ইভিএম এবং সিসি ক্যামেরার ব্যবহার বাদ দেয়া হলেও ভোট স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য করতে এবার এই অ্যাপের ওপর জোর দেয়া হয়েছে। ইসির নির্বাচনী অ্যাপস তৈরির কাজ প্রায় শেষের পথে। নভেম্বরে তফসিল ঘোষণার পরই অ্যাপসের উদ্বোধন করা হবে।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, নির্বাচন ব্যবস্থাপনা অ্যাপসে ভোটার, দল, প্রার্থী, রিটার্নিং অফিসার, সহকারী রিটার্নিং অফিসারসহ সাধারণ মানুষেরও প্রবেশাধিকার থাকবে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে শুধু ইসি, রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার অ্যাকসেস থাকবে। এখানে নির্বাচনী প্রার্থীদের দলীয় পরিচয়, প্রতীক, হলফনামা সবই থাকবে।
এছাড়া ঘণ্টায় ঘণ্টায় ভোট পড়ার হার জানতে পারবে, নির্বাচন শেষে কেন্দ্রভিত্তিক কোন প্রার্থী কত ভোট পেয়েছে, দলভিত্তিক আসন দেখতে পারবে। ভোটের পরে রেজাল্ট হলে এটাও জানতে পারবে।
ভোটাররা যেসব সেবা পাবেন তার মধ্যে রয়েছে কে কোন এলাকার ভোটার তা জানতে পারবে। কোন কেন্দ্রে, কোন কক্ষে (ভোট দেবেন) গুগল ম্যাপে ভোটাররা দেখতে পারবেন। এটার কারিগরি দিক দেখা হচ্ছে। একই সঙ্গে কতজন দেখতে পারবে, লাখ লাখ লোক হিট করবে একই সময়ে এসব কারিগরি সক্ষমতা যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।
জানা গেছে, ভোটকেন্দ্র ও ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার তথ্যও ডাটাবেজে সংরক্ষণের ব্যবস্থা রাখার পরিকল্পনাও রয়েছে। তবে আগামী নির্বাচনে প্রযুক্তিগত সুবিধা বাড়লেও আইন, বিধি অনুযায়ী প্রচলিত পদ্ধতিতে দাপ্তরিক কাজ বহাল থাকবে। কেন্দ্রে কেন্দ্রে ফলাফল ঘোষণা করে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে পাঠানো হবে বলেও জানা গেছে।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য