-->
শিরোনাম

বর্ষা মৌসুমের শেষ সময়ে কেন দেশে বৃষ্টিপাত বাড়ছে

শাহীন রহমান
বর্ষা মৌসুমের শেষ সময়ে কেন দেশে বৃষ্টিপাত বাড়ছে

শাহীন রহমান: ভারীবর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে দেশের উত্তরাঞ্চলের বেশকিছু এলাকা বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। এতে ফসলের যেমন ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে, তেমনি মানুষের দুর্ভোগেরও শেষ নেই। তবে এবার উত্তরাঞ্চলের পাশাপাশি উত্তর-পূর্বাঞ্চলে নতুন করে বন্যার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে ওই অঞ্চলের উজানে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের আভাস দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। পাশাপাশি উজান থেকে নেমে আসা পানির কারণে ওই অঞ্চলের নদনদীর পানি বাড়ার আভাসও দেয়া হয়েছে।

 

এবার বর্ষা মৌসুমের শুরুতে বৃষ্টিপাতের দেখা না মিললেও শেষ সময়ে এসে বৃষ্টির পরিমাণ অনেক বেড়ে গেছে। ভারী বৃষ্টিপাত এবং উজান থেকে নেমে আসা পানির কারণে উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়েছে। ভারী বৃষ্টিপাতে দুবার পানিতে তলিয়ে যায় চট্টগ্রাম মহানগর। এছাড়া একই কারণে এবার পাহাড়ি তিন জেলায় বন্যা দেখা দেয়। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ আরো বেড়ে যাবে। এ অবস্থায় প্রশ্ন উঠেছে বর্ষায় শেষ সময়ে কেন বাড়ছে বৃষ্টিপাতের মাত্রা।

 

হঠাৎ করে পানি বৃদ্ধি স্বাভাবিক ঘটনা নাকি অন্য কোনো কারণে নদনদীর পানি বাড়ছে? এ বিষয়ে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. একেএম সাইফুল ইসলাম বলেন, জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বর্ষা মৌসুম। এ সময় দেশে স্বাভাবিক বন্যা হয়। বৃষ্টির ৭০ শতাংশই এ সময় হয়। উজানে থাকা ভারতের একটা অংশেও এ সময়ে ভারী বৃষ্টি হয়। ফলে এ সময় এখানে বন্যার বিষয়টি নির্ভর করে ওদের ওখানে কী পরিমাণ বৃষ্টি হচ্ছে, তার ওপর। তিস্তায় কিন্তু দ্রুত পানি চলে আসে, আবার দ্রুত কমে যায়।

 

এখন ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর আছে। এর প্রধান কারণ জুলাই মাসে স্বাভাবিকের চেয়ে ৫২ শতাংশ বৃষ্টি কম হয়েছে। ওই সময় চট্টগ্রামে ব্যাপক বৃষ্টি হয়েছে। এক মাসের বৃষ্টি ৫-৬ দিনে হয়ে গেছে। প্রতি বছরই এখানে বর্ষায় যে পানি আসে, সেখানে কিছু না কিছু বন্যা হয়। তবে মৌসুমি বায়ু সক্রিয় আছে। ১৯৮৮ বা ১৯৯৮ সালেও কিন্তু সেপ্টেম্বরে বন্যা হয়েছে। ফলে আমাদের প্রস্তুতি রাখতেই হবে।

 

বাংলাদেশের বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান বলেন, ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদীর পানির লেভেল খানিকটা বাড়লেও গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানি স্থিতিশীল আছে। বিশেষ করে তিস্তা নদীর পানির লেভেল কমে আসছে। তবে ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে চট্টগ্রাম ও সিলেট অঞ্চলে।

 

পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের পূর্বাভাসে বলা হয়, আগামী ২৪ ঘণ্টায় উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ভারী বৃষ্টিপাত হলে সুরমা, কুশিয়ারা, মনু, খোয়াই, সোমেশ্বরী ও যাদুকাটা, সারিগোয়াইন নদীর পানি বৃদ্ধি পেতে পারে। বিশেষ করে মেঘালয় ও আসামে ভারী বৃষ্টি হলে সেই পানিও নদীপথে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে নামবে। ফলে বন্যার রয়েছে।

 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ভূখন্ডের সাধারণ জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অধিক বৃষ্টিপাত হয়। এ মৌসুমকে বাংলায় বর্ষা মৌসুম হিসেবে অবহিত করা হয়। বেশি বোিশ বৃষ্টিপাত হয় আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে। এ কারণে অধিকাংশ সময়ে বাংলায় মধ্য জুলাই নাগাদ বন্যা দেখা দেয়। কিন্তু সম্প্রতি সময়ে বর্ষার আচরণও বদলে গেছে। সময়মতো আর বৃষ্টিপাত হয় না। ফলে বর্ষা সময়মতো দেখা যায় না। কোনো বছর আগাম বন্যা হচ্ছে। তো আবার কোনো বছর শেষ সময়ে অধিক বৃষ্টিপাতে বন্যার সৃষ্টি হচ্ছে।

 

তারা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেই এ অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে আবহাওয়ায়। এবারের অবস্থা বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, সময়মতো বৃষ্টিপাত না থাকায় বর্ষার ভরা মৌসুমে দেশের খাল-বিলে পানি ছিল না। তবে অসময়ে এসে বৃষ্টিপাত বাড়ছে। সৃষ্টি হচ্ছে বন্যা।

 

তারা বলছেন, সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত দেশে সাধারণ বন্যার আশঙ্কা থাককে। কিন্তু সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে সেপ্টেম্বরে এসেই বেশি বৃষ্টিপাত রেকর্ড হচ্ছে। সম্প্রতি দেশে টানা কয়েকদিনের বৃষ্টিপাতের পর পরিমাণ কিছুটা কমে এসেছে। কিন্তু আবহাওয়া অফিস বলছে, সেপ্টেম্বরের শুরুতে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা আবারো বেড়ে যাবে। তারা জানায়, সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে সেপ্টেম্বর মাসের ২ তারিখের পর বৃষ্টির প্রবণতা বাড়বে। তবে এর আগেও প্রায় প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টি হবে।

 

আবহাওয়াবিদ মো. তরিফুল নেওয়াজ কবির বলেন, ‘আগামী ৫ দিনে প্রায় রোজই কোথাও কোথাও বৃষ্টি হবে। চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায়, রংপুর, ঢাকা, ময়মনসিংহ ও বরিশাল বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের দুয়েক জায়গায় হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।

 

তিনি বলেন, আগামী মাসের ২ অথবা ৩ তারিখের পরে গিয়ে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বাড়বে। এর আগে পর্যন্ত বৃষ্টিপাত তুলনামূলক কমই থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের সহকারী প্রকৌশলী মেহেদী হাসান জানান, বর্তমানে ৪টি নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

 

রংপুরের কাউনিয়া স্টেশনে তিস্তার পানি ৯ সেন্টিমিটার, টাঙ্গাইলের পোড়াবাড়ী স্টেশনে যমুনার পানি ৪ সেন্টিমিটার, সিলেটের কানাইঘাটে সুরমা ৩৫ সেন্টিমিটার ও নেত্রকোনার কলমাকান্দা স্টেশনে সোমেশ্বরী নদীর পানি বিপৎসীমার ১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।

 

পূর্বাভাস বলছে, দেশের উত্তর ও পূর্বাঞ্চলের কিছু নদনদীর পানির সমতল আগামী ২৪ ঘণ্টায় আরো বাড়তে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সেপ্টেম্বর থেকে বৃষ্টিপাত বাড়লে তখন আবারো বন্যার শঙ্কা বেড়ে যাবে, যা দেশের ফসল উৎপাদনে মারাত্মক প্রভাব পড়তে পারে।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version