-->

বইতে শুরু করেছে নির্বাচনী হাওয়া

নিখিল মানখিন
বইতে শুরু করেছে নির্বাচনী হাওয়া

নিখিল মানখিন: আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর মাত্র চার মাস বাকি। বিএনপি ও আওয়ামী লীগের সাংঘর্ষিক অবস্থানে উত্তপ্ত রাজনীতির মাঠ। এমন পরিস্থিতিতেও দেশে বইছে নির্বাচনী ডামাডোল। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের নির্বাচনী জনসংযোগে মুখরিত মাঠ-প্রান্তর। বিভিন্ন দিবস ও কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে ব্যানার ও পোস্টারে ছেয়ে যাচ্ছে এলাকাসমূহ।

 

পথসভা এবং মোটরসাইকেল বহর দিয়ে চলছে শোডাউন। আর বিএনপির নির্বাচনী জনসংযোগ চলছে ভিন্ন কৌশলে। নানা কর্মসূচির মাধ্যমে দলটির সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হাইকমান্ডের সামনে নিজেদের তুলে ধরার চেষ্টা করছেন।

 

ময়মনসিংহ-১ আসনে (হালুয়াঘাট-ধোবাউড়া) অনেক আগেই সৃষ্টি হয়েছে জাতীয় নির্বাচনের আবহ। এই আসনে নৌকার মনোনয়নপ্রত্যাশীর সংখ্যা হবে ডজন খানেক। তবে দৃশ্যমান নির্বাচনী জনসংযোগে আছেন পাঁচজন। এলাকায় প্রচারণায় এগিয়ে আছেন আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত সহকারী প্রতিকা চিচামের স্বামী নিঃশেষ দ্রং।

 

তিনি ভোরের আকাশকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় রাজনৈতিক মাঠে নেমেছি। সাধারণ মানুষের মাঝে মিশে গেছি। তাদের সুখ-দুঃখের সহভাগী হচ্ছি। দুটি উপজেলার সবকয়টি ইউনিয়নের প্রত্যন্ত এলাকাসমূহে নির্বাচনী জনসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছি। তুলে ধরছি বর্তমান সরকারের উন্নয়নের চিত্র। দলীয় নেতাকর্মীরা আমার সঙ্গে আছেন। দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে বেশ আশাবাদী।

 

তবে দলীয় হাইকমান্ডের মনোনীত প্রার্থীকে বিজয়ী করতে মন-প্রাণ উজাড় করে কাজ করব বলে জানান নিঃশেষ দ্রং। এভাবে শুধু নিঃশেষ দ্রং নন, নির্বাচনী জনসংযোগ করে যাচ্ছেন প্রয়াত সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও আদিবাসী নেতা প্রমোদ মানকিন এমপির পুত্র বর্তমান এমপি জুয়েল আরেং, ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ খান, উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান মাহমুদুল হক সায়েম, ধোবাউড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের (প্রস্তাবিত) সহসভাপতি অধ্যক্ষ হেলাল উদ্দিন প্রমুখ।

 

তাদের পদচারণায় প্রতিদিনই এলাকায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে নির্বাচনকেন্দ্রিক বিভিন কর্মসূচি। জাতীয় শ্রমিক লীগ, ধোবাউড়ার যুগ্ম আহব্বায়ক পিবলু মানখিন ভোরের আকাশকে জানান, মোটরসাইকেল বহর ও পথসভার মাইকিংয়ের শব্দে মুখর থাকছে এলাকাসমূহ। বইছে নির্বাচনী হাওয়া। ভোটারদের কাছে ছুটে যাচ্ছেন মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। বেশ মজাই লাগছে বলে জানান পিবলু মানখিন।

 

এই আসনে বিএনপির একক শক্তিশালী প্রাথৃী হিসেবে আছেন দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স। দীর্ঘ বছর এলাকাবাসীর সঙ্গে যুক্ত থাকার কারণে তিনি বেশ সুবিধাজনক অবস্থানে আছেন বলে জানা গেছে। তিনিও কৌশলে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।

 

মাঠ-প্রান্তর চষে বেড়াচ্ছেন দুর্গাপুর ও কলমাকান্দা নিয়ে গঠিত নেত্রকোনা-১ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য মানু মজুমদার, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের পরপর তিনবার কার্যকরী কমিটির সদস্য উপাধ্যক্ষ রেমন্ড আরেং, সাবেক এমপি মোস্তাক আহমেদ রুহী ও ছবি বিশ্বাস, দুর্গাপুরের উপজেলা চেয়ারম্যান জান্নাতুল ফেরদৌস আরা ঝুমা তালুকদার প্রমুখ। তারা প্রত্যেকই নিজ নিজ নির্বাচনী জনসংযোগে সক্রিয় আছেন।

 

এ আসনে বিএনপির একক প্রার্থী কেন্দ্রীয় কমিটির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল। আর কৌশলে বিভিন্ন দলীয় কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের মাধ্যমে নির্বাচনী প্রচারণা করে যাচ্ছেন। প্রকাশ্যে মাঠে আছেন জাতীয় পার্টি (জাপা) থেকে মনোনয়ন চাইবেন গোলাম রব্বানী।

 

এভাবে শুধু ময়মনসিংহের ধোবাউড়া-হালুয়াঘাট, নেত্রকোনার দুর্গাপুর-কলমাকান্দা আসন নয়, সারা দেশে বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে বইছে জাতীয় নির্বাচনের হাওয়া। নির্বাচনের আগে দলীয় নেতাকর্মীদের কাছে বেশ কয়েকটি বিষয় চ্যালেঞ্জ মনে হচ্ছে। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাকর্মীরা ভোটারদের কাছে এখন থেকে ভোট চাইতে শুরু করেছেন। স্বয়ং আওয়ামী লীগ সভাপতি বেশ কয়েকটি জনসভায় নৌকার পক্ষে ভোট চেয়েছেন। দল-মত নির্বিশেষে সবার কাছেই দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশীরা ভোট চাচ্ছেন।

 

বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকা সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের ব্যানার ও পোস্টারে সয়লাব হয়ে গেছে দেশ। মানুষের মুখে মুখে এখন নির্বাচনী আলোচনা। উপজেলা শহর ও গ্রামাঞ্চলের মোড়ের চা দোকানগুলোতে চলে নির্বাচনকেন্দ্রিক মুখরোচক কথাবার্তা। সন্ধ্যা হলেই ক্রেতায় ভরপুর থাকছে চা দোকানগুলো। নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন নিয়ে শঙ্কাও উঁকি দেয় তাদের মনে। তৃণমূলের ভোটাররা কিছুটা দ্বিধা দ্বন্দ্বে আছেন। আগামী দিনগুলো কেমন হবে, কারা কারা নির্বাচনে অংশ নেবেন, বিদেশিদের অবস্থান কী হবে- লোকজনের আলাপে এসব কথাও বের হয়ে আসছে।

 

সরেজমিন ঘুরে আরো দেখো গেছে, ক্ষমতার অপব্যবহার, কর্মীদের অবমূল্যায়ন ও পরিবারকেন্দ্রিক রাজনীতিসহ নানা অভিযোগ মাথায় নিয়ে দলের কর্মী-সমর্থকদের কাছে ভেড়ার চেষ্টা করছেন স্থানীয় এমপিরা। অধিকাংশ নির্বাচনী এলাকায় দেখা যাচ্ছে নতুন নতুন মুখ। তারা নিয়ম করে নিজ নিজ এলাকায় সময় দিচ্ছেন। তাদের পদচারণায় উজ্জীবিত কর্মী-সমর্থকরা।

 

মূলত, বর্তমান এমপিদের টেক্কা দিয়ে মনোনয়ন নিশ্চিত করতে চান তারা। বসে নেই বর্তমান এমপিরাও। তারাও ফের নৌকার মনোনয়ন নিশ্চিত করতে চেষ্টা করছেন। দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্ব-বিভেদ, রাগ-ক্ষোভ ও অভিমান ভুলে সবাইকে নিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। উঠান বৈঠক, কর্মী ও বর্ধিত সভা এবং দিবসভিত্তিক কর্মসূচির মধ্য দিয়ে তৃণমূলের রাজনীতিতে ফের বইছে নির্বাচনী হাওয়া।

 

মনোনয়নপ্রত্যাশীদের শুভেচ্ছা ও শোডাউন ব্যানার- পোস্টার তৈরি করার হার বহুগুণ বেড়ে গেছে। ব্যস্ততা বেড়েছে ছাপাখানার লোকজনের মধ্যে। আর নির্বাচনী প্রচারের সব সব চেয়ে বড় অনুষজ্ঞ হলো পোস্টার। মনোনয়নপ্রত্যাশীরা পোস্টার ছাপাতে ছুটছেন ছাপাখানায়। ফলে ব্যস্ত সময় পার করছেন ছাপাখানার মালিক-কর্মচারীরা। যেকোনো বড় নির্বাচনের আগে ছাপাখানা মালিকদের বাড়তি কাজের চাপ। আর এই সময়ে সুযোগ থাকে বাড়তি কিছু আয় রোজগারের। তাই সময়মতো পোস্টার ডেলিভারি দিতে রাত জেগে কাজ করছেন শ্রমিকরা।

 

এদিকে, আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্র জানায়, বসে নেই আওয়ামী লীগ। জাতীয় নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করতে অনেক আগেই নির্দেশনা দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নিজ নিজ এলাকায় দলীয় মনোনয়ন পেতে দলীয় হাইকমান্ডের নজরে পড়তে নানা উপায়ে শোডাউন করে যাচ্ছেন দলটির সম্ভাব্য প্রার্থীরা। জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনায় জেলা ও বিভাগীয় নেতাদের নিয়ে দফায় দফায় সভা করে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ হাইকমান্ড।

 

দল গোছানোর পাশাপাশি বিশ্বের প্রভাবশালী দেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ ও আলোচনার মাত্রা বাড়িয়েছে কয়েকগুণ। এ লক্ষ্যে দলীয় কোন্দল সৃষ্টির কারণসমূহ উদ্ঘাটন ও নিরসন এবং শরিক দলগুলো গোছানোর কার্যক্রম চালাচ্ছে দলটি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ের তৃতীয় ধাপে রয়েছে আওয়ামী লীগ।

 

আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা বলছেন, দলকে প্রস্তুত করার অংশ হিসেবে একাধিক তৎপরতা এখন চলছে, যার মূল উদ্দেশ্য হলো মাঠ পর্যায়ে কর্মী ও সমর্থকদের চাঙ্গা করে নির্বাচনের আবহ তৈরি করা। এটি করতে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে স্থানীয় পর্যায়ে নেতাদের মধ্যে কোন্দল নিরসনের ওপর। একই সঙ্গে নানা ঘটনায় আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে অনেকে মনে করেন।

 

সে কারণে দল ও সরকারের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রচারের কৌশলও নিয়েছে দলটি। পাশাপাশি প্রভাবশালী দেশ ও সংস্থাগুলোর সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগের মাধ্যমে ‘চাপ মোকাবিলা’র চেষ্টাও চলছে। ঘরের পাশাপাশি বিরোধী দল এবং বিশ্বের প্রভাবশালী দেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ ও আলোচনার মাত্রা কয়েকগুণ বাড়িয়েছে আওয়ামী লীগ। স্বাধীনতার সপক্ষের রাজনৈতিক দলগুলোকে দলে টানার চেষ্টা করছে ক্ষমতাসীনদের ১৪ দলীয় জোট।

 

সম্প্রতি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, আওয়ামী লীগ এখন নির্বাচনমুখী। আওয়ামী লীগ সংবিধানের মর্যাদা রক্ষা করে, আর সে আলোকেই আগামী নির্বাচন করবে। সার্বিক পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।

 

আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য মুহাম্মদ ফারুক খান ভোরের আকাশকে বলেন, নির্বাচন সামনে রেখে দলের মূল কাজটি হলো সঠিক প্রার্থী বাছাই করা এবং সে কাজটিই তারা এখন করছেন। বিদ্যমান সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনের বিকল্প নেই। দলটির নির্বাচনকেন্দ্রিক কার্যক্রম অনেক আগেই শুরু হয়েছে বলে জানান মুহাম্মদ ফারুক খান।

 

গত ৩ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচন কমিশন যে সময় তফসিল ঘোষণা করবে আমরা; বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সে অনুযায়ী নির্বাচন করার জন্য প্রস্তুত আছি। আমাদের প্রস্তুতি চলছে।

 

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী ভোরের আকাশকে বলেন, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য আওয়ামী লীগের প্রস্তুতি চলছে। সম্ভাব্য দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে সতর্কতার সঙ্গে এগোচ্ছে দলটি। বিএনপির অসাংবিধানিক কথাবার্তায় কান দিয়ে লাভ নেই। দেশে ইতোমধ্যে জাতীয় নির্বাচনের আবহ তৈরি হতে শুরু করেছে। জনগণ তাকিয়ে আছে নির্বাচনের দিকে।

 

আর আওয়ামী লীগ সব সময় নির্বাচনবান্ধব দল। নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছে। দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশীরা ইতোমধ্যে জনগণের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। ভোট প্রার্থনা করছেন। শোডাউন করে দলীয় হাইকমান্ডের নজরে আসার চেষ্টা করছেন।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version