-->
শিরোনাম
উচ্চমূল্যেই রয়েছে পেঁয়াজ

আলুর দাম বেড়েছে ৫ টাকা 

নিজস্ব প্রতিবেদক
আলুর দাম বেড়েছে ৫ টাকা 

রাজধানীর পাইকারি ও খুচরা বাজারে আলুর দাম কেজিতে ৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এতে খুচরা বাজারে আলু বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। সরবরাহের বড় কোনো সংকট না থাকলেও অতিরিক্ত মুনাফার উদ্দেশ্যে সিন্ডিকেট করে ব্যবসায়ীরা আলুর দাম বাড়িয়েছেন মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

 

এদিকে, আলুর দাম বাড়লেও পেঁয়াজ উচ্চমূল্যেই স্থিতিশীল রয়েছে। পাইকারিতে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৭৮ টাকা ও খুচরায় ৯০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। আর আমদানিকৃত ভারতের প্রতি কেজি পেঁয়াজ পাইকারিতে ৫৬ টাকা আর খুচরায় ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

 

বুধবার রাজধানীর পাইকারি ও খুচরা আলুর ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তিনদিন আগে পাইকারিতে আলুর দাম ছিল প্রতি পাল্লা (৫ কেজি) ১৬৫ থেকে ১৭৫ টাকা। প্রতি কেজি আলুর দাম পড়ত ৩৩ থেকে ৩৫ টাকা। যেটা খুচরা বাজারে বিক্রি হয়েছিল ৪২ থেকে ৪৫ টাকায়। আজ একই আলুর পাইকারি দাম দাঁড়িয়েছে আকার ও মানভেদে ৩৮ থেকে ৪০ টাকা কেজি।

 

খুচরায় গিয়ে যা পড়ছে ৪৮ থেকে ৫০ টাকা। আর পাড়া মহল্লার দোকানে বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৫২ টাকার ওপরে। পাইকারি বাজারে বর্তমানে প্রতি কেজি ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে কেজি মানভেদে ৪০ থেকে ৫৬ টাকায়। দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭২ থেকে ৭৮ টাকায়।

 

বাজারে সাধারণত সাদা ও লাল জাতের আলু দেখা যায়। সাদা ও লাল উভয় জাতের আলুর দামে বড় কোনো পার্থক্য নেই। কার্ডিনাল আলু ডায়মন্ড আলু নামেও পরিচিত। আলু ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে সবজির সরবরাহ কমে যাওয়ার কারণে আলুর দাম বাড়ছে। তা ছাড়া গত আড়াই মাস বাজারে একটু একটু করে বেড়েছে আলুর দাম। হিমাগার থেকে গতমাসে যে আলু প্রতি কেজি ২৫ থেকে ২৮ টাকায় বাজারে এসেছিল, তা এখন ২৮ থেকে ৩০ টাকায় বাজারে আসছে। এরসাথে পরিবহণ ভাড়াসহ অন্যান্য খরচ মিলিয়ে ৩৮ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

 

সূত্রাপুরে বাজার করতে আসা মো. হারুন শেখ নামে এক ক্রেতা বলেন, বাজারে সবচেয়ে কম দামের পণ্য ছিল আলু। সেই আলুর দামও এখন ৫০ টাকা আলুও কি আমদানি করতে হয়? তিনি বলেন, পেঁয়াজের দাম গত মাস থেকে ৯০ টাকা। সরবরাহে কোনো ঘাটতি নেই। দেশি পেঁয়াজে বাজার ভরপুর। তারপরও কেন দাম বেশি? এটা সরকারকে খুঁজে বের করতে হবে। অন্যান্য সবজিতে তো হাত দেওয়াই যায় না। গরিবের অন্যতম খাবার ডিম, ডাল, আলু ও পেঁয়াজ। এগুলোর দাম গত কয়েক মাসে অনেক বেড়েছে। এভাবে নিত্য পণ্যের দাম বাড়তে থাকলে আমরা একদিন না খেয়ে মারা পড়বো।

 

এ বিষয়ে বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সহ-সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বলেন, দেশে আলুর বড় কোনো সংকট নেই। সরবরাহ যা আছে, তাতে ডিসেম্বর পর্যন্ত ভালোভাবে চলবে। কিন্তু এরপরও বাজার ঊর্ধ্বমুখী। ব্যবসায়ীদের অতিরিক্ত মুনাফা করার প্রবণতা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। কোন ব্যবসায়ী কীভাবে আলুর দাম বাড়িয়ে বাজারে অস্থিরতা তৈরি করার চেষ্টা করছেন, তা অনেকের জানা। সরকার চাইলে এসব বিষয়ে আমরা একসঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত।

 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আলু মাঠ থেকে ওঠার পর ব্যবসায়ীদের হাত ধরে তা বাজারে আসে। মাঝখানে একটা সময় থাকে হিমাগারে। বছরব্যাপী সংরক্ষণের এই সময়ে ব্যবসায়ীরাই মূলত এই বাজার নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন। হিমাগারের মালিক অনেকে আলুর ব্যবসা করেন। কয়েক বছর ধরে দেশে আলুর ফলন ভালো। দেশে কমবেশি এক কোটি টন আলু উৎপাদিত হয়। তাতে দাম সাধারণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকে। তবে এবার আলুর দাম গত বছরের এই সময়ের তুলনায় বেশি।

 

সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) বলছে, গত বছরের এই সময়ে বাজারে আলুর কেজি ছিল ২৮ থেকে ৩০ টাকা; যা এ বছর ৪৮ থেকে ৫০ টাকা।

 

শ্যামবাজারের ইয়াসীন বাণিজ্যালয়ের পাইকারি আলু ব্যবসায়ী সুজন সাহা বলেন, রাজশাহী থেকে সর্বশেষ কেনা আলুর দাম পড়েছে প্রতি কেজি ৩৮ টাকা ৪০ পয়সার মতো। এরপর পরিবহন ও শ্রমিকের খরচ আছে। তাতে ৪০ টাকার নিচে পাইকারিতে আলু বিক্রি করা যাচ্ছে না। মোকামে দাম বেশি থাকায় বাড়তি দরে আলু কিনতে হচ্ছে। তবে আলুর সরবরাহ স্বাভাবিক আছে।

 

তিনি বলেন, বিক্রমপুরের প্রতি বস্তা আলু (৬০ কেজি) ২৩০০ টাকা। যা প্রতি কেজির দাম পড়ে ৩৮ টাকার আর রাজশাহীর প্রতিবস্তা (৬৫ কেজি) ২৬০০ টাকার যা প্রতিকেজির দাম পড়ে ৪০ টাকা। গত কয়েক তিন ধরে বাজারে আলুর সরবরাহ কম। যেখান প্রতিদিন শ্যাম বাজারে ১০টি গাড়ি আসতো সেখানে তিনটি আসছে। কোল্ডস্টোর থেকে আলু ছাড়ছে ধীরে। মূলত বড় ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে দাম বাড়াচ্ছে।

 

রাজধানীর সূত্রাপুর বাজারের আলু ব্যবসায়ী বলরাম সাহা বলেন, গত কয়েকদিন ধরে আলুর দাম মানভেদে কেজিতে ৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। আগে ৪০ টাকায় কিনে ৪৫ টাকায় বিক্রি করেছি। এখন ৪৫ টাকায় কিনে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছি। আলু কিনতে হচ্ছে বেশি দামে, তাতে বাড়িয়ে বিক্রি করতে হচ্ছে। বড় ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে দাম বাড়াচ্ছেন।

 

অভ্যন্তরীণ বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে গত ১৯ আগস্ট হঠাৎ করে পেঁয়াজ রপ্তানিতে ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে ভারত। যা চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বহাল থাকবে। এর আগে শুল্কমুক্তভাবেই দেশটি থেকে পেঁয়াজ আসতো বাংলাদেশে। ফলে বাংলাদেশের বাজারে বেড়েছে আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজের দাম। সে সুযোগ দেশি পেঁয়াজেরও দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

 

রাজধানীর পাইকারি ও খুচরা বাজারে ঘুরে দেখা যায়, পাইকারি বাজারে আমদানি করা প্রতি পাল্লা (৫ কেজি) ভারতীয় পেঁয়াজ মান ভেদে বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা থেকে ২৮০ টাকায়। যা কেজিতে পড়ছে ৪০ টাকা থেকে ৫৬ টাকা। খুচরা বাজারে সে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকা কেজি দরে। আর দেশি পেঁয়াজ পাইকারি বাজারে ৩৬০ থেকে ৩৯০ টাকা পাল্লা৷ যা প্রতিকেজির দাম পড়ে ৭২ থেকে ৭৮ টাকা। খুচরা বাজারে প্রতিকেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮৫ থেকে ৯০ টাকায়। দেশের বাজার নিয়ন্ত্রণে ভারত ছাড়াও আরও ৯ দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দিয়েছে সরকার।

 

ভারত ছাড়া চীন, মিশর, পাকিস্তান, কাতার, তুরস্ক, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে পেঁয়াজ আনা হবে। এ পর্যন্ত মোট ১৩ লাখ ৭৩ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতির বিপরীতে দেশে এসেছে ৩ লাখ ৭৯ হাজার টন। এর মধ্যে চীন থেকে ২৪০০ টন, মিশর ৩৯১০ টন, পাকিস্তান থেকে ১১৮২০ টন, কাতার ১১০০ টন, তুরস্ক ২১১০ টন, মিয়ানমার ২০০টন, থাইল্যান্ড ৩৩ টন, নেদারল্যান্ডস ৪ টন ও ইউএই থেকে ৩ টনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

 

কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, বছরজুড়েই কোনো না কোনো জাতের পেঁয়াজ উৎপাদন হচ্ছে। দেশে বছরে পেঁয়াজের মোট চাহিদা রয়েছে ২৬ থেকে ২৮ লাখ টন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন হয়েছে ৩৪ লাখ ৫৬ হাজার টন। তবে উপযুক্ত সংরক্ষণের অভাবে প্রতি বছর ২৫ থেকে ৩৫ শতাংশ পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে যায়। গড়ে ৩০ শতাংশ নষ্ট হলেও মোট উৎপাদনের পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ২৪ লাখ টন। সেই হিসাবে ২ থেকে ৪ লাখ টনের ঘাটতি থাকে।

 

মূলত এই আমদানিকৃত চার লাখ টন পেঁয়াজ বাজারের ওপর খুব বড় প্রভাব ফেলে। অথচ এর চেয়ে বেশি পরিমাণে আমদানি হয়েছে।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version