-->
শিরোনাম

আগুনে পুড়েছে মুরাদের কপাল

ইমরান খান
আগুনে পুড়েছে মুরাদের কপাল

ইমরান খান: আগুনে দোকান নয়, পুড়েছে মুরাদের কপাল। মা, ভাই-বোনের পরিবারটি তার উপার্জনের ওপর নির্ভরশীল। অতিকষ্টে জীবনযাপন করছিলেন তারা। স্বপ্ন দেখছিলেন পরিবারের অভাব দূর করবেন। ধার-দেনা করে সাত লাখ টাকা নিয়ে মোহাম্মদপুরের কৃষি মার্কেটে গত মাসে একটি কাপড়ের দোকান দেন মুরাদ। ব্যবসার শুরুতেই সব শেষ হয়ে গেছে। আগুনে পুড়েছে তার সর্বস্ব।

 

নিউ ফ্যাশন নামের এ কাপড়ের দোকানের মালিক মুরাদ বলেন, ‘ভাইগো, দোকান না, আগুনে আমার কপাল পুড়ে গেছে। সব ছাই হয়ে গেছে। কোনোকিছুই বের করতে পারিনি। এখন ঋণের টাকা দেব কীভাবে আর সংসার চালাব কীভাবে? কী করব, কিছুই বুঝতে পারছি না।’

 

তিনি জানান, ‘আমার বাসায় আমার মা-বোন ও ছোট ভাই ছাড়া আর কেউ নাই। বিভিন্ন জায়গা থেকে সাত লাখ টাকা ঋণ নিয়ে কাপড়ের দোকান শুরু করেছিলাম। গত মাসেই দোকান চালু হয়েছে। সবকিছু ভালোই চলছিল। কিন্তু আগুনে আমার ভাগ্যটাও পুড়ে গেল। আগুনে ভস্মীভ‚ত দোকানের দিকে হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে ছিলেন মুরাদ। কথা বলছিলেন আর তার চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়ছিল।’

 

‘সময় তখন প্রায় দুপুর। আগুন নিয়ন্ত্রণে। তবু তখনও কোথাও কোথাও ধোয়া উড়ছে। পুড়ে যাওয়া দোকানের অবস্থা দেখে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না করছেন অনেক ব্যবসায়ী। মার্কেটের গেটে ঢুকে একটু সামনে যেতেই দেখা গেলো, দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলছেন এক ব্যক্তি। কথা বলছেন আর কাঁদছেন। কখনও কখনও কান্নাজড়িত কণ্ঠে চিৎকার করে বলছেন, আমার এখন কি অইবো।

 

ঋণের এত টাকা কেমনে দিমু। আগুন আমার সব শেষ করে দিল। আমারে রাস্তায় বসাইয়া দিল।’ জানা গেলো তার নাম ওলি আহমেদ। কৃষি মার্কেটে তার একটি মসলার দোকান ছিল। ওলি আহমেদ বলেন, ‘বিভিন্ন জায়গা থেকে ঋণ নিয়ে দোকানে ২০ লাখ টাকার মাল তুলেছিলাম। আগুনে সব শেষ করে দিয়েছে। দোকানে ৫০ থেকে ৬০ হাজারের মতো নগদ টাকাও ছিল। এখন কীভাবে কি করব কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না।

 

আগুনের বিষয়ে তিনি জানান, রাত তিনটায় পরিচিত একজন কল করে আগুনের খবর দেয় তাকে। খবর পেয়ে মার্কেটে আসতে ১৫ থেকে ২০ মিনিট সময় লাগে তার। এসে দেখতে পান চারদিকে আগুন জ্বলছে। ভয়াবহ আগুন। দ্রুত আগুনের লেলিহান শিখা ছড়িয়ে যাচ্ছে সর্বত্র।

 

ওলি আহমেদ বলেন, শুধু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখলাম। গেটে তালা থাকায় ভেতরে ঢুকতে পারিনি। শুধু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখেছি আর কেঁদেছি। চোখের সামনে আমার এতো টাকার মালামাল পুড়েছে। আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর ছাই ছাড়া আর কিছুই পাইনি।’

 

মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে পাইকারি মুদি দোকান ছিল জাহাঙ্গীর আলম দুলালের। ভালো ব্যবসায়ী। প্রতিদিন বিপুল টাকার বেচাবিক্রি হয়। সেই দুলাল এক রাতের ব্যবধানে নিঃস্ব হয়ে গেছেন। মার্কেটের এক কোনে বসে তাকিয়ে ছিলেন পোড়া দোকানটার দিকে।

 

জাহাঙ্গীর আলম দুলাল বলেন, ২০ লাখ টাকা লগ্নি করে বছরখানেক আগে দোকানটা দিয়েছিলাম। ব্যবসাতো ভালোই হচ্ছিলো। ব্যবসা ভালো হয় আর আমি দোকানে আরও বেশি বিনিয়োগ করি। এখন আমার সব পুড়ে গেল। এভাবে নিঃস্ব হয়ে যাব তা কখনো ভাবিনি।

 

জানা গেছে, মোহাম্মদপুরের প্রধান এই কাঁচা বাজারটিতে বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে ৬০০ থেকে ৭০০। যার মধ্যে কাপড়ের দোকান, মুদি পণ্যের দোকান, জুতা, জুয়েলারি, বেকারি, প্লাস্টিক পণ্যসহ বিভিন্ন ধরণের দোকান রয়েছে। এর বাইরে সবজি বাজার, মাছ ও মাংসের বাজার রয়েছে।

 

খোঁজ নিয়ে গেছে, মসলা ও কাপড়ের দোকানের পাশাপাশি আগুনে অন্তত ১৮টি স্বর্ণের দোকান পুড়ে গেছে। এর মধ্যে মার্কেটের সামনের অংশে থাকা নয়টি ও ভেতরে নয়টি দোকান রয়েছে। আলিফ জুয়েলার্স, হেনা জুয়েলার্স, দুবাই জুয়েলার্স, সিঙ্গাপুর জুয়েলার্স, মুন জুয়েলার্স, রিয়াদ জুয়েলার্স, মা জুয়েলার্সের মতো মার্কেটের সামনে থাকা শুভেচ্ছা জুয়েলার্সও হয়েছে ক্ষতিগ্রস্ত।

 

ক্ষতিগ্রস্ত জুয়েলার্স ব্যবসায়ী বিল্লাল হোসেন বলেন, ১৯৯০ সাল থেকে যৌথ মালিকানায় শুরু জুয়েলার্সের ব্যবসা। মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে পশ্চিম-উত্তর পাশ থেকে আট মাস আগে স্থানান্তর করা হয় উত্তর-পূর্ব বর্ধিত অংশে। রাতে আগুন লাগবে ভাবিনি। এভাবে চোখের সামনে কোটি টাকার সম্পদ পুড়ছে, চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া কিছু করতে পারিনি।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version