-->
শিরোনাম

নির্বাচনের আগে হাসিনা-মোদির শেষ বৈঠক আজ

নিখিল মানখিন
নির্বাচনের আগে হাসিনা-মোদির শেষ বৈঠক আজ

নিখিল মানখিন: আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকেন্দ্রিক টানটান উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতির মধ্যে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় বৈঠক। আজ শুক্রবার বিকেলে নয়াদিল্লিতে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচনের আগে এটি হবে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর শেষ দ্বিপক্ষীয় বৈঠক।

 

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচন নানা কারণে বাড়তি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক আবেদন সৃষ্টি করেছে। এক্ষেত্রে প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তা বেড়েছে বহুগুণ। আজকের বৈঠকটির দিকে তাকিয়ে আছে বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দল এবং বিভিন্ন মহল। তাই সব ইস্যু ছাপিয়ে গিয়ে বৈঠকে প্রাধান্য পাবে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ সময় তিনটি সমঝোতা স্মারক সই হবে।

 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নয়াদিল্লি সফর উপলক্ষে বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন জানান, আগামীকাল শুক্রবার (আজ) নয়াদিল্লিতে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বসবেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বৈঠকের আগে ঢাকা-নয়াদিল্লির মধ্যে তিনটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হবে।

 

পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে আগামী ৮-১০ সেপ্টেম্বর নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠেয় জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে অংশগ্রহণের জন্য ভারত সফর করবেন। তিনি ৮ সেপ্টেম্বর নয়াদিল্লি যাবেন। এদিন বিকেলে তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন। যেখানে দ্বিপাক্ষিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা হবে। দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের আগে তিনটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করা হবে বলে আশা করা যায়।

 

তিন এমওইউ প্রসঙ্গে মোমেন বলেন, একটি হচ্ছে, কৃষি গবেষণা ও শিক্ষা সহযোগিতা। এটি দুই দেশের মধ্যে কৃষি গবেষণা খাতে জোরদার ভূমিকা পালন করবে। আরেকটি হচ্ছে, সাংস্কৃতিক চুক্তি-২০২৩ থেকে ২৫ পর্যন্ত বর্ধিত করার জন্য। আরেকটি হচ্ছে, ভারতের এনপিসিআই ও বাংলাদেশ ব্যাংকের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক, এর মাধ্যমে দুই পক্ষের মধ্যে নেটওয়ার্ক-টু-নেটওয়ার্ক সংযোগের মাধ্যমে রুপি-টাকা পারস্পরিক লেনদেনের সম্পাদন সহজ হবে।

 

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক পর্যায়ে সুগভীর সম্পর্ক বিদ্যমান। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ, বিভিন্ন সময়ে পারস্পরিক সহযোগিতা, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সমমনা অবস্থান দুই দেশের সম্পর্ককে গভীরতর করেছে।

 

তিনি বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী নেতৃত্বে দুই দেশের সম্পর্ক অভাবনীয় গতি লাভ করেছে, যা সোনালি অধ্যায় হিসেবে আখ্যায়িত হয়েছে। ভারত বাংলাদেশকে অন্যতম বন্ধুপ্রতিম এবং সহযোগী রাষ্ট্র হিসেবে বিবেচনা করে বলেই জি-২০ সম্মেলনে অতিথি রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ করেছে।

 

প্রধানমন্ত্রীর সফরসূচিতে যা থাকছে: এ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আগামী ৯ সেপ্টেম্বর জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনের উদ্বোধন হবে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী সম্মেলনের বিভিন্ন অধিবেশনে অংশগ্রহণ করবেন। প্রধানমন্ত্রী ‘এক বিশ্ব এবং এক পরিবার’ শীর্ষক দুটি অধিবেশনে বক্তব্য দেবেন। তিনি বর্তমান বিশ্ব সম্প্রদায়, বিশেষ করে গেøাবাল সাউদে জলবায়ু পরিবর্তন, করোনা মহামারি পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার, ইউরোপে যুদ্ধের ফলে জ্বালানি-খাদ্যপণ্য-সারের মতো গুরুত্বপূর্ণ পণ্যের বৈশ্বিক সরবরাহ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হওয়ার মতো যেসব চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে তা মোকাবিলার বিষয়ে মূল্যবান বক্তব্য তুলে ধরবেন।

 

তিনি বলেন, পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী আর্থ-সামাজিক বিভিন্ন ক্ষেত্রে বর্তমান সরকারের আমলে বাংলাদেশের অর্জিত অভাবনীয় সাফল্যের অভিজ্ঞতা সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী বিশ্ব নেতৃবৃন্দের সামনে উপস্থাপন করবেন।

 

পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, আগামী ৯ সেপ্টেম্বর সরকারপ্রধান সম্মেলনের সাইডলাইনে একাধিক বিশ্ব নেতার সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হবেন। প্রাথমিকভাবে সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স ও প্রধানমন্ত্রী, আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট, দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকের সম্ভাবনা রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর।

 

মোমেন জানান, আগামী ১০ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী অন্যান্য দেশের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে রাজঘাটে মহাত্মা গান্ধীর সমাধিসৌধে শ্রদ্ধা জানাবেন। এরপর তিনি জি-২০ সম্মেলনের সমাপনী অধিবেশনে অংশগ্রহণ করবেন।

 

প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে নয়াদিল্লিতে যাবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, অ্যাম্বাসেডর-অ্যাট-লার্জ-যিনি জি-২০-তে বাংলাদেশ শেরপা, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তাবৃন্দ, গভর্নর, বাংলাদেশ ব্যাংক ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিবরা। আগামী ১০ সেপ্টেম্বর নয়াদিল্লি থেকে ঢাকায় ফিরবেন সরকারপ্রধান।

 

এদিকে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ভারতে অনুষ্ঠিতব্য জি-২০ সম্মেলন চলাকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অর্থনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিসহ বেশ কয়েকটি দেশের সরকার প্রধানের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন।

 

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্রে জানা গেছে, ভারত ছাড়াও আর্জেন্টিনা, কানাডা, কোরিয়া, সংযুক্ত আবর আমিরাত, সৌদি আরবের সরকার প্রধানের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সাইডলাইনে আলোচনা হতে পারে। এসব দেশের সঙ্গে আলোচনায় বিনিয়োগ, রপ্তানি, জনশক্তি রপ্তানি, খাদ্য, জ্বালানি, সার, পর্যটন ও সংস্কৃতি, নারী নেতৃত্ব উন্নয়ন এবং প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের মতো বিষয়গুলো গুরুত্ব পাবে।

ভারত-বাংলাদেশ বৈঠকের বাড়তি আবেদন: বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে মার্কিন ‘হস্তক্ষেপ’ নিয়ে এ মুহূর্তে রাজনীতি সরগরম। সংসদ নির্বাচনে ভারতের সম্ভাব্য ভ‚মিকাও আলোচনার স্তরে উঠে এসেছে। বাংলাদেশের নির্বাচন, আঞ্চলিক শান্তি ও সুস্থিতি রক্ষায় ভারতের আগ্রহ, জঙ্গিদের মাথাচাড়া দেয়ার সম্ভাব্য প্রবণতা নিয়ে ভারতের উদ্বেগ ও দুশ্চিন্তা রয়েছে। বিভিন্ন পর্যায়ে বিষয়গুলো আলোচিতও হচ্ছে। দুই প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে আঞ্চলিক রাজনৈতিক পরিস্থিতিও উঠে আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

 

কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন খুব কাছাকাছি হওয়ায় প্রধানমন্ত্রীর এ সফর ঢাকার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই শেখ হাসিনার এ সফর ঘিরে ঢাকার কূটনীতিকরা একই সঙ্গে বৈশ্বিক ও দ্বিপক্ষীয় গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলো নিয়ে ব্যস্ত।

 

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্য থেকে শুধু বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে ভারত। অতিথি হিসেবে হিসেবে দাওয়াত দেয়ার পেছনের বড় কারণ বাংলাদেশ গ্লোবাল সাউথের মুখপাত্র। জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশে নেতৃস্থানীয় পর্যায়ে কাজ করছে। বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে সোচ্চার। যদিও এলডিসি (স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা) থেকে বের হয়ে যাচ্ছে; কিন্তু বাংলাদেশ ৪৮টি এলডিসি দেশের নেতা ছিল বহু বছর এবং এখনও এলডিসির ব্যাপারে সোচ্চার, এলডিসি, দক্ষিণের ইস্যুগুলো এবং জলবায়ু ও অভিবাসন ইস্যু তুলে ধরা হবে। এ সম্মেলনে বাংলাদেশ আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে যুদ্ধ বন্ধেরও আহব্বান জানাবে। বাংলাদেশের হারানোর কিছু নেই, জি-২০ সম্মেলনে দেশটি বিশ্বের বড় কণ্ঠস্বর হবে বলে মনে করে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

 

এবারের জি-২০ সম্মেলন উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন দিল্লি সফর প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশ-ভারত সবসময়ই সর্বোচ্চ রাজনৈতিক পর্যায়ে তিস্তা ইস্যু নিয়ে আলোচনা করেছে। আমরা এটাকে সবসময় আলোচনার এজেন্ডায় রাখতাম। এবারো আমরা আশা করছি, প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে কথা বলবেন।

 

বাংলাদেশ মনে করে, দুই দেশের পানি বণ্টন সমস্যা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান হবে। কারণ দুই দেশ পারস্পরিক বোঝাপড়ার ভিত্তিতে কাজ করতে মানসিকভাবে একমত। আমাদের আরো কিছু সমস্যা আছে। আমাদের ৫৪টি অভিন্ন নদী রয়েছে। গঙ্গার পানি চুক্তি আরেকটি বিষয়, যা শিগগিরই শেষ হয়ে যাবে।

 

সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মো. তৌহিদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে সামনে যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে, আমাদের প্রত্যাশা ওই বৈঠকে দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে যেসব বিষয়ে আলোচনা হবে তা যেন গণমাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। আমার অনুমান, পশ্চিমা চাপ নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হবে। পশ্চিমা চাপ নিয়ে আলোচনার বিষয়টি আমরা কখনো প্রমাণ করতে পারব না, সরকারও হয়তো কখনো স্বীকার করবে না। এর বাইরে দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে আসলে কী আলোচনা হবে তা আমরা জানি না, কেউ জানে কিনা তা নিয়েও আমার সন্দেহ আছে।

 

দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে বৈঠকে কোন বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন এমন প্রশ্নের জবাবে সাবেক এই পররাষ্ট্র সচিব বলেন, মাস চারেক পরই বাংলাদেশের নির্বাচন। তাই সরকার এখন এগুলো নিয়ে চিন্তিত হবে না। তবে আলোচনা করবে, গতানুগতিক আলোচনা হবে। তিস্তার সমস্যা সমাধান বা সীমান্তে হত্যা বন্ধ হয়ে যাবে এমন কিছু হবে না। পরস্পরের প্রতি আস্থা, বাংলাদেশের ভালো চাওয়া, বিদ্যমান সমস্যাগুলো সমাধানের আশ্বাস এবং প্রকল্পের অর্থ কীভাবে খরচ হবে বাহ্যিকভাবে এগুলোই প্রকাশ পাবে। এগুলো আমার অনুমান। তবে ভারতের অবস্থানটা কী হবে সেটা আমাদের দেখতে হবে।

 

অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ বলেন, এবারের জি-২০ সম্মেলনে বাংলাদেশ প্রতিবেশী দেশ হিসেবে আমন্ত্রণ পেয়েছে। এই সম্মেলনের সঙ্গে বাংলাদেশের নির্বাচনের এজেন্ডার কোনো সম্পর্ক নেই। সুতরাং বিষয়টি নিয়ে আমাদের দেশে যে জল্পনা-কল্পনা হচ্ছে- তা নানা কারণে হচ্ছে। কিন্তু এই ধরনের সম্মেলনগুলোতে এসব বিষয় নিয়ে কখনোই আলোচনা হয় না বলে আমরা বিশ্বাস করি।

 

তিনি বলেন, তবে আগের দিন বাংলাদেশ-ভারত সরকারের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যকার বৈঠক গুরুত্বপূর্ণ।

 

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন বলেন, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে অনেকের থেকে অনেক কথাই শোনা যাচ্ছে। কিন্তু আমার মনে হয় না জি-২০ সম্মেলনে বাংলাদেশের নির্বাচন ইস্যু নিয়ে কোনো কথা হবে। যে ইস্যুতে সম্মেলন হচ্ছে। সেই বিষয়েই শুধু আলোচনা হবে বলে আমাদের ধারণা। শুধু যারা ক্ষমতায় থাকার জন্য, ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য রাজনীতি করে-তারাই এই বিষয়টি নিয়ে নানা ধরনের প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছে। অন্য বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে বলে আমরা মনে করি না।

 

তিনি বলেন, তবে শেখ হাসিনা-মোদি বৈঠকে নানা বিষয় আলোচনা হতে পারে। বিশ্বের সর্ববৃহৎ অর্থনীতিগুলোর জোট জি-২০ এর সদস্য নয় বাংলাদেশ। জোটের বর্তমান সভাপতি ভারত ৯টি দেশকে বিশেষ অতিথি হিসেবে সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। এমন এক সময় বাংলাদেশ এই সম্মেলনে আমন্ত্রণ পেয়েছে, যখন বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে সরব ভূমিকা পালন করছে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা কিছু দেশ। প্রতিনিয়ত চালাচ্ছে কূটনৈতিক তৎপরতা।

 

এ বিষয়ে গত মঙ্গলবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ৮ তারিখ শুক্রবার সন্ধ্যার সময় বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। আমাদের দ্বিপাক্ষিক অনেক ইস্যু রয়েছে। সবগুলো নিয়ে আলাপ হবে। আমাদের কানেক্টিভিটি ইস্যু আছে, তিস্তার পানির বিষয়ে কথা বলব। এরপর এনার্জি সিকিউরিটি, ফুড সিকিউরিটি নিয়ে আলাপ হবে।

 

মাসুদ বিন মোমেন আরো বলেন, দুই দেশের মধ্যে এখন প্রচুর প্রজেক্টও রয়েছে, সেগুলোর অগ্রগতি নিয়ে আলাপ হবে। পুরো দ্বিপাক্ষিক বিষয় নিয়ে আলাপ করার সুযোগ হবে না। তারপরও যত গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু রয়েছে সেগুলো নিয়ে আলাপ হবে। নির্বাচনের আগে ভারতের সরকার প্রধানের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক নির্বাচনের কারণে আলাদা গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।

 

গত আগস্টে আওয়ামী লীগ টিমের ভারত সফর: বিজেপির আমন্ত্রণে ৬ থেকে ৯ আগস্ট ভারত সফর করে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাকের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল। আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাকের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি দলে ছিলেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, কার্যনির্বাহী সদস্য মেরিনা জাহান ও সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য অ্যারোমা দত্ত।

 

এই সফর নিয়ে আওয়ামী লীগের ধানমন্ডি কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে আব্দুর রাজ্জাক বলেন, সফরে তারা জেনেছেন যে ভারত বাংলাদেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা চায়। ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক রক্তের অক্ষরে লেখা। এই সম্পর্কের সঙ্গে কারো সম্পর্ক তুলনীয় নয়।

 

সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ভারতের ভূমিকার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে আব্দুর রাজ্জাক বলেন, নির্বাচন করবে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন, সহযোগিতা করবে বাংলাদেশ সরকার। এখানে ভারতের কিছু করার নেই। এ বিষয়ে তারা কোনো মন্তব্য করেনি। তা ছাড়া ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ‘কানেক্টিভিটি’ অনেক বেশি। বাংলাদেশে কী হচ্ছে, তারা সবকিছু জানে।

 

আব্দুর রাজ্জাক আরো বলেন, ‘ভারতের জন্য চীন সব সময় দুশ্চিন্তার কারণ। সে জন্যই তাদের সীমান্তে মাঝে মাঝে উত্তেজনা তৈরি হয়। আমরা বলেছি আমাদের পররাষ্ট্রনীতি সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সাথে শত্রুতার নয়। সেই নীতি নিয়েই আমরা চলি। কিন্তু ভারতের সাথে আমাদের সম্পর্ক রক্তের অক্ষরে লেখা। এই সম্পর্কের সাথে কারও সম্পর্ক তুলনীয় নয়।’

 

সংবাদ সম্মেলনে ভারত সফর করা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আমরা যাদের সাথে আলোচনা করেছি, তারা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে, বাংলাদেশে সংবিধানের আলোকে নির্বাচন হবে। এখানে যেসব দাবি আছে সেগুলোর প্রয়োজন নাই, এটা তারা বোঝে। তারা মনে করে সংবিধানের আলোকে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট বাংলাদেশে হবে। আমাদের সাথে জঙ্গিবাদ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। জঙ্গিদের একটি ক্রস বর্ডার কানেকশন রয়েছে, এটা নিয়ে তারা ওয়াকিবহাল আছে।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version