-->
শিরোনাম
ওজোনস্তরের ক্ষয়

বিশ্ব উষ্ণায়ন, জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী

শাহীন রহমান
বিশ্ব উষ্ণায়ন, জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী

শাহীন রহমান: বায়ুতে ওজোন গ্যাসের উপস্থিতির তারতম্য একদিকে যেমন বায়ুমান খারাপ করে অপরদিকে এটি বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটও তৈরি করছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে বিশ্বকে ভয়াবহ অতিবেগুনি রশ্মির হাত থেকে রক্ষা করে এই ওজোন স্তর।

 

সম্প্রতি সময়ে পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের এই স্তরের ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হচ্ছে দ্রুত। ক্লোরোফ্লোরোকার্বন এবং হাইডো ক্লোরোফ্লোরো কার্বন সবচেয়ে বেশি ওজোনস্তর ক্ষয়কারী পদার্থ হিসেবে শনাক্ত করেছেন তারা। এ দুটি পদার্থের কারণে সম্প্রতি সময়ে অতিবেগুনি রশ্মির বিকীরণের মাত্রা ক্রমশ বেড়েই চলেছে। যার কারণে ক্যানসারের মতো রোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিভিন্ন অঞ্চলে কৃষির উৎপাদন ক্ষমতা কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে ওজোন স্তরের এই পরিবর্তনকেই দায়ী করেছেন।

 

স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ বায়ুমন্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) এর চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার বলেন, দুই ধরনের ওজোন রয়েছে। একটি খারাপ ওজোন যা ভূপৃষ্ঠে থাকে। এটিকে গ্রাউন্ড লেভেল ওজোন বলা হয়। অপরটি পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার থাকে যা ওজন স্তর বা ওজোনস্ফিয়ার নামে পরিচিত। এটিকে ভালো ওজোন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

 

মহাশূন্যের এই ওজোনস্তর সূর্যের ক্ষতিকর অতি বেগুনি রশ্মিকে পৃথিবীতে প্রবেশ থেকে বাধা সৃষ্টি করে। ওজোন গ্যাস একটি স্বল্প আয়ুর জলবায়ু দূষক হিসেবে পরিচিত। এটি একটি অন্যতম বায়ু দূষক। বায়ুতে ওজোন গ্যাসের উপস্থিতির তারতম্য একদিকে যেমন বায়ুমান খারাপ করে অপরদিকে এটি বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটও তৈরি করে।

 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন ওজোন স্তর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ফলে জলজ ফ্লাইটোপ্লাঙ্কটন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। যা ইকোসিস্টেমের উপর প্রভাব বিস্তার করছে। জীববৈচিত্র্য যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেদিকে আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে এবং কিভাবে ওজোনে স্তরকে রক্ষা করা যায় সেটি গবেষণার মাধ্যমে নির্ণয় করার চেষ্টা করতে হবে। অসচেতনতামূলক কাজের মাধ্যমে আমরা ওজোন স্তরকে ক্ষতিগ্রস্ত করছি।

 

চোখে ছানিসহ বিভিন্ন রকম ক্যানসারের প্রধান কারণ হলো সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মি। ওজোন স্তর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ফলে এর ওজোন হোলের মাধ্যমে পৃথিবীতে অতি বেগুনি রশ্মি এসে স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলছে। নিজেদের জন্যই ওজোন স্তর তথা পরিবেশকে রক্ষা করতে হবে।

 

নাসার বিজ্ঞানীরা গবেষণায় তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন ওজোনস্তর ওজোন গ্যাসের একটি বলয়। এই বলয়টি ক্ষতিকারক অতিবেগুনি রশ্মিকে আটকায়। এই স্তরের কোথাও গর্ত হলে, সেখান দিয়ে অতিরিক্ত মাত্রায় অতিবেগুনি রশ্মি প্রবেশ করেত থাকে। এই গর্তটি তেমনই।

 

পরিবেশবিদদের মতে, এই গর্তটি দিয়ে বায়ুমন্ডলের অন্যান্য অঞ্চলের থেকে ২৫ শতাংশ বেশি অতিবেগুনি রশ্মি পরিবেশে প্রবেশ করে। আর ওজনস্তরের ক্ষত সৃষ্টি হওয়ার মূল কারণ হলো ক্লোরোফ্লোরোকার্বন। ফ্রিজ বা এই ধরনের যন্ত্র থেকে এই পদার্থ থেকে রাসায়নিক নির্গত হয়ে বায়ুমন্ডলে মেশে। তারপর বায়ুমন্ডলের নিচের স্তরে এই রাসায়নিক দীর্ঘক্ষণ স্থায়ী হয়। এই রাসায়নিক থেকে নির্গত ক্লোরিন অতিবেগুনি রশ্মির সঙ্গে মিশে গিয়ে ওজোন স্তরের ব্যাপক ক্ষতি করে। যার ফলস্বরূপ ওজোন স্তরের ক্ষত ক্রমশ বড় হতে থাকে।

 

বিশেষজ্ঞদের মতে ভূ-পৃষ্ঠের ওপরিভাগের ১০ থেকে ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত উচ্চতা ওজোনস্তর হিসেবে শনাক্ত করা হয়ে থাকে। এ স্তরকে বলা হয়ে থাকে স্ট্রাটোষ্ফিয়ার। এ স্তরে গ্যাসের ঘনত্ব এতই কম যে এ স্তরের ওজোন অনুকে একত্রিত করা হলে এর পরিমাণ পৃথিবীপৃষ্ঠ জুড়ে কমলালেবুর খোসার মতো একটি পাতলা আবরণে পরিণত হবে। তিনটি অক্সিজেন পরমাণুর সমন্বয়ে ওজোন অনু গঠিত। তীব্র গ্যাসযুক্ত হালকা নীল বর্ণের গ্যাসীয় পদার্থ হলো ওজোন। স্ট্রাটোষ্ফিয়ারে অবস্থানের কারণে প্রকৃতির ওপর প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ প্রভাব রয়েছে।

 

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও আঞ্চলিক পরিকল্পনা বিভাগের শিক্ষক ও ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইপিডি) নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. আদিল মোহাম্মদ খান বলেন, পরিবেশকে সমুন্নত রাখতে আগে প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করতে হবে। রাজধানী ঢাকার কনক্রিটের আচ্ছাদনের মাধ্যমে শহরগুলোর প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট করে ফেলা হয়েছে। সিএফসি যুক্ত এসি ব্যবহারের আধিক্য দিন দিন ওজোন স্তরের ক্ষয় বৃদ্ধি করছে, যা গণপরিবেশ ধ্বংসের অন্যতম কারণ। পরিবেশ সুরক্ষা নিশ্চিত করে টেকসই উন্নয়নের দিকে ধাবিত হতে সকলকে আহব্বান জানান তিনি।

 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন পরিবেশটা আমাদের। নিজেদের জন্যই পরিবেশ রক্ষা করতে হবে। ওজোন স্তরের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া শুধু বাংলাদেশেরই নয় এটি একটি বৈশ্বিক সমস্যা। তাই আজকে এই দিনে শপথ করতে হবে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে সিএফসি গ্যাসের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে ওজোন স্তরকে রক্ষা করা।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version