-->
শিরোনাম

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা চলতি বছরেই হাইকোর্টে নিষ্পত্তির আশা রাষ্ট্রপক্ষের

এম বদি-উজ-জামান
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা
চলতি বছরেই হাইকোর্টে নিষ্পত্তির আশা রাষ্ট্রপক্ষের

১৯ বছর আগে সংঘটিত জঘন্যতম ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা (ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের আপিল) এ বছরই হাইকোর্টে নিষ্পত্তির আশা করছেন রাষ্ট্রপক্ষ। হাইকোর্ট বিভাগে গত বছর ডিসেম্বরে মামলার শুনানি শুরু হলেও সংশ্লিষ্ট আদালতের বিচারপতি অসুস্থ থাকায় এ বছর মামলাটির নিষ্পত্তি হওয়া নিয়ে আশঙ্কা রয়েছে।

 

এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন বলেন, মামলার পেপারবুক পড়া প্রায় শেষ পর্যায়ে। বেঞ্চের সিনিয়র বিচারপতি অসুস্থ থাকায় আপাতত বেঞ্চ বসছেন না। তিনি সুস্থ হয়ে বেঞ্চে বসলেই আমরা শুনানি শেষ করব। শুনানি শেষ করতে আমাদের ১০ থেকে ১২ কার্যদিবস লাগবে।

 

আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. আমিনুল ইসলাম ও মোহাম্মদ শিশির মনির বলেছেন, রাষ্ট্রপক্ষের পেপারবুক পড়া শেষ হলে আমরা আসামিপক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু করব। এরপর রাষ্ট্রপক্ষ যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করবে। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত রায়ের দিন নির্ধারণ করবেন।

 

রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী প্রশাসনিক ক্ষমতাবলে গত বছর ২৯ অক্টোবর মামলাটির শুনানির জন্য বিচারপতি সহিদুল করিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চকে দায়িত্ব দেন। পরবর্তী সময়ে আইনগত প্রক্রিয়া সম্পন্ন শেষে ওই বছরের ৫ ডিসেম্বর এ বেঞ্চে শুনানি শুরু হয়। নিয়মানুযায়ী প্রথমেই রাষ্ট্রপক্ষ পেপারবুক থেকে পড়া শুরু করে। এখন এ পেপারবুক পাঠ চলছে। এটা পড়া শেষ হলে রাষ্ট্রপক্ষ যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করবে। এরপর আসামিপক্ষ যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করবে। পরে রাষ্ট্রপক্ষ জবাব দিতে সুযোগ পাবে। শুনানি সম্পন্ন হওয়ার পর আদালত রায়ের দিন নির্ধারণ করবেন।

 

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার পেপারবুক সরকারি ছাপাখানায় (বিজি প্রেস) তৈরির পর ২০২০ সালের ১৬ আগস্ট হাইকোর্টে পাঠানো হয়। দুটি মামলায় প্রায় ২২ হাজার পৃষ্ঠার পেপারবুক হাতে পাওয়ার পর মামলাটি(ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের আপিল) হাইকোর্টে শুনানির জন্য প্রস্তুত করার কাজ শুরু করে সংশ্লিষ্ট শাখা। জানা গেছে, পেপারবুক তৈরির সময় কোনো নথি বা তথ্য বাদ পড়েছে কিনা, তা যাচাই-বাছাই করা হয়েছে। এছাড়া কোনো আসামিরপক্ষে সরকারি খরচে আইনজীবী (স্টেট ডিফেন্স) নিয়োগের প্রয়োজন আছে কিনা, তা খতিয়ে দেখার পর পলাতক আসামিদের বিরুদ্ধে এরই মধ্যে স্টেট ডিফেন্স আইনজীবীও নিয়োগ দেয়া হয়।

 

গত বছর ১৩ আগস্ট আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এমপি সাংবাদিকদের বলেন, সরকার ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা মামলাকে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে দেখছে। এ মামলা ১৪ বছর পর নিম্ন আদালতে নিষ্পত্তি হয়েছে। এখন এটি উচ্চ আদালতে ত্বরিত শুনানি করে এর পরিসমাপ্তি ঘটানো হবে। এ অবস্থায় রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে প্রধান বিচারপতি হাইকোর্টের বেঞ্চ নির্ধারণ করেন।

 

রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনায় ২৪ জন নিহত হয়। এ ঘটনায় করা মামলায় পৃথক দুটি অভিযোগপত্র দাখিল হয়। একটি হত্যা এবং অপরটি বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে। এরপর বিচার শেষে ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর রায় দেয় ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১। রায়ে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক শিক্ষা উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর (খালেদা জিয়া) রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী ও সাবেক এমপি কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদসহ ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।

 

দুটি মামলায় তাদের অভিন্ন সাজা দেয়া হয়েছে। এরপর মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের সাজা অনুমোদনের জন্য ২০১৮ সালের ২৭ নভেম্বর হাইকোর্টে ডেথ রেফারেন্স পাঠানো হয়। এরপর কারাবন্দি আসামিরা ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন।হত্যা মামলায় ১৪ জঙ্গিসহ ১৯ জনকে ফাঁসির দণ্ড, ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ১১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়া হয়। আর বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের মামলায় ১৯ জনকে ফাঁসি এবং ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়। এ ৩৮ জনকে বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের অন্য ধারায় ২০ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়। দুই মামলায় আলাদাভাবে সাজা দেয়া হলেও তা একযোগে কার্যকর হবে বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়। সাজাপ্রাপ্ত ৪৯ আসামির মধ্যে ১৮ জন পলাতক। পলাতকদের মধ্যে দুজন ফাঁসির আসামি, ১২ জন যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি আর অন্যান্য মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত ৪ জন আসামি রয়েছে।

 

ভোরের আকাশ/মি

মন্তব্য

Beta version