-->

পদোন্নতি: রাজনৈতিক পুলিশের অর্ধেকেরও বেশি বাদ

রুদ্র মিজান
পদোন্নতি: রাজনৈতিক পুলিশের অর্ধেকেরও বেশি বাদ

রুদ্র মিজান: সরকারে শেষ সময়ে এসে পুলিশ কর্মকর্তারা দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন পদোন্নতির জন্য। পদোন্নতির প্রত্যাশায় থাকা ৭২০ কর্মকর্তার বেশিরভাগই হতাশ। বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের কেউ প্রকাশ্যে স্বীকার না করলেও খোঁজ নিয়ে এর সত্যতা জানা গেছে। প্রস্তাবিত ৭২০ কর্মকর্তার অর্ধেকেরও বেশি বাদ পড়ছেন পদোন্নতি থেকে। ওই তালিকায় থাকা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার থেকে অতিরিক্ত আইজপি পর্যন্ত অনেকেই অতীতে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলসহ বর্তমান সরকার বিরোধী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন।

 

যে কারণে এই তালিকা ছোট হতে হতে ৫২৯ থেকে ৩৪২ এসে ঠেকেছে। তারপরও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে তাদের পদোন্নতি নিয়ে। একদিকে অনিশ্চয়তা অন্যদিকে কেউ পাচ্ছেন পদোন্নতি, কে পাচ্ছেন না, এ নিয়ে হতাশা দেখা দিয়েছে পদোন্নতি প্রত্যাশীতদের মধ্যে। ইতোমধ্যে একাধিকবার এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থেকে সচিব পর্যন্ত অনেকের সঙ্গে বৈঠকে হয়েছে পুলিশের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের। কিন্তু সুরাহা হয়নি। পুলিশের উচ্চ পদস্থরা ৭২০ জনের পদোন্নতির জন্য অনুরোধ করেছেন।

 

এক্ষেত্রে যুক্তি হচ্ছে, এই তালিকায় ১৫ ব্যাচ থেকে শুরু করে ২৯ ব্যাচের কর্মকর্তারা রয়েছেন। নানা কারণে অতীতে অনেকের পদোন্নতি হয়নি। তাদের ব্যাচমেটরা অতিরিক্ত আইজিপি, ডিআইজি হলেও পুলিশ সুপার ও অতিরিক্ত ডিআইজি রয়ে গেছেন। চাকরির মেয়াদও শেষ হতে চলেছে। সূত্রমতে, রাজনৈতিক বিবেচনায় পদোন্নতির দৌড়ে তারা পিছিয়ে ছিলেন। এরমধ্যে কেউ কেউ স্বেচ্ছায় অবসরে চলে গেছেন। তবু পদোন্নতি জুটেনি। এসব কিছু বিবেচনা করে পুলিশের উচ্চপর্যায়ের ৭২০ কর্মকর্তার পদোন্নতি চেয়ে ইনসিটু পদায়নের জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠায় পুলিশ সদর দপ্তর।

 

এ প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতেই কমিটি গঠন করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়। সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দেয়ার পরিকল্পনা ওই কমিটি। এক্ষেত্রে পদায়ন করা হলেও তারা আগের দায়িত্বে থাকবেন। এই ভিত্তিতে পদায়নের সিদ্ধান্ত হয়। এ বিষয়ে গত ২০ জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পুলিশ ও এনটিএমসি শাখার অতিরিক্ত সচিব মো. আলী হোসেনের সভাপতিত্বে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়।

 

ওই সভার সিদ্ধান্ত অনুসারে ৫২৯ জনকে পদোন্নতি সিদ্ধান্ত হয়। পুলিশ সদর দপ্তরের ওই তালিকা থেকে ৫২৯ জনের মধ্যে ছিলেন, অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (গ্রেড-১) পদে ১৫, অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (গ্রেড-২) ৩৪, উপমহাপুলিশ মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) ১৪০, অতিরিক্ত উপমহাপুলিশ পরিদর্শক (অতিরিক্ত ডিআইজি) ১৫০ ও পুলিশ সুপার পদে ১৯০ জন ।

 

সূত্রমতে, কমিটি তাদের লিখিতভাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়কে তা অবগত করে। পরে তা পৌঁছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে। কিন্তু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সেখান থেকে ১৮৭ জনকে বাদ দিয়ে ৩৪২ জনের নতুন তালিকা তৈরি করে। পুলিশে উচ্চ পদে বর্তমানে একজন অতিরিক্ত আইজিপির পদ শূন্য রয়েছে। তবে সুপারনিউমারারি পদে অতিরিক্ত আইজিপি হিসেবে ১৫ ও ১৭তম ব্যাচের একাধিক কর্মকর্তার নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে।

 

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বাছাইকৃত নতুন তালিকায় পুলিশ সদরদপ্তরের প্রস্তাবিত ৭২০ জন কর্মকর্তা থেকে বাদ পড়ছেন ৩৭৮ জন। বিষয়টি জানার পর সম্প্রতি একাধিকবার পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন এবং সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ্ উদ্দিন চৌধুরীর সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন। শেষ পর্যন্ত কত জন পদোন্নতির পাচ্ছেন তা এখনো নিশ্চিত বলতে পারছেন না সংশ্লিষ্টরা।

 

পুলিশের উচ্চপদস্থ এক কর্মকর্তা জানান, পুলিশ সদরদপ্তরের প্রস্তাবিত তালিকায় সবাই পদোন্নতির যোগ্য। তাদের মধ্যে পেশাদারিত্ব রয়েছে। অনেকেরই অতীতে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা নেই। কিছু কর্মকর্তার সংশ্লিষ্টতা থাকলেও তারা নেতৃত্বশীল পর্যায়ের কেউ ছিলেন না। পুলিশের তারা পেশাদারিত্ব বজায় রেখেছেন। যে কারণে তাদের পদোন্নতি হওয়া উচিত বলে মনে করেন এই কর্মকর্তা।

 

তবে এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, যথাযথ প্রক্রিয়ায় পদোন্নতির বিষয়টি দেখা হচ্ছে। এটা নিয়ে কারও হতাশ হওয়ার কিছু নেই বলে জানান তিনি।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version