-->

কৃষি মার্কেটে অগ্নিকাণ্ড দ্রুত দোকান খুলতে চান ব্যবসায়ীরা

ইমরান খান
কৃষি মার্কেটে অগ্নিকাণ্ড
দ্রুত দোকান খুলতে চান ব্যবসায়ীরা

রাজধানীর মোহাম্মপুরের কৃষি মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের পর এখন চারদিকে শুধুই ধ্বংসস্তূপ। সেখানকার বাতাসে পোড়া গন্ধ। পুড়ে যাওয়া স্বর্ণের দোকানগুলোতে তালা দিয়ে রেখেছেন ব্যবসায়ীরা। কোথাও পড়ে আছে পোড়া কাপড়, কোথাও পোড়া চাল। কয়লা হয়েছে ক্যাশবাক্স। সম্বল হারিয়ে থামছে না ব্যবসায়ীদের কান্না। পুনর্বাসন ও দ্রুত দোকান চালু করতে কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন ব্যবসায়ীরা। এদিকে, ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরির কাজ শুরু করেছে জেলা প্রশাসন। গতকাল শুক্রবার দুপুরে সরেজমিনে এমন দৃশ্যই দেখা গেছে। এ সময় পুড়ে যাওয়া দোকান থেকে টিন ও রডসহ পুড়ে যাওয়া জিনিসপত্র বের করছিলেন ভিআইপি কসমেটিকস এর মালিক শহিদুল ইসলাম। কসমেটিকস দোকান ছাড়াও এ মার্কেটে তার একটি মুদি দোকান ও গুদাম ছিল। সেগুলোও পুড়ে গেছে আগুনে। শহিদুল ইসলামের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, আমার গুদাম, মুদি ও কসমেটিকস দোকানে প্রায় ১৭ লাখ টাকার মাল ছিল। আগুনের খবর শুনে এখানে এসে দেখলাম সব ক্লিয়ার। এখন লাখ লাখ টাকার মালামাল শুধুই ময়লা আর আবর্জনা। কাউন্সিলর ও মার্কেট কমিটির পক্ষ্য থেকে বলা হয়েছে, এ ময়লাগুলো সরিয়ে ব্যবসা শুরু করতে তাই এগুলো ফেলে দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি।

 

ব্যবসায়ীরা জনিয়েছেন কৃষি মার্কেটের কাচা বাজার, কাপড় মার্কেট ও স্বর্ণপট্টিতে মিলিয়ে প্রায় সাড়ে ৬০০ থেকে ৭০০ দেকান ছিল। এরমধ্যে প্রায় ৪০০ দোকানই আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিপূরণ কি দেয়া হবে বা কতটুকু দেয়া হবে তা নিয়ে চিন্তা করছেন না তারা। কৃষি মার্কেটের রতন জেনারেল স্টোরের মালিক মোহাম্মদ সনেট সাপ্তাহিক ছুটির দিন সামনে রেখে ভালো বেচাকেনার আশায় গুদাম ও দোকানে রেখেছিলেন কোটি টাকার পণ্য। কিন্তু শুক্রবার এসে দেখলেন শুধুই কয়লা। মোহাম্মদ সনেট বলেন, ‘কালকে কোটিপতি ছিলাম। আজকে কিছু নাই। আমাদের সাপ্তাহিক ছুটি থাকে বৃহস্পতিবার। এজন্য দুইদিনের মাল কিনে এনে রাখতে হয়। সব মাল আমরা বুধবার কিনে এনে ঠিক করে রেখে গেছি। কাগজপত্র, দরকারি কোনো কিছুই নিতে পারিনাই।’

 

অন্য ব্যবসায়ীরা জানান, ‘ক্যাশে অনেক টাকা ছিল। দরকারি কাগজপত্র ছিল। এ মার্কেটে তাদের ৩০ লাখ টাকার ওপর বাকি আছে সেটাও মাইর যাবে। একদম পথে বসে গেছি আমরা।’ রেজা এন্টারপ্রাইজ নামের এক প্রতিষ্ঠানের মালিক আবু সিদ্দিক বলেন, আমাদের যা ছিল সবই আগুনে পুড়ে গেছে। তবুও আমরা ক্ষতিপূরণের দিকে তাকিয়ে থাকব না। সরকারের প্রতি আহ্বান থাকবে যেন দ্রুত আমাদের দোকান খোলার ব্যবস্থা করে দেন। এতেই আমাদের বড় উপকার হবে। এদিকে কৃষি মার্কেটের মূল ফটকে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের তালিকা তৈরির কাজ শুরু করেছে ঢাকা জেলা প্রশাসন। সেখানে ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা করছিলেন মোহাম্মাদপুর নতুন কাচা বাজার দোকান মালিক ও ব্যবসায়ী সমিতির কোষাধক্ষ্য ওহিদুল হক। তিনি বলেন, জেলা প্রশাসন ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা প্রস্তুত করছে। ডিএনসিসির মেয়র ও আমাদের কাউন্সিলর পাশে থাকবেন বলে জানিয়েছেন। আমরা ব্যবসায়ীদের বলেছি নিজ নিজ জায়গা দখল বুঝে নিয়ে ব্যবসা শুরু করতে।

 

মার্কেটের দোকান সংখ্যা নিয়ে ব্যবসায়ী ও ডিএনসিসির মতভেদ কেন এ বিষয়টি জানতে চাইলে ওহিদুল হক এ মার্কেটে দোকানের সংখ্যা নিয়ে কোনো ঝামেলা নেই। এখানে সিটি করপোরেশনের দুইটি শাখা রয়েছে। ক ও খ শাখা। গতকাল সিটি করপোরেশনের যে অফিসার এসেছিলেন তিনি শুধু একটি শাখার হিসাব দিয়েছেন। এদিন সকালে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষি মার্কেট পরিদর্শনে যান কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক। এ সময় ব্যবসায়ীদের দাবি মেনে নেয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি। বলেন, ব্যবসায়ীদের স্বার্থে বঙ্গবাজারের মতো অস্থায়ী ভিত্তিতে মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটও চালুর পরিকল্পনা রয়েছে। কৃষিমন্ত্রী বলেন, সর্বোচ্চ পর্যায়ে এখনো আলোচনা হয় নাই। তবে আমার ব্যক্তিগত মত হলো তাদেরকে দ্রুত ঘুরে দাঁড়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে। একইসঙ্গে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা না করে সরকার কোনো সিদ্ধান্ত নেবে না বলেও আশ্বস্ত করেন মন্ত্রী।

 

অন্যদিকে কৃষি মার্কেট অগ্নিকাণ্ডের তদন্তের জন্য ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লে. কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরীর সভাপতিত্বে ৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।

 

ভোরের আকাশ/মি

মন্তব্য

Beta version