রুদ্র মিজান: কোনোভাবেই রেহাই পাচ্ছেন না পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (এডিসি) হারুন অর রশিদ। ইতোমধ্যে পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা তার বিরুদ্ধে শাস্তিযোগ্য তথ্য-প্রমাণ পেয়েছেন।
একইভাবে আমলে নেয়া হচ্ছে এডিসি সানজিদা আফরিন নিপার অনৈতিকতা। এ বিষয়ে গঠিত তদন্ত কমিটি ইতোমধ্যে একাধিকবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন, প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য, শাহবাগ থানার ডিউটিরতদের তালিকা ও সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করেছেন। এতে এডিসি হারুনের গুরুতর অপরাধ সংঘটনের তথ্য-প্রমাণ মিলেছে।
একইভাবে খতিয়ে দেখা হচ্ছে, রাষ্ট্রপতির এপিএস আজিজুল হক মামুন ও সানজিদার অপরাধও। ঘটনার সময় থেকে শুরু করে গণমাধ্যমে দেয়া বক্তব্যসহ এ পর্যন্ত নানা কার্যকলাপ থেকে হারুন-সানজিদা সম্পর্কের বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে তদন্ত সংশ্লিষ্টদের কাছে। সব মিলিয়ে নিরপেক্ষভাবে, দক্ষতার সঙ্গে পুরো বিষয়টি তদন্ত করছে কমিটি।
পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, তদন্তে কোনো কিছুই বাদ যাচ্ছে না। সঠিক তদন্তের মাধ্যমে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হবে। পরবর্তীতে করা হবে বিভাগীয় মামলা।
এসব বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান সাংবাদিকদের বলেছেন, এডিসি হারুনের বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে যা করার, তা আমরা করেছি। তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। মামলা-তদন্ত এগুলো একটি প্রক্রিয়ায় হবে। এ বিষয়ে বিভাগীয় মামলা হবে। ভুক্তভোগী বা তার পরিবারের সদস্যরা মামলা করলেও সেটিও তদন্ত হবে বলে জানান তিনি। এ ঘটনার প্রেক্ষাপটে সরকার বা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিব্রত কিনা জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মানুষ মাত্রই ভুল করে। যে ভুল করে তার শাস্তি হয়, এটাই স্বাভাবিক। কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। সে যদি অপরাধ করে, তার শাস্তি তাকে পেতেই হবে।
পুলিশের কিছু কর্মকর্তা দাবি করেছেন এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া দরকার। এডিসি হারুন, সানজিদা ও রাষ্ট্রপতির এপিএস মামুন এ তিনজনের ভ‚মিকাই অনুসন্ধান করা উচিত। শুধু হারুন নয় তারা মামুনসহ দায়ী শাস্তি দাবি করেছেন।
পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানান, বিভাগীয় শাস্তি পেতে পারেন হারুন ও সানজিদা। পাশাপাশি মামুনের অপরাধ পাওয়া গেলে পুলিশের এ প্রতিবেদন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়েও জমা দেয়া হবে। এক্ষেত্রে সুপারিশ থাকবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের যে তিন সদস্যকে দিয়ে কমিটি করা হয়েছে। তাদের প্রতি আস্থা রয়েছে কর্মকর্তাদের।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (অপারেশসন্স) বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, তদন্ত কমিটির প্রতি আমাদের পরিপূর্ণ আস্থা রয়েছে। কোনো কিছুই বাদ যাবে না। তদন্তে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে সবকিছুই প্রকাশ পাবে বলে জানান তিনি।
এ ঘটনায় হারুন, সানজিদা শাস্তি পেতে পারেন। সরকারি চাকরি আইন-২০১৮ অনুসারে তিরস্কার থেকে শুরু করে চাকরিচ্যুতিও ঘটতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। গত ৯ সেপ্টেম্বর ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন এবং বিজ্ঞানবিষয়ক সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হলের সাধারণ সম্পাদক শরীফ আহমেদকে শাহবাগ থানায় নিয়ে এডিসি হারুনের নেতৃত্বে বেদম মারধর করা হয়।
এতে গুরুতর আহত হন ছাত্রলীগের এ দুই নেতা। তার আগে বারডেম হাসপাতালে ৩১ ব্যাচের এডিসি হারুন অর রশীদ ও ৩৩ ব্যাচের এডিসি সানজিদা আফরিন নিপাকে একসঙ্গে দেখে ক্ষেপে যান সানজিদার স্বামী রাষ্ট্রপতির সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) আজিজুল হক।
এ সময় বাগবিতন্ডা ঘটে। ওই সময়ে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আজিজুল হকের সঙ্গে ছাত্রলীগের ওই দুই নেতা উপস্থিত ছিলেন। হারুন ও সানজিদা অভিযোগ করেছেন, বারডেম হাসপাতালে হারুনের গায়ে হাত তোলেছেন মামুন। ঘটনা তদন্তে কাজ করছে ডিএমপির তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি। পুলিশের গঠন করা তদন্ত কমিটির সভাপতি করা হয়েছে ডিএমপি সদর দপ্তরের উপপুলিশ কমিশনার (অপারেশন্স) আবু ইউসুফকে।
কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন রমনা বিভাগের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (নিউমার্কেট জোন) শাহেন শাহ এবং অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা-মতিঝিল বিভাগ) মো. রফিকুল ইসলাম। ইতোমধ্যে এ ঘটনায় এডিসি হারুনকে বরখাস্ত করে রংপুর রেঞ্জে সংযুক্ত করা হয়েছে।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য