জাতীয় নির্বাচনের পূর্বাপর সময় দেশের জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য ভালো নয় বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট রানা দাশগুপ্ত। তিনি বলেন, আগামী চার মাস পর নির্বাচন। বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে পরাশক্তিগুলো নিজেদের মধ্যে আভ্যন্তরীণ প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়েছে।
এক্ষেত্রে বলতে চাই, সামনের দিনগুলো খুব শুভ নয়। একটি অশুভ পরিস্থিতি আমরা সবাই মিলে মুখোমুখি হতে পারি।
শনিবার হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের অঙ্গ সংগঠন মহিলা ঐক্য পরিষদের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন সেমিনার হলে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন মহিলা ঐক্য পরিষদের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অলকা ঘোষ। সম্মেলন উদ্বোধন করেন ঐক্য পরিষদের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি লায়ন চিত্ত রঞ্জন দাস।
বিশেষ অতিথি ছিলেন কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের পরিচালক শ্রীমতী সাহা, বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক ঝর্ণা দাশ পুরকায়স্থ। বক্তব্য রাখেন মহিলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি স্মৃতি কনা বিশ্বাস, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি ম-লীর সদস্য মঞ্জু ধর ও জয়ন্তী রায়, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জয়ন্ত কুমার দেব, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক মাধুরী চক্রবর্তী মিলি আর মহিলা ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সুপ্রিয়া ভট্টাচার্য ও সাধারণ সম্পাদক দীপালি চক্রবর্তী প্রমুখ।
রানা দাশগুপ্ত বলেন, সম্প্রতি জন্মাষ্টমী উপলক্ষে ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আগামী দুর্গাপূজার সময় বা তার পরেও দেশে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ঘটতে পারে। এর ৩ দিন পর বিএনপির মহাসচিব মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও বলেছেন, দেশে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা হতে পারে। সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ঘটিয়ে আমাদের উপর দোষ চাপানো হতে পারে।
এর মধ্যে একটি বিষয় পরিস্কার, এদেশের রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনের পূর্বাপর সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ঘটে- যে কথাটি আমরা দীর্ঘ কাল ধরে বলে আসছি এখন রাজনৈতিক দলগুলো সেটি স্বীকার করছে।
তিনি আরও বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের সঙ্গে আমরা ঐক্য পরিষদের প্রতিনিধিরা দেখা করেছি। বৈঠকে আমরা বলেছি, শুধু দুর্গাপূজাকে সামনে রেখে শান্তি-শৃঙ্খলার কথা ভাবলে হবে না; আগামী নির্বাচনের পূর্বাপর সময় নিয়েও সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি যাতে একটা অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে না যায়, তার জন্য এখন সরকার, প্রশাসন, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং রাজনৈতিক দলগুলোকে একটি ঐক্যমতে আসতে হবে।
নারী নেত্রীদের উদ্দেশ্যে এডভোকেট রাণা দাশগুপ্ত বলেন, আজকে আমরা এমন একটি সময়ে আছি যখন প্রধানমন্ত্রী বলেন, ধর্ম যার যার; রাষ্ট্র সবার; ধর্ম যার যার উৎসব সবার। একই কথা বলে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল। লক্ষ্যনীয় বিষয়, ‘ধর্মীয় রাষ্ট্র নয়, ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র চাই’ এই স্লোগানটি কিন্তু কোন রাজনৈতিক দলের মুখে আমরা শুনতে পাচ্ছি না।
অথচ এটি ঠিক ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত না হলে সাম্প্রদায়িকতা মুক্ত বাংলাদেশ গড়া সম্ভব নয়। সাম্প্রদায়িকতা মুক্ত বাংলাদেশ যদি গড়ে না উঠে তাহলে মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে যে স্বপ্ন বঙ্গবন্ধু দেখেছিলেন সেই বাংলাদেশ পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়।
এদিকে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের যুব কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয় ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে। ওই কর্মশালাও প্রধান অতিথি ছিলেন এডভোকেট রাণা দাশগুপ্ত।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য