আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে অভিজ্ঞতা ও মতামত নিতে সুধীজনের সঙ্গে সংলাপে বসছে নির্বাচন কমিশন। ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এবারের আলোচনাটা হবে ব্যতিক্রমধর্মী। অর্থাৎ সাধারণ সংলাপের মতো না করে সেমিনারধর্মী আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে আলোচনার জন্য আটজন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। বাকি আরো ২০ থেকে ২৫ জনকে অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। প্যানেল আলোচকদের আলোচনা শেষে উন্মুক্ত সেশন পরিচালনা করা হবে।
ইসি আলমগীর এ বিষয়ে বলেন, সুধীজনের সঙ্গে বুধবার বৈঠক। নির্বাচন নিয়ে যারা চিন্তাভাবনা করেন অথবা বিভিন্ন সময় নির্বাচন করেছেন, তাদের কাছ থেকে আমরা ফিডব্যাক নেব। সার্বিকভাবে নির্বাচন সুষ্ঠু করতে ইসি এখন পর্যন্ত যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে, এতে বিশেষজ্ঞদের মতামত শোনা হবে। যদি এ বিষয়ে তারা ভালো কোনো পরামর্শ দিয়ে থাকেন, সেগুলো নেয়া হবে। পাশাপাশি নির্বাচনের জন্য আরো কী করা যেতে পারে, এগুলোই শুনব।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, মোট পাঁচটি ধাপে এই আলোচনার আয়োজনের চিন্তা আছে ইসির। এর প্রথম ধাপে আলোচনা করা হবে আগামীকাল বুধবার। তবে প্রথম আলোচনা অনুষ্ঠিত হওয়ার পর সিদ্ধান্ত নেয়া হবে পরবর্তী ধাপের আলোচনাগুলোর আয়োজন করা হবে কিনা। তবে এ মুহূর্তে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ করার কোনো সিদ্ধান্ত ইসির নেই বলে জানিয়েছেন মো. আলমগীর।
তবে ইসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ইসির সংলাপের প্রস্তুতি রয়েছে। পরিবেশ-পরিস্থিতি অনুকূলে হলে দলগুলোকে আলোচনার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হতে পারে।
আগামীকাল থেকে শুরু হতে যাওয়া সেমিনারধর্মী আলোচনায় অংশ নিতে প্রথম দিনে যে আটজনকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন, তাদের মধ্যে সাবেক নির্বাচন কমিশনার, সাবেক সচিব, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কয়েকজন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আছেন। তাদের প্রায় সবাই বিভিন্ন বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে বিভিন্ন টকশোতে অংশ নেন এবং পত্রিকায় কলাম লেখেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নির্বাচন কমিশন মূলত বিশিষ্টজনের কাছ থেকে তাদের প্রত্যাশার বিষয়টি শুনতে চায়। ইসি প্রথমে দেখতে চায় ১৩ সেপ্টেম্বরের আলোচনা কতটুকু ফলপ্রসূ বা ইতিবাচক হয়। এরপর বিষয়ভিত্তিক আরো অন্তত চারটি সেমিনারধর্মী আলোচনার আয়োজন করার চিন্তা আছে।
নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেন, সংসদ নির্বাচনের লক্ষ্যে রোডম্যাপ অনুযায়ী যখন যে প্রস্তুতি নেয়া দরকার আমরা সেভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছি। তবে এ মুহূর্তে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করার কোনো চিন্তা-ভাবনা নেই। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের একথা বলেন তিনি।
বিএনপি না এলে কী করবেন এমন প্রশ্নে ইসির সাবেক এই সচিব বলেন, এগুলো আমাদের বিষয় না। সংবিধানে যেভাবে বলা আছে, আমরা সেভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছি। বিষয়টা রাজনৈতিক। রাজনৈতিক দলগুলো বিষয়টা দেখবে। সংবিধান তো ইসিকে এসব বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়ার কোনো সুযোগ দেয়নি। সংবিধানের বাইরে তো কিছু করার এখতিয়ার নেই ইসির।
সিসি ক্যামেরা না রাখলে ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা কীভাবে নিশ্চিত করবেন?
এমন প্রশ্নের জবাবে মো. আলমগীর বলেন, আইন অনুযায়ী সিসি ক্যামেরা রাখতে হবে এমন কোনো বিধান নেই। নির্বাচন অনিয়ম হয় এমন অভিযোগ দেখার জন্য আমরা সিসি ক্যামেরা ব্যবহার করেছি। এজন্য যে অভিযোগ এলেই সঠিক কিনা তা দেখার জন্য। কিন্তু এটা তো কোনো ভোটের প্রক্রিয়ার মধ্যে পড়ে না। তিনশ আসনে সিসি ক্যামেরা ব্যবহার করা সম্ভব না। এত সিসি ক্যামেরা কে দেবে।
এত সিসি ক্যামেরা দেয়ার জন্য কোনো প্রতিষ্ঠান নেই। কয়েকটা সংগঠন মিলেও এত সিসি ক্যামেরা দিতে পারবে না। প্রায় আড়াই লাখ সিসি ক্যামেরা কীভাবে দেবে। ইন্টারনেটের সংযোগ কীভাবে দেবে। কীভাবে এত ক্যামেরা পর্যবেক্ষণ করবে। এটা তো সম্ভব না।
তিন বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ আসনেও সিসি ক্যামেরা ব্যবহার করা সম্ভব না। কারণ অনেক কেন্দ্র থাকে। ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র ঠিক হয় নির্বাচনের আগে, ওই সময় বাজেট আনা অসম্ভব। গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচনে অনিয়মে জড়িতদের শাস্তির বিষয়ে বলেন অনেক বিভাগ এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করেছে। কারো কারো শাস্তির বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে। যারা ক্ষমা করে দিয়েছেন, আমরা বলেছি ক্ষমা করার কোনো বিধান নেই। শাস্তি কম হলেও দিতে হবে।
তিনি বলেন, যারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্ব পালন করেন তাদের প্রতি আস্থা না রাখার কোনো কারণ নেই। যতগুলো নির্বাচন করেছি শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন হয়েছে। সামান্য ত্রুটি কোথাও হলে আমরা আমলে নিয়ে ব্যবস্থা নিয়েছি। দায়িত্ব পালনে আমাদের শতভাগ আন্তরিকতা ছিল এবং আমরা মনে করি যে জনগণ সেটা ভালোভাবে নিয়েছে।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য