-->

রাজধানীতে ধেইধেই করে বাড়ছে বাইক

নিজস্ব প্রতিবেদক
রাজধানীতে ধেইধেই করে বাড়ছে বাইক

রাজধানীতে রেজিস্ট্রেশনকৃত বৈধ যানবাহনের সংখ্যা ২০ লাখ ২৯ হাজার ৯৭৯টি। এর মধ্যে মোটরসাইকেল ১০ লাখ ৬৮ হাজার ৮৬৬টি। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) ২০২৩ সালের জুলাই পর্যন্ত এক পরিসংখ্যানে এসব তথ্য উঠে এসেছে। মোটরসাইকেল রেজিস্ট্রেশন করতে হলে ড্রাইভিং লাইসেন্সের বাধ্যবাধকতার কথা জানালেও এখনো অজানা কারণে এই প্রক্রিয়া শুরু করতে পারেনি বিআরটিএ। দফায় দফায় বাড়ানো হয় সময়। লার্নার দিয়ে মোটরসাইকেল রেজিস্ট্রেশন করতে পারছে যে কেউ।

 

এ ব্যাপারে বিআরটিএ কার্যকর কোনো পদক্ষেপ না নেয়ার কারণে একদিকে সড়কে বাড়ছে মোটরসাইকেল, অন্যদিকে আনাড়ি চালকদের কারণে ঘটে চলছে দুর্ঘটনা। এ যেন দেখার কেউ নেই। বলছেন পরিবহন বিশেষজ্ঞরা।

 

বিআরটিএর তথ্য বলছে, ২০২৩ সালের জুলাই পর্যন্ত ৭ মাসে রাজধানীতে রেজিস্ট্রেশন দেয়া হয়েছে ৫৩ হাজার ১২টি মোটরসাইকেল। ছুটির দিন বাদে সপ্তাহের ৫ দিনের হিসাবে ৭ মাসে ১৫০ কর্মদিবসে ঢাকার ৪টি বিআরটিএ অফিস থেকে গড়ে দৈনিক ৩৫৩টি মোটরসাইকেল রেজিস্ট্রেশন দেয়া হয়েছে।

 

এছাড়া, চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত ৭৪ হাজার ৫৭০টি বিভিন্ন যানবাহনের রেজিস্ট্রেশন দেয়া হয়েছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে রাজধানীতে গড়ে প্রতিদিন সড়কে নেমেছে প্রায় ৫০০ যানবাহন। এ তো গেল বৈধ যানবাহনের তালিকা। এর বাইরের রাজধানীতে চলাচল করছে নানা ধরনের অবৈধ যানবাহন। পুলিশের নাকের ডগা দিয়ে তাদের খুশি করেই চলছে এসব যানবাহন।

 

এ তথ্য জানিয়ে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির সভাপতি মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘রাজধানীতে প্রতিদিন সড়কে বাড়ছে যানবাহনের সংখ্যা। বিশেষ করে মোটরসাইকেল রেজিস্ট্রেশনের বিষয়ে বিআরটিএর কোনো বাধ্যবাধকতা না থাকায় আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে এর সংখ্যা। সব মিলিয়ে সড়কে অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। ঘটছে দুর্ঘটনা, বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল।’

 

রাজধানীর মিরপুর, ফার্মগেট, নীলক্ষেত, মোহাম্মদপুর এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, এসব এলাকায় বীরদর্পে ১৮ বছর বয়সের কম বয়সিরা চালকের আসনে। যানবাহনগুলোর নেই বৈধ কাগজপত্র, নেই কোনো ফিটনেস। বাইরের দিকের চেহারা দেখেই বোঝা যাচ্ছে, সড়কে অন্য গাড়ির সঙ্গে প্রতিযোগিতা, পাশাপাশি ধাক্কায় এক একটি দুর্ঘটনার চিহ্ন বহন করে সড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে এসব যানবাহন। যদিও এ বিষয়ে কেউ কথা বলতে রাজি নয়। তারপরও যাত্রীবেশে কিছু জানার চেষ্টা।

 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক চালক বলেন, ‘রাজনৈতিক নেতা ও পুলিশকে মাসোহারা দিয়ে চলতে হয়। মাসিক ভিত্তিতে সিস্টেম করা। কোনো সার্জেন্ট ধরে না। তবে ওপরের চাপ থাকলে মাঝে মধ্যে আটক করে ডাম্পিংয়ে পাঠায়। একেক রুটে একেক পরিমাণ টাকা দিয়ে গাড়ি চালাতে হয়।’

 

তবে এসব বিষয় অস্বীকার করে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএমপির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘রাজধানীতে গণপরিবহনের সংকট রয়েছে। অফিসগামী যাত্রীদের আনা-নেয়ার বিষয় বিবেচনায় কিছুটা মানবিক দিকও দেখতে হয় পুলিশকে। যেসব রুটের কথা আপনি বলছেন, সেখানে কোনো বাস নেই। এগুলো বন্ধ করে দিলে নগরবাসীর চলাচলে কষ্টসাধ্য হবে।’

 

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা কেন্দ্রের সহকারী অধ্যাপক সাইফুন নেওয়াজ বলেন, ‘রেজিস্ট্রেশনের কোনো বিধিনিষেধ না থাকায় যে কেউ একটি মোটরসাইকেল কিনে রেজিস্ট্রেশন করতে পারছেন। যিনি মোটরসাইকেল চালাবেন, তিনি দক্ষ না অদক্ষ এসব বিষয় আমলে নেয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছে না বিআরটিএ।’

 

তিনি আরো বলেন, ‘রাজধানীতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ফিটনেসবিহীন বাস, হিউম্যান হলার, যা সড়কে ছড়াচ্ছে আতঙ্ক। তবে সরকারের উন্নয়নের পরিকল্পনার ধারাবাহিকতায় মেট্রোরেল উত্তরা থেকে মতিঝিল এবং অন্যান্য মেট্রোর কাজ শেষ হলে নগরবাসী অনেকাংশেই এ ধরনের যানবাহন চলাচল থেকে মুক্তি পাবে।’

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version